Advertisement
E-Paper

পরিবেশ বাঁচাতে তাঁর ‘অস্ত্র’ ঝাঁটা

রোজ ভোর ৪টে বাজার মিনিট দশেক আগে ঘুম থেকে উঠে পড়েন ধারাপাড়ার ৪১ বছরের এই যুবক।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য 

শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৯ ০১:৫৬
ঝাঁটা হাতে সনৎবাবু। নিজস্ব চিত্র

ঝাঁটা হাতে সনৎবাবু। নিজস্ব চিত্র

বাইরের লোকের টিপ্পনী ছিলই। পরিবারও যে প্রথমে মেনে নিয়েছিল, তেমন নয়। কিন্তু এখন ‘ঝাঁটাধারী’র সঙ্গে নিজস্বী তুলতে চান এমন লোকের অভাব নেই। চার বছরে একার চেষ্টায় এলাকার পরিবেশে তো বটেই, মানসিকতাতেও যেন কিছুটা বদল এনেছেন পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীর সনৎ মণ্ডল।

রোজ ভোর ৪টে বাজার মিনিট দশেক আগে ঘুম থেকে উঠে পড়েন ধারাপাড়ার ৪১ বছরের এই যুবক। শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা ভোর ৪টেয় ঝাঁটা হাতে বেরোন বাড়ি থেকে। ঘণ্টা চারেক চলে সাফাই-পর্ব। আক্ষরিক অর্থেই স্টেশন, বাজার, স্কুল, পথঘাটে ঝাঁটা মেরে বিদায় করেন জঞ্জাল।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বারো মাস ভোরে ট্র্যাকসুট, জুতো, টুপি পরে লাঠির মাথায় বাঁধা ঝাঁটা নিয়ে দেখা যায় সনৎকে। মুখে থাকে ‘মাস্ক’। বেশির ভাগ দিন পূর্বস্থলী থানার গেট থেকে শুরু করে প্ল্যাটফর্ম, স্টেশনমুখী রাস্তা, অটো স্ট্যান্ড,

হাসপাতাল, স্কুল, মন্দির চত্বর সাফাই করেন তিনি। জমে থাকা আবর্জনাও সরান দু’হাতে।

আলো ফুটলে রাস্তায় যানবাহন চলাচল শুরু হয়। সনৎবাবুও ব্যস্ত হন আর এক কাজে। ফিরতি পথে রাস্তায় হেলমেটবিহীন কোনও মোটরবাইক বা স্কুটার চালককে দেখলেই হাত দেখিয়ে দাঁড় করান। উপহার দেন লজেন্স। মনে করিয়ে দেন, ‘জীবন সব থেকে মূল্যবান’। এর পরে বাড়ি ফিরে স্নান সেরে নিজের বাসনের দোকানে রওনা দেন তিনি। শুরু হয় দৈনন্দিন কাজ।

ঝাঁটা হাতে রাস্তায় নেমে পড়াটা গোড়ায় সহজ ছিল না। সনৎবাবু বলেন, ‘‘অনেক কটু কথা শুনেছি। কেউ বলেছে ‘পাগল’, কেউ বলেছে টাকার জন্য করি। পরিবার থেকেও কম আপত্তি আসেনি।’’ কিন্তু সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন তিনি। নবদ্বীপ কলেজের প্রাক্তন ছাত্র সনৎবাবুর কথায়, ‘‘দূষণের প্রভাব এবং দূষণের জেরে মৃত্যুর নানা খবর নিয়ে মনটা উতলা ছিল। মনে হল, সবাইকে বোঝাতে না পারলেও নিজেকে বদলালে যে কিছুটা হলেও পরিবেশের ক্ষয় কমানো যায়, সেটা করে দেখাতে চাই।’’

স্বামীর জেদ দেখে মন বদলায় স্ত্রী পরমা মণ্ডলেরও। তিনি বলেন, ‘‘এক সময় মনে হত, স্বামী রাস্তা ঝাঁট দিলে লোকে কী বলবে! এখন আমার আর দুই মেয়ের গর্ব উনি।’’

চার বছরে বদলেছে সমাজও। সনৎবাবু জানান, এখন অনেকেই মাঝের মধ্যে তাঁর সঙ্গে স্কুল চত্বর বা মন্দির ঝাঁট দেন। কার্তিকপুজোর সময়ে এলাকার দুই যুবক তাঁর ঝাঁটা এক রকম কেড়ে নিয়ে নিজেরা ঝাঁট দিয়েছিলেন। তবে সনতের দাবি, ‘‘এটা যথেষ্ট নয়। এখনও অনেক রাস্তায় বেলা পর্যন্ত আলো জ্বলে, কলের মুখ না থাকায় জল নষ্ট হয়। দূষণ এবং আবর্জনা দুই-ই গত চার বছরে বেড়েছে।’’

পূর্বস্থলীর পঞ্চায়েত প্রধান পঙ্কজ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতের সাফাইকর্মী রাখার মতো তহবিল থাকে না। সনৎবাবুর মতো লোকেদের দেখে মানুষ সচেতন হবেন আশা করি।’’ রাজ্যের মন্ত্রী তথা এলাকার

বাসিন্দা স্বপন দেবনাথও বলেন, ‘‘এমন সচেতনতা খুব জরুরি। অজস্র ধন্যবাদ ওঁকে।’’

Cleanliness
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy