শিবাজি পাঁজা
প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার হয়ে জামিনে মুক্ত মুখ্যমন্ত্রী-ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীর সঙ্গে তিন দিনেও কথা হয়নি দিল্লি পুলিশের! সূত্রের খবর, আজ, বুধবার দিল্লি পুলিশের সঙ্গে কথা হতে পারে শিবাজি পাঁজা নামে ওই ব্যবসায়ীর।
দিল্লি পুলিশের জারি করা লুক আউট কর্নার (এলওসি) নোটিসের ভিত্তিতে শনিবার এই ব্যবসায়ীকে আটক করে কলকাতা বিমানবন্দরের অভিবাসন দফতর। তাঁকে তুলে দেওয়া হয় বিমানবন্দর থানার পুলিশের হাতে। রবিবার আদালত তাঁর জামিন মঞ্জুর করে। ওই রাতেই দিল্লি পুলিশের দুই অফিসার কলকাতায় আসেন। তবে এখনও পর্যন্ত তাঁদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়নি শিবাজির। মঙ্গলবার শিবাজির আইনজীবী রাজদীপ মজুমদার বলেন, “দিল্লির দুই অফিসার যে হেতু কলকাতায় আছেন, তাই শিবাজিবাবুই তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নেবেন। ওই অফিসারেরাও ইচ্ছা করলে শিবাজিবাবুর সঙ্গে দেখা করতে পারেন।”
শিবাজি নিজে এ দিন বিকেলে বলেন, “আমি অসুস্থ। চোখ থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। চিকিৎসকের কাছে আছি। এখনও পর্যন্ত দিল্লি পুলিশের তরফে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি।”
দিল্লি পুলিশের সূত্রের খবর, শিবাজির জামিনের বিরুদ্ধে আজ, বুধবার তাঁরা আদালতে যাবেন। মঙ্গলবারেই আদালতে যাওয়ার কথা ছিল তাঁদের। কিন্তু দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, কাগজপত্র খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দিল্লি পুলিশের ডিসিপি রজনীশ গর্গ বলেন, “আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলছি। সব আইনি সম্ভাবনাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সেই অনুযায়ী বুধবার পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।” সূত্রের খবর, এ দিন কলকাতায় একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে শিবাজির একটি অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছে দিল্লি পুলিশের দলটি।
কিন্তু লুক আউট নোটিস থাকা সত্ত্বেও শিবাজি কী ভাবে এত সহজে জামিন পেলেন, সেই প্রশ্ন উঠেছে স্বাভাবিক ভাবেই। রাজ্য পুলিশ সূত্রের খবর, শনিবার রাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় ফেরার পরে বিমানবন্দরের অভিবাসন দফতর শিবাজিকে আটকায়। রাত বারোটা নাগাদ বিমানবন্দর লাগোয়া এনএসসিবিআই থানায় নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। রাজ্য পুলিশের দাবি, তখনই বিষয়টি জানানো হয় দিল্লি পুলিশকে। একটি সূত্রের দাবি, সেই রাতে শিবাজিকে নিয়ে যাওয়া হয় আনোয়ার শাহ রোডে তাঁর বাড়িতে। সেখান থেকে বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করানো হয় তাঁকে। রবিবার সকালে তোলা হয় ব্যারাকপুর আদালতে।
দিল্লি পুলিশ সূত্রের খবর, শনিবার রাতে তারা শিবাজিকে গ্রেফতারের খবর পেলেও রবিবার সকালে বিমানের টিকিট পেতে সমস্যায় পড়ে। শেষে ওই দিনই রাতের উড়ানে তাঁরা কলকাতায় আসেন। তার আগেই আদালতে শিবাজির জামিন মঞ্জুর হয়ে গিয়েছে। রাজ্য পুলিশের এক কর্তার কথায়, “এলওসি-র ভিত্তিতে ধৃত অভিযুক্তের ক্ষেত্রে আমরা প্রথমে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের পুলিশকে জানাই। কিন্তু ২৪ ঘণ্টার বেশি অভিযুক্তকে নিজেদের হেফাজতে রাখা যায় না, আদালতে পেশ করতে হয়। সঙ্গে পেশ করা হয় এলওসি-র প্রতিলিপি, বাজেয়াপ্ত করা জিনিসের তালিকা (সিজার লিস্ট) এবং স্থানীয় থানার রিপোর্ট। ওই রিপোর্টেই বলা হয়, ‘সংশ্লিষ্ট রাজ্যের পুলিশ আসা পর্যন্ত অভিযুক্তকে আটক রাখা প্রয়োজন’।” সূত্রের খবর, রবিবার ব্যারাকপুর আদালতে পেশ করা নথিতেও বিমানবন্দর পুলিশ এ কথাই লিখেছে।
রাজ্য পুলিশের এক অফিসারের কথায়, “সচরাচর এলওসি-র ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের পুলিশ আসা পর্যন্ত অভিযুক্তের জামিন হয় না। তবে এই ধরনের ঘটনায় জামিন মঞ্জুরের উদাহরণ যে একেবারে নেই, তা নয়। আদালতে শিবাজিবাবুর হয়ে একাধিক আইনজীবী সওয়াল করেন। তাঁদের যুক্তি ছিল, শিবাজিবাবুর অপরাধ কী, লুক আউট নোটিসে তা বিশদে বলা নেই। দিল্লি পুলিশের পক্ষে আদালতেও জানানো হয়নি তাঁর বিরুদ্ধে ঠিক কী ধরনের অভিযোগ রয়েছে।” এই সওয়ালের ভিত্তিতেই জামিন পান শিবাজি। তাঁকে ১০ মার্চের মধ্যে দিল্লি গিয়ে সেখানকার পুলিশের সঙ্গে দেখা করতে নির্দেশ দেয় আদালত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy