Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

গালির প্রতিবাদ করায় খুন

পাড়ার মধ্যে খিস্তি-খেউড়ের প্রতিবাদ করার মাসুল চোকাতে হল নিজের প্রাণ দিয়ে। শনিবার রাতে পুরুলিয়া শহরের নাপিতপাড়া এলাকায় পিঠে ধারালো অস্ত্রের কোপ মেরে খুন করা হয় প্রতিবাদী যুবক মৃত্যুঞ্জয় রায়কে (৩০)। ওই পাড়াতেই তাঁর বাড়ি। খুনের ঘটনা অভিযুক্ত আশিস গড়াইকে এলাকা থেকেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার বাড়িও ওই এলাকাতেই।

মৃত্যুঞ্জয় রায়।—নিজস্ব চিত্র

মৃত্যুঞ্জয় রায়।—নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৬ ০২:৫০
Share: Save:

পাড়ার মধ্যে খিস্তি-খেউড়ের প্রতিবাদ করার মাসুল চোকাতে হল নিজের প্রাণ দিয়ে। শনিবার রাতে পুরুলিয়া শহরের নাপিতপাড়া এলাকায় পিঠে ধারালো অস্ত্রের কোপ মেরে খুন করা হয় প্রতিবাদী যুবক মৃত্যুঞ্জয় রায়কে (৩০)। ওই পাড়াতেই তাঁর বাড়ি। খুনের ঘটনা অভিযুক্ত আশিস গড়াইকে এলাকা থেকেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার বাড়িও ওই এলাকাতেই।

শনিবার রাতে পাড়ার কালী মন্দিরের কাছে স্থানীয় যুবকেরা টিভিতে আইপিএলের ম্যাচ দেখার ব্যবস্থা করেছিলেন। ওই মন্দিরের পাশ দিয়ে রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ আশিস মদ্যপ অবস্থায় গালি দিতে দিতে বাড়ি ফিরছিল বলে অভিযোগ। প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, খেলা ছেড়ে মৃত্যুঞ্জয় বাইরে বেরিয়ে আশিসকে গালিগালাজ বন্ধ করে বাড়ি যেতে বলেন। মৃত্যুঞ্জয়ের পাশে দাঁড়ান আরও কয়েকজন যুবক। তর্কে পেড়ে না উঠে আশিস বাড়ি ফিরে যায়।

গোলমাল পাকে এর পরেই। বিষয়টি মিটে গিয়েছে ভেবে সবাই আবার খেলা দেখায় মগ্ন হয়ে পড়েছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মিনিট দশেকের মধ্যেই আশিস ফিরে এসে মৃত্যুঞ্জয়কে ডাকেন। তাঁকে মন্দির থেকে সামান্য দূরে ডেকে নিয়ে যায়। খেলার আসরের লোকজন ভেবেছিলেন, বোধহয় কিছুক্ষণ আগের দুর্ব্যবহারের জন আশিস দুঃখপ্রকাশ করতে এসেছেন। এক যুবকের কথায়, ‘‘আশিস ভাগ্নে বলে মৃত্যুঞ্জয়কে ডেকে নিয়ে যায়। ভেবেছিলাম, গোলমালটা মিটিয়ে নিতে এসেছে। কিন্তু হঠাৎ আধো অন্ধকার জায়গায় মৃত্যুঞ্জয় সামান্য চিৎকার করে মাটিতে পড়ে যাওয়ায় আমাদের ভুল ভাঙে।’’ তাঁরা গিয়ে দেখেন, মৃত্যুঞ্জয়ের চারপাশে রক্ত। পিঠে গভীর ক্ষত থেকে রক্ত ঝরছিল। ধারাল অস্ত্র দিয়ে তাঁর পিঠে আঘাত করে আততায়ী। ততক্ষণে সে অবশ্য সরে পড়েছিল। মৃত্যুঞ্জয়কে সঙ্গে সঙ্গে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও বাঁচানো যায়নি।

রবিবার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মদ খেয়ে গালিগালাজের প্রতিবাদ করে এ ভাবে বেঘোরে মৃত্যু মৃত্যুঞ্জয়ের পড়শিরা মেনে নিতে পাচ্ছেন না। নিহতের স্ত্রী উমা রায় অন্তঃসত্ত্বা। স্বামীকে হারিয়ে শোকে পাথর হয়ে গিয়েছেন তিনি। পড়শিরা জানান, শনিবার রাতে মৃত্যুঞ্জয় পড়ে যাওয়া থেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত সবই চোখের সামনে দেখেছেন উমা। ধাক্কাটা তিনি নিতে পারছেন না।

তবে মৃত্যুঞ্জয়ের উপর আশিসের রাগের কারণ শুধু শনিবার রাতের প্রতিবাদই নয়, সপ্তাহখানেক আগেও একই রকম ঘটেছিল। বাসিন্দাদের দাবি, কিছুদিন আগে টি ২০ বিশ্বকাপ ক্রিকেট চলাকালীনও ঠিক এই রকম ঘটনাই ঘটেছিল। পেশায় মাংস বিক্রেতা আশিস সে বারও গালিগালাজ করতে করতে বাড়ি ফিরছিল। মৃত্যুঞ্জয় সে বারও প্রতিবাদ করেছিলেন। সে বারও তর্ক বাধে। তবে তা বেশিদূর গড়ায়নি। শনিবার রাতে খেলা দেখার আসরে থাকা জয় ধীবরের কথায়, ‘‘এ বার যে ঘটনাটা এমন জায়গায় চলে যাবে তা আমাদের কল্পনাতেও আসেনি। এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, দিনমজুরি-সহ নানা কাজকর্ম করে মৃত্যুঞ্জয়ই সংসারটা চালাতেন। তাঁর অকাল মৃত্যুতে জলে পড়েছে পরিবারটি।

পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার রাতে অভিযুক্ত আশিসকে তার বাড়িতেই পাওয়া যায়। ওই রকম নৃশংস ঘটনার পরে আশিস বাড়িতে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছিল। পুলিশ প্রথমে আটক করে। পরে মৃত্যুঞ্জয়ের ভাই সঞ্জয়ের অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ আনা হয়েছে। রবিবার ধৃতকে আদালতে তোলা হলে বিচারক তাকে তিনদিন পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন।

অভিযুক্ত আশিসের বাবা বুদ্ধেশ্বর গড়াই পুরো ঘটনায় হতভম্ব। তিনি কোনওরকমে বলেন, ‘‘ও অপরাধ করেছে, আইন ওকে সাজা দেবে।’’

আর নিহতের মা বিশাখা রায় বলছেন, ‘‘মৃত্যুঞ্জয়ের সঙ্গে আরও কেউ কেউ তো প্রতিবাদ করেছিল। কিন্তু ওর কন্ঠই তো চিরদিনের জন্য বন্ধ করে দিল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE