বন্যায় ডুবে বা রুখু মাটিতে নষ্ট হওয়ার হাত থেকে আমন ধান বাঁচিয়ে ফসল সুনিশ্চিত করতে গত কয়েক বছর ধরে চেষ্টা করছেন চুঁচুড়া ধান্য গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা। এ বার এ কাজে, ফলন বাড়াতে তাদের নতুন দাওয়াই ‘জিঙ্ক ম্যানেজমেন্ট’। বীজতলা আর ফসল রোয়ার আগে জমিতে নির্দিষ্ট পরিমাণে ‘জিঙ্ক সালফেট’ দিলেই হল। বেশ কয়েক দিন বন্যার জলে ডুবে থেকেও ধানগাছের সতেজতা নষ্ট হবে না। পুরুলিয়ার রুক্ষ জমিতে দিব্যি বেঁচেবর্তে থাকছে তারা। ফিলিপিন্সের আন্তর্জাতিক গবেষণা কেন্দ্রের (ইরি) প্রকল্পে আফ্রিকা এবং দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশে বন্যা ও খরা সহনশীল ধান চাষের চেষ্টা চলছে। গবেষণার কাজ চলছে হুগলি এবং পুরুলিয়ার নানা জায়গায় চাষিদের জমিতে। দিন কয়েক আগে হুগলির বৈদ্যবাটি, ড্যামরা, খলসি, নাকসা প্রভৃতি জায়গায় এবং পুরুলিয়ার বিভিন্ন গ্রামে বেশ কয়েক জন চাষির জমি পরিদর্শন করে গেলেন ইরি-র বিজ্ঞানী আশিসকুমার শ্রীবাস্তব। সঙ্গে ছিলেন যুগ্ম কৃষি অধিকর্তা (ধান্য উন্নয়ন) মাধবচন্দ্র ধাড়া-সহ ধান্য গবেষণা কেন্দ্রের অন্যান্য বিজ্ঞানীরা।
এ রাজ্যে ৪০-৪২ লক্ষ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়। বেশির ভাগ চাষিই স্বর্ণ মাসুরি প্রজাতির ধান চাষ করেন। কিন্তু বর্ষায় জমিতে ৫-৭ দিন জল দাঁড়িয়ে গেলেই এই চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়াও এই ধানে রোগপোকার আক্রমণের আশঙ্কাও বেশি। তাই ওই প্রজাতির পরিবর্তে বন্যা সহনশীল ধান চাষে জোর দেন কৃষি বিজ্ঞানীরা।
যে সমস্ত কৃষকদের জমিতে গত কয়েকটি মরসুমে এই ধান ফলেছে, তাঁদের বক্তব্য, এই ধান জলের তলায় সপ্তাহ দু’য়েক ডুবে থেকেও পুরোপুরি নষ্ট হয় না। কিন্তু কিছুটা নেতিয়ে পড়ে। ইউরিয়া বা পটাশ ব্যবহার করে সেগুলি সতেজ করতে হয়েছিল। এ বার কৃষি-বিজ্ঞানীদের পরামর্শ অনুযায়ী চাষিরা বীজতলা এবং জমি প্রস্তুত করার সময় জিঙ্ক সালফেট ব্যবহার করেছেন। বৈদ্যবাটির চাষি চন্দ্রশেখর ঘোষ, চুঁচুড়া-মগরা ব্লকের প্রবীর ঘোষদের অভিজ্ঞতা, এ বার বন্যা হয়নি। তবে বর্ষায় ৫-৭ দিন জমিতে জল দাঁড়িয়েছিল। জল নামার পরে দেখা গিয়েছে, অন্য প্রজাতির ধান কিছুটা লালচে হয়ে নেতিয়ে পড়েছে। কিন্তু জিঙ্ক সালফেট ব্যবহার করা জমির ধানগাছ সতেজ। ইরি-র বিজ্ঞানী আশিসবাবুর বক্তব্য, পুরুলিয়ার রুক্ষ মাটিতেও জিঙ্ক সালফেটের ব্যবহার সফল। খরা এলাকায় ১২-১৫ দিন পর্যন্ত মাটিতে রসের টান হলেও আইআর ৬৪ ড্রট ১ (ডিআরআর ৪২) এবং সহভাগী ধান জাতদু’টি ললাট, ক্ষিতীশ, আইআর ৬৪ প্রজাতির থেকে বেশি লাভজনক ভাবে ফলন দিতে সক্ষম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy