অভ্যর্থনা: সবংয়ে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের সভায় শশী পাঁজা ও মানস ভুঁইয়া। নিজস্ব চিত্র।
জল নেই, বিদ্যুৎ নেই, নেই নিজস্ব ভবন। বসার মাদুরটুকুও নেই। মাদুরের আঁতুড়ঘর সবংয়েই অঙ্গনওয়াড়িগুলির এমন হাল। সবংয়ের মাটিতে এসে যা শুনে থ হয়ে গেলেন নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজাও।
সবংয়ের বিভিন্ন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মী-সহায়িকাদের নিয়ে বৃহস্পতিবার সভার আয়োজন করেছিল স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতি। মন্ত্রীকে পেয়ে অঙ্গনওয়াড়িগুলির দুর্দশা তুলে ধরেন কর্মীরা। সেখানেই হাজরা বিবি নামে এক কর্মী বলেন, “অনেক কেন্দ্রে মাদুরও নেই। সকলকে মাটিতে বসতে হয়।”
এ কথা শুনে মঞ্চে হাজির স্থানীয় বিধায়ক মানস ভুঁইয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের উপাধ্যক্ষ অজিত মাইতি তখন মুখ চাওয়াচাওয়ি করছেন। মুখ নিচু করে বসে সবংয়ের সিডিপিও সাধনা বাস্কে। তাঁকে মন্ত্রী শশী প্রশ্ন করেন, “যা শুনলাম তা সত্যি? অনেক অঙ্গনওয়াড়ি কি মাদুর পায়নি?” আমতা আমতা করে সাধনাদেবীর জবাব, “ম্যাডাম, দেখছি।”
এক কাঠি-দু’কাঠির মাদুর থেকে শৌখিন মজলন্দ মাদুর— সব রকম মাদুর বোনাতেই সবংয়ের জগৎজোড়া নাম। পশ্চিম মেদিনীপুরের এই এলাকা থেকে দেশ-বিদেশে মাদুর যায়। সেখানকার অঙ্গনওয়াড়িতে মাদুর নেই জেনে মন্ত্রী শশী পরে বলেন, ‘‘অনেক কেন্দ্রে মাদুর নেই শুনে আমি তো আকাশ থেকে পড়লাম। জেলায় টাকা চলে এসেছে। তাও কেন এটা হবে? আমি সব হিসেব নেবো।”
শুধু মাদুর নয়, সবংয়ের অঙ্গনওয়াড়িগুলিতে নেই-এর তালিকা দীর্ঘ। সবং ব্লকের ৩৫২টি অঙ্গনওয়াড়ির মধ্যে মাত্র ১৮৪টি কেন্দ্রের নিজস্ব ভবন রয়েছে। প্রাথমিক স্কুলে চলে ৯৩টি কেন্দ্র, খোলা আকাশের নীচে ১৫টি। আর কিছু অঙ্গনওয়াড়ি মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র, শিশু শিক্ষাকেন্দ্র কিংবা ভাড়া বাড়িতে চলে। নিজস্ব ভবন থাকলেও ৫৯টি কেন্দ্রে জল নেই। মন্ত্রীর কাছে প্রতিটি অঙ্গনওয়াড়িতে শৌচাগার, জল, আলোর ব্যবস্থা করার আর্জি জানান সবং পঞ্চায়েত সমিতির নারী ও শিশুকল্যাণ কর্মাধ্যক্ষ মামনি দাস গৌড়া।
এ দিন সবং থেকে ফিরে মেদিনীপুরে প্রশাসনিক বৈঠকও করেন শশী। সেখানে পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম জেলার অঙ্গনওয়াড়িগুলির যাবতীয় সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়। প্রথমেই সব অঙ্গনওয়াড়ির নিজস্ব ভবন গড়ার নির্দেশ দেন মন্ত্রী। শশীর কথায়, “খোলা আকাশের নীচে কেন্দ্র বন্ধ করতে হবে। জমির ব্যবস্থা করুন। টাকা রাজ্য দেবে।”
সবংয়ে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী-সহায়িকাদের নিয়ে সভা আয়োজনের প্রশংসাও করেছেন মন্ত্রী। শশীর কথায়, “এই উদ্যোগের কাণ্ডারী আমাদের প্রিয় মানসদা। এই সভা দেখে আমি গর্বিত। রাজ্যেও এমন সম্মেলন করতে চাই। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন।” পরে মানসবাবু বলেন, “এই প্রথম একজন মন্ত্রী আপনাদের কথা শুনতে এলেন। আর আমাদের মুখ্যমন্ত্রী তো অন্নপূর্ণার মতো। অন্নপূর্ণা কাউকে খালি হাতে ফেরান না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy