Advertisement
E-Paper

অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ দল, গ্রেফতার সাত

লাগাতার রাজনৈতিক হিংসা বন্ধের অন্যতম দাওয়াই হিসেবে এলাকায় মজুত বোমা ও অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধারের দাবি আগেই উঠেছিল। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ওই দাবির প্রেক্ষিতে সোমবার রাত থেকেই মাঠে নেমে পড়ল জেলা পুলিশ। পাড়ুইয়ের বিভিন্ন গ্রামে হানা দিল পুলিশের পনেরো সদস্যের এক বিশেষ দল। লক্ষ্য অস্ত্র ও বোমার ‘সাপ্লাই লাইন’টাই কেটে দেওয়া।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:২০
চৌমণ্ডলপুরে পুলিশি টহল। ফাইল চিত্র।

চৌমণ্ডলপুরে পুলিশি টহল। ফাইল চিত্র।

লাগাতার রাজনৈতিক হিংসা বন্ধের অন্যতম দাওয়াই হিসেবে এলাকায় মজুত বোমা ও অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধারের দাবি আগেই উঠেছিল। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ওই দাবির প্রেক্ষিতে সোমবার রাত থেকেই মাঠে নেমে পড়ল জেলা পুলিশ। পাড়ুইয়ের বিভিন্ন গ্রামে হানা দিল পুলিশের পনেরো সদস্যের এক বিশেষ দল। লক্ষ্য অস্ত্র ও বোমার ‘সাপ্লাই লাইন’টাই কেটে দেওয়া।

বীরভূমের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, “এই মুহূর্তে জেলা ‘বোম্ব ডিটেকশন অ্যান্ড ডিসপোজাল স্কোয়াডে’র ১৫ সদস্যের একটি দল পাড়ুইয়ে রয়েছে। নিজেদের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে তাঁরা স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে থাকছেন। বোমা ও অস্ত্র উদ্ধারে লাগাতার তল্লাশি চালানো হবে।” তিনি আরও জানান, গ্রামের দিকে অনেক সময়ই পুকুরপাড়, পরিত্যক্ত জায়গা কিংবা খড়ের গাদায় বোমা ও অস্ত্র লুকিয়ে রাখছে দুষ্কৃতীরা। সেগুলি খুঁজে বের করতেই এই পদক্ষেপ।

এখনও অবধি তেমন বড় কোনও সাফল্য না মিললেও পাড়ুইয়ে অস্ত্র উদ্ধার অভিযানের প্রথম দিনেই বিতর্কের মুখে পড়েছে জেলা পুলিশ। অভিযোগ মঙ্গবার ভোরে চৌমণ্ডলপুরে বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি চালানোর সময় বোমার হদিস পেতে শিশুদের টাকার টোপ দিয়েছে পুলিশ। রবিবার ওই গ্রামের বাইরে ধানখেত থেকে গুলিবিদ্ধ দেহ উদ্ধার হয়েছিল গ্রামেরই ছেলে শেখ জমিউদ্দিনের। এ দিন জসিমের প্রতিবেশীর বাড়িতে তল্লাশির সময় পুলিশ ওই প্রস্তাব দেয় বলে চৌমণ্ডলপুরের পরিবারটির দাবি। বাড়ির দুই স্কুলছাত্রীর অভিযোগ, “পুলিশ তল্লাশি চালাতে আমাদের বাড়িতে ঢুকে পড়ে। আমরা দু’বোন তখন পড়ছিলাম। পুলিশ আমাদের বলে, ‘কোথায় বোমা রাখা আছে, বলে দে। তা হলে ২০ টাকার কড়কড়ে নোট দেব। না বললে মারব’। আমরা ওদের সাফ জানিয়ে দিই, বোমার কথা আমরা জানি না।” যদিও এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার। জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, “পুলিশের এই বিশেষ অভিযানের খবরে দুষ্কৃতীরা ভয় পাচ্ছে। তাই এ রকম হাস্যকর অভিযোগ তুলে অপরাধীদের আড়াল করার চেষ্টা চলছে।” যদিও বোমা-অস্ত্র উদ্ধারে এই অভিযান এখন লাগাতার চলবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, আপাতত শান্ত নানুরের বাসাপাড়া থেকে সনসত, শিঙ্গি, রজতপুর, রাইপুর, মেটেকোনা, হাঁসড়া হয়ে অস্ত্র ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম টাকার বিনিময়ে পৌঁছে যাচ্ছে ইলামবাজার ও পাড়ুইয়ের যুযুধান দুই রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থাকা দুষ্কৃতীদের হাতে। সাম্প্রতিক কালে দু’পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় এমন বিপুল বেআইনি বোমা-অস্ত্রই জেলা পুলিশের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্য দিকে, এ দিনই সিরশিট্টা-কাণ্ডে পুলিশের দায়ের করা স্বতঃপ্রণোদিত মমলায় সাত জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সিউড়ি আদালতে হাজির করানো হলে প্রত্যেককেই জেল হাজতে পাছিয়েছেন মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট ইন্দ্রনীল চট্টোপাধ্যায়। ধৃতদের ফের আগামী ১ ডিসেম্বর আদালতে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। ধৃত গোলাম মুস্তফা, শেখ আব্বাস, শেখ সাদ্দাম এবং শেখ সাহাবুদ্দিন হরিশপুরের বাসিন্দা। শেখ দুলদুলকে ধরা হয়েছে কাশপাই থেকে। বাকি দুই ধৃত নবি নওয়াজ এবং শেখ আমির আলির বাড়ি কাশেরহাটে। প্রথম চার জনের অন্যতম শেখ সাহাবুদ্দিনের আবার নিজেদের সিপিএম সমর্থক হিসেবে দাবি করেছেন। বাকিরা নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান জানাতে চাননি।

দু’দিন ধরে টানাপোড়েনের পরে অবশেষে মঙ্গলবার বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিহত জসিমউদ্দিনের দেহের ময়না-তদন্ত হয়েছে। সিউড়ি সদর হাসপাতাল থেকে এ দিন সকাল ৮টা নাগাদ পুলিশের অ্যাম্বুল্যান্সে করে জসিমের মৃতদেহ বর্ধমান মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়েছিল। জসিমের পরিবারের অভিযোগ ছিল, কোনও রকম মেডিক্যাল পরীক্ষা এবং ডেথ সার্টিফিকেট ছাড়াই রবিবার দুপুরে দেহটি সোজা সিউড়ি হাসপাতালের মর্গে ঢুকিয়ে দেয় পুলিশ। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন বিজেপি সমর্থকেরাও। সোমবারও ওই দেহের ময়না-তদন্ত করা হয়নি। পরিবারের দাবি, সিউড়ি হাসপাতাল থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, এখানে ময়না-তদন্ত হবে না। বর্ধমানে মেডিক্যালে পাঠানো হবে। তার পরে এ দিন সেই বর্ধমানেই জসিমের দেহের ময়না-তদন্ত হয়। বিজেপি-র জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডলের ক্ষোভ, “পুলিশ থেকে হাসপাতাল, সবাই তৃণমূলের দাসানুদাসে পরিণত হয়ে গিয়েছে। তাই এক জনের মৃতদেহ নিয়েও তৃণমূলের নির্দেশে ওঁদের চলতে হচ্ছে। এর চেয়ে লজ্জার আর কী হতে পারে!” এ দিনই জসিমের বাবা একরামুল হক দাবি করেন, “রবিবারের সিরশিট্টা গ্রামের ঘটনার সঙ্গে আমার ছেলে কোনও ভাবেই যুক্ত নয়। তৃণমূল ওকে গুলি করে খুন করেছে।”

এ দিনই বিকেলে বর্ধমান মেডিক্যাল থেকে জসিমের দেহ চৌমণ্ডলপুরে তাঁর বাড়িতে পৌঁছয়। গ্রামেই তাঁকে কবর দেওয়া হয়েছে।

parui weapon rescue mission arrest special police squad
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy