বিনিয়োগ টানতে মুম্বই, দিল্লিতে ‘রোড শো’ হয়েছে। বিজ্ঞাপনের পিছনে বেরিয়ে গিয়েছে কোটি কোটি টাকা। প্রচারে উঠে আসছে ইকো ট্যুরিজম পার্কের মতো বিবিধ ‘আকর্ষক’ প্রকল্পের কথা। সিঙ্গাপুরে লগ্নি-অভিযানে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে শুনিয়েছেন নিউটাউনের বৃত্তান্ত। অথচ তিন বছরেও নিউটাউনে প্রস্তাবিত অর্থতালুকের কপাল খুলল না! তাই ফের মুম্বই-দিল্লি-চেন্নাইয়ে রোড শোয়ের আয়োজন হচ্ছে।
হিডকো-র তথ্য বলছে, নিউটাউনে অর্থতালুক বা ফিনান্সিয়াল হাব গড়তে মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্পটি যাত্রা শুরু করেছিল ২৫ একর জায়গা নিয়ে। পরে আরও প্রায় ৩১ একর জমি চিহ্নিত হয়। কিন্তু ব্যাঙ্ক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে সেখানে অফিস করার জন্য এখন পর্যন্ত হিডকো-র সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে সাকুল্যে ১১টি সংস্থা, যাদের দরকার মাত্র ২০ একর। এমতাবস্থায় প্রকল্প-এলাকায় এখনও ২৩টি প্লটে বিভক্ত যে প্রায় ৩৬ একর জমি রয়েছে, সেগুলির বিলি-বন্দেবস্ত করতে হিডকো নতুন ভাবে উদ্যোগী হয়েছে। আগ্রহীদের আবেদনের জন্য ২৯ সেপ্টেম্বর সময়সীমাও বেঁধে দিয়েছে তারা। যারা ইতিমধ্যে চুক্তি করেছে, তাদের কাজ কত দূর এগোল?
যা সামনে আসছে, তা বিশেষ আশাপ্রদ নয়। হিডকো-র এক কর্তা বলেছেন, চুক্তিবদ্ধ সংস্থাগুলির প্রতিনিধিদের নিয়ে মাস ছয়েক আগে পর্যালোচনা বৈঠক হয়েছিল। সেখানে প্রায় সকলেই জানিয়েছিলেন, প্রকল্পের নকশা তৈরি হচ্ছে। শুধু দু’টি সংস্থা এক ধাপ এগিয়ে ভূমিপুজো করে ভবন নির্মাণে হাত দিয়েছে।
অর্থাৎ, অর্থতালুকের অবয়ব এখনও স্পষ্ট হয়ে ওঠেনি। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগের বিবর্ণ ছবিটিরই প্রতিফলন দেখছেন প্রশাসনিক-কর্তাদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য: অর্থতালুকে সামিল হতে আবেদনকারীর অভাব কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। সামগ্রিক ভাবে এ রাজ্য সম্পর্কে সর্বভারতীয় শিল্পমহলের অনুজ্জ্বল ধারণাই অর্থতালুকে বিনিয়োগের সামনে অন্তরায় সৃষ্টি করছে বলে ওঁরা মনে করছেন।
নিউটাউনে অর্থতালুক তৈরির পরিকল্পনা আদতে বাম আমলের। ২০১০-এ বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগের প্রকল্পটির শিলান্যাস করেছিলেন তদানীন্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী, অধুনা রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। ‘ফিনান্সিয়াল হাব’কে বলা যেতে পারে আর্থিক কর্মকাণ্ডের স্নায়ুকেন্দ্র। যেখানে ব্যাঙ্ক, বিমা, মিউচুয়াল ফান্ড-সহ আর্থিক প্রতিষ্ঠান ফ্রন্ট অফিস, শাখা অফিস, ডেটা অফিস খোলে। থাকে বিদেশি মুদ্রা বিনিময়, শেয়ার-ঋণপত্র কেনা-বেচার বন্দোবস্ত। সোজা কথায়, এক চৌহদ্দির মধ্যে সংস্থা ও গ্রাহকের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আর্থিক পরিষেবার সংস্থান।
সেই অনুযায়ী রাজ্যের আর্থিক কাজকর্মের মূল কেন্দ্র হিসেবে নিউটাউনের অর্থতালুককে গড়ে তোলার পরিকল্পনা হয়েছিল। কিন্তু ২০১১-য় পালাবদল ঘটিয়ে ক্ষমতায় এসে মমতা বাম জমানার যৌথ উদ্যোগের প্রকল্পটি বাতিল করে দিয়ে ঘোষণা করেন, রাজ্য সরকার একাই হাব গড়বে। নিউটাউনের ‘অফিসপাড়া’ হিসেবে পরিচিত সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট (সিবিডি)-এ ২৫ একর জমি নিয়ে নতুন ভাবে তালুকের পরিকল্পনা হয়। ২০১২-র ১০ মার্চ ফের ঘটা করে শিলান্যাস করেন মুখ্যমন্ত্রী।
তার পরে গত প্রায় আড়াই বছর ধরে প্রকল্পে লগ্নি টানতে নানাবিধ পরিকল্পনা ও প্রচারে ব্যস্ত থেকেছেন হিডকো’র কর্তারা। এ বার ঠিক হয়েছে, মুম্বই-চেন্নাই-দিল্লিতে যৌথ ভাবে রোড শো করবে হিডকো ও রাজ্য সরকার। আগামী ১ সেপ্টেম্বর মুম্বইয়ে, ১৫ সেপ্টেম্বর চেন্নাইয়ে রোড শো হবে। পুজোর পরে হবে দিল্লিতে। পাশাপাশি বেশি করে তুলে ধরা হবে নিউটাউনের ‘পরিবেশ বান্ধব’ চেহারাকে। শোনানো হবে হাব লাগোয়া ৪৫০ একরবিশিষ্ট ইকো পার্কের কথা, যা কিনা এখন নিউটাউনের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। সরকারি সূত্রের ইঙ্গিত, রোড শোয়ে রাজ্যের তরফে প্রচারের মুখ হতে পারেন নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। ফিরহাদ অবশ্য এ প্রসঙ্গে মুখ খুলতে চাননি। হিডকো’র চেয়ারম্যান তথা ম্যানেজিং ডিরেক্টর দেবাশিস সেন বলেন, “পেশাদার সংস্থার পরামর্শ নিয়েই আমরা এগোচ্ছি।”
এ দিকে নবান্ন-সূত্রের খবর: কেন্দ্রে ইউপিএ-২ সরকার থাকাকালীন অর্থতালুকের জন্য সাহায্য চেয়ে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র নয়াদিল্লির অর্থমন্ত্রক ও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গর্ভনরকে চিঠি দিয়েছিলেন। এখন বিজেপি সরকারের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি কলকাতায় এলে (শীঘ্রই আসার কথা) এ নিয়ে তাঁর সঙ্গে রাজ্যের কর্তাদের আলোচনা হতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy