বামনগাছি আছে বামনগাছিতেই!
পুলিশি পাহারা আছে, আছে চোলাইয়ের রমরমা কারবারও!
এই চোলাই কারবারের প্রতিবাদ করতে গিয়েই খুন হয়েছেন কলেজ পড়ুয়া সৌরভ চৌধুরী। তার পরে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ। মঙ্গলবার রাতে ধরা পড়েছে মূল অভিযুক্ত শ্যামল কর্মকার। আর মঙ্গলবার রাতেই সৌরভের বাড়ির পিছনে কুলবেড়িয়া গ্রামে বসেছে চোলাইয়ের ঠেক।
তা হলে কীসের প্রতিবাদে প্রাণ দিলেন সৌরভ? শ্যামল-সহ এলাকার ১১ দুষ্কৃতীকে ধরেই বা কী পরিবর্তন হল? প্রশ্ন তুলেছেন বামনগাছির বাসিন্দারাই। উত্তরও অবশ্য দিয়েছেন তাঁরাই। কী সেই উত্তর?
এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, বামনগাছির সমাজবিরোধী-চিত্রে শ্যামলরা নিমিত্তমাত্র। তাদের পিছনে যারা রয়েছে, তারা রয়েছে রাজনীতির নিরাপদ আশ্রয়ে। শ্যামলরা ধরা পড়লেও এই চিত্রের তাই কোনও বদল আসছে না। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ছবিটা বাম আমলেও একই রকম ছিল। তবে এখন আরও জোরদার হয়েছে।
এলাকাবাসীর এই কথার সুর সৌরভের বাবা সরোজ চৌধুরীর গলাতেও। তিনিও বলছেন, “এই এলাকা থেকে সমাজবিরোধীদের শিকড় উপড়ে দিতে হবে। না হলে অন্য কোনও মায়ের কোল খালি হওয়া আটকানো যাবে না।” সদ্য পুত্রহারা প্রৌঢ় জানান, শ্যামলরা ধরা পড়ার পরে এই প্রতিবাদ বন্ধ হবে না। তবে বাসিন্দাদের একাংশের আশঙ্কা, দু’-চার দিন পরেই রাজনৈতিক চাপের কাছে প্রতিবাদ থমকে যেতে পারে। রাজনৈতিক মদত পেয়ে ফের বাড়বাড়ন্ত শুরু হবে দুষ্কৃতীদের।
সেই রাজনৈতিক চাপের ইঙ্গিতও এ দিন মিলেছে বলে বামনগাছির বহু বাসিন্দার দাবি। কী রকম?
শ্যামলের মদতদাতা হিসেবে নাম উঠে এসেছে স্থানীয় তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য তুষার মজুমদার ওরফে বিশুর। সেই বিশুর নেতৃত্বেই এ দিন বামনগাছিতে মিছিল করেছে তৃণমূল। দলের পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হয়েছে, বামনগাছির এই মিছিলটি করা হয়েছে রেল বাজেটের বিরুদ্ধে। কিন্তু বাসিন্দাদের অনেকের মতে, এ দিন সৌরভের বাড়ির সামনে দিয়ে দু’বার মিছিল গিয়েছে। কিন্তু এক বারের জন্যও স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য তুষার ওরফে বিশু সৌরভের বাড়িতে ঢোকেননি। এর কারণ হিসেবে অনেকে বলছেন, সৌরভের খুনের পরে যে ভাবে শাসক দলের বিরুদ্ধে আঙুল উঠেছে, তাতে স্পষ্টই বিব্রত তৃণমূল নেতারা। কেউ আবার এ-ও বলছেন, ওই মিছিলে নিজের শক্তি প্রদর্শন করে হারানো জমি ফিরে পেতে চাইছেন বিশু। মিছিল থেকে বিরোধিতার বার্তাও দেওয়া হয়েছে।
এই প্রসঙ্গেই বামনগাছির বাসিন্দাদের একাংশ কামদুনির প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন। তাঁরা বলছেন, গ্রামের মেয়েকে ধর্ষণ করে খুনের প্রতিবাদে সরব হয়েছিলেন বাসিন্দারা। সেখানেও অভিযুক্তদের মদত দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল শাসক দলের কয়েক জন নেতার বিরুদ্ধে। পরে বাসিন্দাদের আন্দোলন রুখতে এ ভাবেই পাল্টা প্রতিবাদ-মিছিল করেছিল তৃণমূল।
তবে এই পাল্টা মিছিল ও রাজনৈতিক চাপ নিয়ে বামনগাছির যুবকদের বক্তব্য, সৌরভের খুনের পর যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, তা চলতেই থাকবে। উল্টে এ দিন শ্যামলদের মতো দুষ্কৃতীদের মদতদাতাদের পাকড়াও করার দাবি জানিয়ে সরব হয়েছেন তাঁরা। আদালতে গিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন বামনগাছির এক দল মহিলাও। পরে সৌরভের বাড়িতে এসে তাঁর পরিবারকে ওই মহিলারা বলেন, “দুষ্কৃতীদের এই শিকড় আমরা উপড়ে ফেলবই।” বাসিন্দাদের বক্তব্য, রাজনৈতিক মদত থাকার ফলেই পুলিশও দুষ্কৃতীদের বিশেষ ঘাঁটাত না। অভিযোগ জানালে দু’-এক দিন পুলিশ আসত। “পুলিশি নজরদারি ঢিলে হতেই ফের দাপিয়ে বেড়াত দুষ্কৃতীরা।”মন্তব্য এক বাসিন্দার।
শাসক দলের নেতারা না গেলেও এ দিন সৌরভের বাড়িতে গিয়েছিল রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের একটি বাম প্রতিনিধি দল। সৌরভের বাবা সরোজবাবু ও দাদা সন্দীপের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। পরে সূর্যবাবু জানান, বারাসত ও তার আশপাশের এলাকায় এমন ঘটনা নতুন নয়। এ ব্যাপারে প্রশাসন দল-রং না দেখে ব্যবস্থা নিক। পুলিশি তদন্তে সন্তুষ্ট না হলে সিবিআই তদন্ত চাওয়ার ব্যাপারেও রাজ্যের বিরোধী দলনেতার সঙ্গে কথা বলেন সরোজবাবু। বাম বিধায়কেরা এ ব্যাপারে যাবতীয় সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। সূর্যবাবু বলেন, “যে কোনও ব্যাপারেই ওদের সাহায্য করতে আমরা প্রস্তুত।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy