বিশ্বকাপ শেষ। হারিয়ে গেল কি ভবিষ্যৎ বলা সেই টিয়াও? খেলার মরসুমে যে উড়ে বেড়িয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। কে জিতবে, কে হারবে— খেলার আগেই মজা করে নানা ভবিষ্যদ্বাণী করেছে সে। তা আবার মিলেও গিয়েছে। সকলেই জানেন, টিয়ার এই ভবিষ্যদ্বাণীর কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। তবু সোশ্যাল মিডিয়ার এই টিয়া রীতিমতো ‘ভাইরাল’। বিজ্ঞাপন জগতের মানুষেরাও মনে করছেন, এ শুধু মজাই নয়, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে এ রকম অভিনব প্রচার এখন ট্রেন্ডও।
বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে এই টিয়া-বচন নিয়ে মজে ছিল সোশ্যাল মিডিয়া। ব্রাজিল-ফ্রান্সের হাই ভোল্টেজ ম্যাচের আগে টিয়া বলেছিল ‘ফ্রান্স জিতবে, ব্রাজিল হারবে।’ ব্রাজিলের সমর্থকেরা তা শুনে রে রে করে ওঠেন। কিন্তু টিয়া থামেনি। ব্রাজিলের পরাজয়ের পরেই টিয়া সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়ে দেয়, ‘সত্যি হল টিয়া পাখির বচন।’
সেই শুরু। এর পরে মিলতে থাকে টিয়ার একের পর এক বাণী। ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে লড়াইয়ে ইংল্যান্ডের হারের কথা বিভিন্ন হোয়াটস্অ্যাপ গ্রুপে ঘুরতে থাকে সেই খেলা শুরুর আগে থেকেই। ‘ফরওয়ার্ড’ হতে হতে টিয়া ক্রমশই ভাইরাল হয়ে পড়ে বিশ্বকাপ মরসুমে। বাগুইআটির পার্থ দে বলেন, ‘‘বিষয়টির মধ্যে কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি ছিল না, জানি। কিন্তু মজা ছিল খুব। হোয়াটস্অ্যাপের টিয়া পাখি যেন বিশ্বকাপেরই একটি অংশ হয়ে উঠেছিল। টিয়ার বাণী এলেই বন্ধুদের গ্রুপে ছেড়ে দিতাম।’’ বড়বাজারের এক ফুটবল পাগল দিব্যেন্দু বসু বলেন, ‘‘তৃতীয় স্থান যে বেলজিয়াম পাবে, তাও টিয়া বলে দিয়েছিল। এমনকি ফাইনালের দিন সকালে উঠে দেখলাম, হোয়াটস্অ্যাপে এসে গিয়েছে টিয়া। ‘ফ্রান্স, ফ্রান্স, ফ্রান্স’ লিখে টেলিগ্রাম পাঠিয়েছেন তিনি।’’
বাস্তবে কিন্তু ভবিষ্যদ্বাণীর ক্ষেত্রে টিয়ার জনপ্রিয়তা ক্রমশই কমছে। গড়ের মাঠ চত্বরের এ রকমই এক টিয়া পাখির মালিক বাবু মল্লিক বলেন, ‘‘আগের থেকে ভবিষ্যদ্বাণী করা টিয়ার জনপ্রিয়তা অনেক কমেছে। আগে দিনে ১৫ থেকে ২০টি ভবিষ্যদ্বাণী করত আমার টিয়া। এখন তা হয় মেরেকেটে দশটা।’’
বাস্তবে জনপ্রিয়তা কমলেও সোশ্যাল মিডিয়ার টিয়া যে রীতিমতো হিট, তা মানছেন বিজ্ঞাপন জগতের বিশেষজ্ঞেরা। বিজ্ঞাপন জগতে এক বিশেষজ্ঞ শৌভিক মিশ্র বলেন, ‘‘সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে এই সব অভিনব প্রচার বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। কারা এই প্রচার কৌশল তৈরি করলেন এবং টিয়ার বাণী লিখলেন, কেউ জানতে পারলেন না। কিন্তু টিয়া পাখি ভাইরাল হয়ে গেল। মানুষের মধ্যে এর একটা প্রভাবও থেকে গেল।’’
প্রভাব যে থেকে গিয়েছে, তা বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পরদিন সকালে হোয়াটস্অ্যাপ দেখেই বোঝা গেল। হোয়াটস্অ্যাপে বার্তা ঘুরছে, ‘‘তোমার ভবিষ্যদ্বাণী মিলে গিয়েছে। তোমাকে সকলেই অভিনন্দন জানাতে চায়। ফিরে এসো টিয়া। তোমাকে আমরা খুব মিস করছি!’’