E-Paper

কাজের ধরনে কঠিন হচ্ছে আন্দোলন, প্রশ্ন যুব সম্মেলনে

সাম্প্রতিক অশান্তির জেরে মেরুকরণের রাজনীতি যেখানে লম্বা ছায়া ফেলেছে, সেই মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরেই হচ্ছে সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআইয়ের ২০তম রাজ্য সম্মেলন।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০২৫ ০৭:৫৩
ডিওয়াইএফআইয়ের সম্মেলন-মঞ্চে শিশুশিল্পীর সঙ্গে মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। বহরমপুরের রবীন্দ্র সদনে।

ডিওয়াইএফআইয়ের সম্মেলন-মঞ্চে শিশুশিল্পীর সঙ্গে মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। বহরমপুরের রবীন্দ্র সদনে। —নিজস্ব চিত্র।

শহরে বা জেলা-সদরে বড় জমায়েত হচ্ছে। খাতায়-কলমে সদস্য বাড়ছে। কিন্তু রাজ্য জুড়ে আন্দোলনের ঝাঁজে ঘাটতি মিটছে না! আরও একটা বড় নির্বাচনের আগে এই সঙ্কটের কথা উঠে এল সিপিএমের যুব সম্মেলনে। বিধানসভা নির্বাচনের আগে বুথ ধরে ধরে পাঁচ জন যুব কর্মীকে তুলে আনার ডাকও উঠে এল।

সাম্প্রতিক অশান্তির জেরে মেরুকরণের রাজনীতি যেখানে লম্বা ছায়া ফেলেছে, সেই মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরেই হচ্ছে সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআইয়ের ২০তম রাজ্য সম্মেলন। সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় জমায়েতে ভাল সাড়া পেলেও তৃণমূল স্তরে সে ভাবে তীব্র আন্দোলন দানা না-বাঁধার সঙ্কটের কথা নিজেরাই তুলেছেন সম্মেলনের একাধিক প্রতিনিধিরা। তবে একই সঙ্গে সেই সমস্যার কারণও বিশ্লেষণের চেষ্টা হয়েছে। বেশ কয়েকটি জেলার প্রতিনিধিরা বলেছেন, অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে মানুষের কাজের ধরন এখন বদলেছে। অস্থায়ী কাজ বেড়ে যাওয়ায় অনেককে একই সঙ্গে একাধিক কাজ করতে হচ্ছে সংসার টানার জন্য। বহু যুবক-যুবতী পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে বাইরে চলে যাচ্ছেন। শহরাঞ্চলে দিনের বেলায় যিনি হয়তো দোকানে কাজ করছেন, সন্ধ্যার পরে অ্যাপ-বাইক চালাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে যুব সংগঠনের কাজে সময় দেওয়ার লোক কমছে। কিন্তু নবান্ন বা জেলাশাসকের দফতর অভিযানের মতো কেন্দ্রীয় কর্মসূচির ডাক দিলে ওই এক দিন অনেকে হাজির হচ্ছেন।

এই সমস্যার কথা মেনে নিয়েই এলাকা ভিত্তিতে নির্দিষ্ট দাবি নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে ‘সুফল’ পাওয়ার কথাও বলছেন সিপিএমের যুব নেতৃত্ব। যেমন, কাটোয়া-আহমেদপুর ও কাটোয়া-বর্ধমান লাইনে অনিয়মিত রেল পরিষেবা ঠিক করার দাবিতে স্থানীয় যুব আন্দোলনের উদাহরণ সম্মেলনে এসেছে। ডিওয়াইএফআইয়ের এক রাজ্য নেতার মতে, ‘‘নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও মুর্শিদাবাদ, পূর্ব বর্ধমান, নদিয়া বা উত্তর দিনাজপুরের মতো জেলায় আন্দোলন এবং স্থানীয় স্তরে সংগঠনের কাজ ভাল হয়েছে। ওই সব জেলায় বুথ স্তরে কর্মী বাছাইয়ের কাজও এগিয়েছে।’’ সম্মেলনে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, বুথ ধরে পাঁচ জন করে যুব কর্মী তৈরি করতে হবে, যাঁরা অন্যদের উপরে প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন। তৃণমূল কংগ্রেসের ‘গুন্ডামি’ এবং বিজেপি-আরএসএসের ‘বিভাজনের রাজনীতি’ মোকাবিলা করেই এই কাজ করার কথা বলেছেন ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়।

আন্দোলনে ভাটা থাকলেও সংগঠনের কলেবরে অবশ্য বৃদ্ধি হয়েছে ডিওয়াইএফআইয়ের। গত এক বছরে রাজ্যে তাদের সদস্য বেড়েছে এক লক্ষের কিছু বেশি। আগের ৩১ লক্ষ থেকে সদস্য-সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩২ লক্ষের বেশি। আর রায়গঞ্জে গত সম্মেলন থেকে এই সম্মেলন পর্যন্ত তিন বছরের ব্যবধানে সদস্য প্রায় তিন লক্ষ বেড়েছে বলে যুব সংগঠনের রিপোর্টে বলা হয়েছে।

এ বারের সম্মেলন থেকে যুব সংগঠনের উদ্দেশে মীনাক্ষী ডাক দিয়েছেন, আগামী ২০২৬-এর ভোটকে দেখতে হবে ‘গুন্ডারাজ খতম’ করার লড়াই হিসেবে। তিনি বলেছেন, ‘‘আর জি কর হাসপাতালে ছাত্রী খুন হওয়ার পরে যে পুর-প্রতিনিধি দেহ পুড়িয়ে দিলেন, তাঁকেই পুরস্কার দিয়ে পুরসভার পদ দিল তৃণমূল। বাবা-মায়ের চোখের জলের দাম নেই, রাজ্য জুড়ে মহিলারা রাত জাগলেন, তার দাম নেই, পাত্তাই দিল না তৃণমূল সরকার! এ শাসন গুন্ডারাজ ছাড়া কী?’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘আমরা চাইছি সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা মাথা তুলে দাঁড়াক, সরকারি হাসপাতাল বাঁচুক। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেছিলেন সাম্প্রদায়িক গোলমাল করতে এলে মাথা ভেঙে দেওয়া হবে। আর এখন পুলিশ গোলমালের খবর পেলে লুকিয়ে পড়ে! এর বদল আনার জন্য লড়াই চালাতে হবে।’’

তবে গত কয়েক বছরে সিপিএমের যুব আন্দোলনের সঙ্গে একাত্ম হয়ে গিয়েছিল মীনাক্ষীর নাম। যুব নেতৃত্ব থেকে সেই মুখ বিদায় নেওয়ার পরে বাড়তি ‘চাপ’ নিতে হবে যুব নেতৃত্বকে। সংগঠনের এক নেতার কথায়, ‘‘মীনাক্ষীর সঙ্গে কর্মী-সমর্থকদের একটা আবেগ তৈরি হয়ে গিয়েছে, এটা ঠিক। সম্মিলিত ভাবেই সংগঠনের কাজ এর পরে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

DYFI CPM

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy