রায় বেরনোর কথা ছিল মাসখানেক আগে। তার ঠিক আগের দিন নিজের বাড়িতে বসে তিনি বলেছিলেন, “আইন যদি ওদের সাজা না দেয়, যদি ছাড়া পেয়ে যায় ওরা, ওদের আক্রোশ থেকে ছাড় পাব? ...মরণ ছাড়া আর কোনও গতি থাকবে আমার?”
সেই আশঙ্কাই সত্যি হয়ে গেল।
শুক্রবার কাটোয়া ধর্ষণ মামলায় সব অভিযুক্তের বেকসুর খালাসের খবর শুনে সেই অভিযোগকারিণীই বললেন, ‘‘আতঙ্কে বোধ হয় আর ঘুম আসবে না আমাদের।’’
২০১২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি মেয়েকে নিয়ে কীর্ণাহার থেকে ট্রেনে উঠেছিলেন মহিলা, ফিরবেন কেতুগ্রামের বাড়িতে। পথে অম্বলগ্রাম স্টেশনের আগে ট্রেন দাঁড় করিয়ে ডাকাতি শুরু হয়। আর তখনই ১১ বছরের মেয়ের মাথায় বন্দুক ধরে তার মাকে নামিয়ে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ।
মহিলার এই ছোট মেয়েই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বলে জানিয়ে আদালতে বয়ান দিয়েছিল। মায়ের সঙ্গে গিয়ে টিআই প্যারেডে অভিযুক্তদের শনাক্ত করেছিল সে। এ দিন মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে কাঁপা গলায় সে বলে, “আমি তো এ বার ভয়েই মরে যাব। রাস্তায় বেরোতেই তো পারব না।”
এই সংক্রান্ত আরও খবর...
• প্রমাণ নেই, কাটোয়া ধর্ষণে খালাস সকলেই
কিন্তু ওই মেয়ে বা তার দিদির রাস্তায় না বেরিয়ে উপায় নেই। তারা পড়াশোনা করে। ছোট ওই মেয়েটি এ বার মাধ্যমিক দেবে। কিন্তু তার ঘরবন্দি মা ভয়ে কাঁপছেন। ছোট মেয়েকে পাশে নিয়ে চোখের জল মুছতে-মুছতে তিনি বলেন, “ওরা জেল থেকে বেরিয়ে আসছে। খুব বিপদে পড়ে গেলাম। যা যাওয়ার তা তো গিয়েছেই, মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়েই এখন বেশি চিন্তা।”
গ্রামের সকলেরই আশা ছিল, অভিযুক্তেরা সাজা পাবে। এ দিন রায় শোনার জন্য মুখিয়ে ছিল গোটা গ্রাম। রায় বেরনোর পরেই পাড়াপড়শি, আত্মীয়-পরিজন হতাশায় ডুবে যান। ঘটনার দিন থেকে ছোট জাকে বোনের মত আগে রেখেছিলেন পরিবারের মেজ বউ। তিনি বলেন, “সত্য প্রমাণ করার জন্য আমরা কত লড়লাম। সব বিফলে চলে গেল!” তাঁর স্বামীর আক্ষেপ, “ঘটনার দু’দিনের মাথায় মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, সাজানো ঘটনা।
দীর্ঘ লড়াইয়ের পরে প্রায় চার বছরের মাথায় রায় বেরোতে দেখা গেল, সবাই মুখ্যমন্ত্রীর কথাই সত্যে পরিণত করল।” শুধু পরিবার নয়, ওই ঘটনার পর থেকে গোটা গ্রাম বিধবা মহিলার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। রায় বেরনোর পরেও গোটা গ্রাম ওই বিধবা মহিলার পাশেই রয়েছেন।
বস্তুত, গ্রামের বেশির ভাগ মানুষই মনে করছেন, অভিযোগকারিণী সুবিচার পাননি। প্রথম দিন থেকেই তাঁরা ওই বিধবা মায়ের পাশে ছিলেন, এখনও আছেন। মহিলার কথায়, “সকলেই এসে বলছেন, সঠিক বিচার হল না।” গ্রামের বধূ
পূর্ণিমা চট্টোপাধ্যায় থেকে উন্নতি দাসেরা প্রায় একবাক্যে বললেন, “মেয়েদের মনের কথা মেয়েরাই বোঝে। ওর উপর দিয়ে যে কী বইছে সেটা আমরা বুঝতে পারছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy