Advertisement
E-Paper

বাবাকে বাঁচাতে গিয়ে মৃত্যু ছাত্রের 

সৌরভের বাবা অরূপবাবুর ‘অপরাধ’, ঝড়বৃষ্টিতে ছিঁড়ে পড়া বিদ্যুতের তার থেকে দুর্ঘটনা হতে পারে, এই ভেবে তিনি ট্রান্সফর্মারের ‘চেঞ্জার’ নামিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিলেন।

দীপঙ্কর দে

শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৯ ০২:৩৬
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

বৃষ্টির মধ্যে বাড়ির সামনের মাঠ থেকে ভেসে আসছিল বাবার আর্ত চিৎকার। শুনে মঙ্গলবার রাতে আর ঘরে বসে থাকতে পারেনি তারকেশ্বরের বালিগোড়ির বাসিন্দা সৌরভ পাত্র (১৬)। গিয়ে দেখে পাড়ারই দুই ‘কাকু’ বাবাকে মারধর করছে। প্রতিবাদ করায় আক্রান্ত হয় সৌরভও। মার খেয়ে সে লুটিয়ে পড়ে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত বলে জানান।

সৌরভের বাবা অরূপবাবুর ‘অপরাধ’, ঝড়বৃষ্টিতে ছিঁড়ে পড়া বিদ্যুতের তার থেকে দুর্ঘটনা হতে পারে, এই ভেবে তিনি ট্রান্সফর্মারের ‘চেঞ্জার’ নামিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিলেন। হামলায় অভিযুক্তেরা হলেন বালিগোড়ি-১ পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্যা কাজল দাসের স্বামী রাজেশ এবং দেওর বিশ্বজিৎ। দু’জনেই শাসকদলের কর্মী হিসেবে পরিচিত।

সৌরভকে খুনের অভিযোগে রাত থেকেই তেতে ওঠে বালিগোড়ি। বিশ্বজিতের মারেই সৌরভ মারা যায় বলে অভিযোগ। বুধবার সকালে দোষীদের শাস্তির দাবিতে থানা ঘেরাও করে মৃতদেহ আটকে বিক্ষোভ শুরু করেন গ্রামবাসী। বিজেপি নেতাকর্মীরাও শামিল হন। আসেন আরামবাগের বিজেপি প্রার্থী তপন রায়। পুলিশ দাবি পূরণের আশ্বাস দিলে বিক্ষোভ থামে। পরে দেহটি ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়। দুপুরেই বিশ্বজিৎকে গ্রেফতার করা হয়। তবে পুলিশ রাজেশের নাগাল পায়নি। বাড়ি তালাবন্ধ করে কাজল এব‌ং রাজেশ সরে পড়েন। তাঁদের মোবাইলও বন্ধ ছিল। সন্ধ্যায় ওই বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়।

এলাকায় উত্তেজনা থাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়। হুগলি (গ্রামীণ) জেলার পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন জানান, রাজেশের খোঁজে তল্লাশি চলছে। তাঁর বিরুদ্ধে মারধর, হামলা এবং বিশ্বজিতের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করা হয়েছে। তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অরূপবাবু বলেন, ‘‘মানুষের উপকার করতে গিয়ে ছেলেকে হারালাম। দোষীদের যেন উপযুক্ত শাস্তি হয়।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বালিগোড়ি অধরমণি বিদ্যামন্দিরের ছাত্র সৌরভের আগামী বছর মাধ্যমিক দেওয়ার কথা ছিল। তার বাবা ওই পঞ্চায়েতেরই অস্থায়ী কর্মী। মঙ্গলবার রাত ১০টা নাগাদ ঝড়বৃষ্টিতে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে তাঁদের বাড়ির অ্যাসবেসটসের ছাদ থেকে রাস্তায় পড়ে। অরূপবাবু বিদ্যুৎ দফতরে এবং থানায় জানান। বিদ্যুৎকর্মীরা না-আসায় তিনি নিজেই বেরিয়ে বাড়ির কাছের ট্রান্সফর্মারের ‘চেঞ্জার’ নামিয়ে দিয়ে সে কথা থানায় গিয়ে জানান। অরূপবাবু বাড়ি ফিরতেই রাজেশ ফোনে তাঁকে সামনের মাঠে ডাকেন। রাজেশ ও বিশ্বজিৎ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য কৈফিয়ত চেয়ে অরূপবাবুকে মারধর শুরু করেন বলে অভিযোগ।

সৌরভের মাসি পম্পা মালিকের ক্ষোভ, ‘‘আমাদের ভোটে জিতে কাজল পঞ্চায়েতের সদস্য হল। ওঁর স্বামী এখন যা ইচ্ছে তা-ই করছেন। ওঁদের যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়।’’ বিকেলে সৌরভের বাড়িতে যান আরামবাগের তৃণমূল প্রার্থী অপরূপা পোদ্দার। ঘটনায় দলীয় কর্মীদের নাম-জড়ানো নিয়ে অপরূপা বলেন, ‘‘দলের লোক হলেও শাস্তি পাবে। ।’’

(তথ্য সহায়তা: তাপস ঘোষ)

Student Beating Death
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy