Advertisement
১৬ মে ২০২৪

রাতুলের কি বৌ জুটবে না, চিন্তায় অভিভাবকেরা

বছর ছাব্বিশেক বয়স, সুঠাম চেহারা, রোগভোগেরও বালাই নেই। তবু এ রাজ্য-সে রাজ্য ঢুঁড়েও রাতুলের মতো সৎপাত্রের জন্য পাত্রী খুঁজে পাচ্ছেন না তার অভিভাবকেরা! রাতুল আদতে মানুষ নয়। আলিপুর চিড়িয়াখানার পূর্ণবয়স্ক একটি একশৃঙ্গ গণ্ডার।

সঙ্গীবিহীন রাতুল। আলিপুর চিড়িয়াখানায়। — রণজিৎ নন্দী

সঙ্গীবিহীন রাতুল। আলিপুর চিড়িয়াখানায়। — রণজিৎ নন্দী

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০১৬ ০১:১৩
Share: Save:

বছর ছাব্বিশেক বয়স, সুঠাম চেহারা, রোগভোগেরও বালাই নেই। তবু এ রাজ্য-সে রাজ্য ঢুঁড়েও রাতুলের মতো সৎপাত্রের জন্য পাত্রী খুঁজে পাচ্ছেন না তার অভিভাবকেরা!

রাতুল আদতে মানুষ নয়। আলিপুর চিড়িয়াখানার পূর্ণবয়স্ক একটি একশৃঙ্গ গণ্ডার।

চিড়িয়াখানা সূত্রের খবর, ভরা যৌবনে ‘ছেলের’ বিয়ে দিয়ে পরিবার গড়তে চাইছেন কর্তারা। পাত্রীর খোঁজও করা হয়েছিল। কিন্তু মিলছে না। একলা থাকতে থাকতে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ছে রাতুলও। সঙ্গী না পেয়ে মাঝেমধ্যেই মেজাজ বিগড়ে যায় তার। দেওয়ালে বা গাছে নাক ঘষে খড়্গ ক্ষয়ে ফেলে। কখনও আবার দিনভর বিরস বদনে মাটিতে থেবড়ে বসে থাকে।

আলিপুর চিড়িয়াখানার অধিকর্তা আশিসকুমার সামন্ত বলছেন, ‘‘রাতুল এমনিতে খুবই শান্তশিষ্ট। কিন্তু সঙ্গী না পেয়ে ও মাঝেমধ্যে মুষড়ে পড়ে।’’

রাজ্য জু অথরিটির সদস্য-সচিব বিনোদকুমার যাদব বলছেন, রাতুলের জন্য পাত্রী আনতে অসমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু অসম তাদের কাছে থাকা কোনও মাদী গণ্ডার দিতে রাজি হয়নি। বন দফতরের কর্তারা বলছেন, মূলত জঙ্গল থেকে
উদ্ধার হওয়া গণ্ডারদেরই চিড়িয়াখানায় নিয়ে আসা হয়। এ রাজ্যের গরুমারা ও জলদাপাড়া অভয়ারণ্যে গণ্ডার থাকলেও সাম্প্রতিক কালে কোনও মাদী গণ্ডারকে উদ্ধার করা হয়নি।

বস্তুত রাতুলও আদতে অসমেরই বাসিন্দা। ১৯৯৪ সাল নাগাদ তাকে প্রথমে গরুমারা অভয়ারণ্যে নিয়ে আসা হয়। তখন তার বয়স ছিল বছর চারেক। গরুমারায় থাকাকালীন বিদ্যুতের তারের বেড়ার ঘেরাটোপে রাখা হত এই গণ্ডারটিকে। ২০০৪ সালে গরুমারা থেকে আলিপুরে ঠাঁই হয় তার। ‘‘তখন থেকেই বেচারি একা,’’ বলছেন চিড়িয়াখানার গণ্ডার দেখভালের দায়িত্বে থাকা এক কর্মী।

বছর খানেক আগে অবশ্য আলিপুরের গণ্ডার পরিবারে সদস্য বেড়েছে। জলদাপাড়া থেকে উদ্ধার হওয়া বছর দেড়েকের পুরুষ গণ্ডার শাবককে নিয়ে আসা হয়। নাম দেওয়া হয়েছে ‘জলদাপ্রসাদ’। সম্প্রতি দুধ ছেড়ে ঘাস-পাতা খাওয়া ধরেছে সে। কিন্তু নিঃসঙ্গ রাতুলের সঙ্গে তার ‘দোস্তি’ গ়ড়ে ওঠেনি। চিড়িয়াখানা সূত্রের মতে, রাতুল এখন যুবক। তার সঙ্গে শিশু জলদার বন্ধুত্ব হবে না। উল্টে কোনও কারণে রেগে গিয়ে রাতুল জলদাকে আক্রমণ করে বসলে বিপত্তি ঘটতে পারে। তাই দু’জনকে আলাদা করেই রাখা হয়।

রাতুলের কপালে কি আর বৌ জুটবে না?

আলিপুর চিড়িয়াখানার কর্তারা অবশ্য বলছেন, গণ্ডার মোটামুটি ৫০-৬০ বছর বাঁচে। ফলে এখনও বিয়ের সময় পেরিয়ে যায়নি। রাতুলের পাত্রী না মেলার সমস্যা সম্প্রতি কেন্দ্রীয় জু অথরিটির সদস্য-সচিব ডি এন সিংহকেও জানানো হয়েছে। চিড়িয়াখানা সূত্রের খবর, পটনা চিড়িয়াখানায় একটি উদ্বৃত্ত মাদী গণ্ডার রয়েছে। সেটিকে আলিপুরে নিয়ে আসা যায় কি না, সে ব্যাপারে কথাবার্তা শুরু হয়েছে। তবে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।

নাকে খড়্গ, গায়ে মোটা চামড়া নিয়ে এখন সরকারি লাল ফিতের ফাঁসের দিকেই চেয়ে রয়েছে রাতুল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rhino
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE