Advertisement
১১ জুন ২০২৪

ইন্দ্রনীলের পরে সরকারি পদ ভাইচুংকেও

শাসক দলের পরাজিত সৈনিকদের পুনর্বাসনের কর্মসূচি অব্যাহত তৃণমূল-সরকারের। গায়ক ইন্দ্রনীল সেনের পরে এ বার ফুটবলার ভাইচুং ভুটিয়া। লোকসভা ভোটে ‘কঠিন’ আসনে দু’জনেই তৃণমূলের হয়ে লড়ে হেরেছেন। তার পরে ইন্দ্রনীলকে সাউথ পয়েন্ট হাইস্কুলের পরিচালন সমিতিতে রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৪ ০৩:১৯
Share: Save:

শাসক দলের পরাজিত সৈনিকদের পুনর্বাসনের কর্মসূচি অব্যাহত তৃণমূল-সরকারের।

গায়ক ইন্দ্রনীল সেনের পরে এ বার ফুটবলার ভাইচুং ভুটিয়া। লোকসভা ভোটে ‘কঠিন’ আসনে দু’জনেই তৃণমূলের হয়ে লড়ে হেরেছেন। তার পরে ইন্দ্রনীলকে সাউথ পয়েন্ট হাইস্কুলের পরিচালন সমিতিতে রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এ বার মন্ত্রিসভার বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রস্তাবে ‘নর্থ বেঙ্গল স্পোর্টস প্রোমোশনাল বোর্ড’ গঠন করে ভাইচুংকে সেই সংস্থার চেয়ারম্যান করার সিদ্ধান্ত হল। বৈঠকের পরে শুক্রবার ওই সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করেছেন ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র।

সরকারি পদাধিকারী করার আগেই অবশ্য ইন্দ্রনীল এবং ভাইচুংকে তাঁদের আনুগত্যের ‘পুরস্কার’ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। লোকসভা ভোটের ফলপ্রকাশের অব্যবহিত পরেই তাঁদের দু’জনকে রাজ্য সরকার ‘বঙ্গভূষণ’ সম্মান দিয়েছে। বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রে সাড়ে তিন লক্ষের বেশি ভোটে পরাজিত হয়েছেন ইন্দ্রনীল। আর দার্জিলিঙে ভাইচুং হেরেছেন প্রায় দু’লক্ষ ভোটে। এর আগে রাজনৈতিক স্তরেও তাঁদের দু’জনের মর্যাদা বাড়ানো হয়েছে। ইন্দ্রনীলকে মুর্শিদাবাদে তৃণমূলের পর্যবেক্ষক এবং ভাইচুংকে দার্জিলিঙে দলের কার্যকরী সভাপতি করা হয়েছে। ভোট-যুদ্ধে তাঁরা দু’জনেই যে ভাবে লড়াই করেছেন, তাকে মর্যাদা দিতেই তাঁদের মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের সম্মানিত করছেন বলে তৃণমূলের একাংশের অভিমত।

মুখ্যমন্ত্রী-ঘনিষ্ঠ অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষকে রাজ্যের বৃত্তিমূলক শিক্ষা সংসদের সভাপতি করার সিদ্ধান্ত নিয়ে সম্প্রতি বিতর্ক বেধেছে। তাতে বিশেষ গুরুত্ব না-দিয়ে ইন্দ্রনীলকে সাউথ পয়েন্টে রাজ্যের প্রতিনিধি করার পরেই মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাবিত উত্তরবঙ্গের ক্রীড়া সংস্থার মাথায় বসানো হল ভাইচুংকে। বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর কক্ষে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে মদনবাবু জানান, রাজ্য ক্রীড়া পর্ষদের ধাঁচে উত্তরবঙ্গের খেলার মানোন্নয়নের জন্য সংস্থা গঠন করা হচ্ছে। শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা ক্রীড়াঙ্গনে ‘স্পোর্টস প্রোমোশনাল বোর্ডে’র দফতর হবে। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহেই বোর্ডের কাজ শুরু হবে।

মন্ত্রিসভার এ দিন ছিল ৬৯তম বৈঠক। উত্তরবঙ্গে খেলাধুলোর উন্নয়নে বোর্ড গঠন ছাড়াও ওই বৈঠকে যৌনকর্মীদের পুর্নবাসনের ব্যাপারে একটি প্রকল্প গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। নারী ও শিশুবিকাশ মন্ত্রী শশী পাঁজা জানিয়েছেন, যে সমস্ত যৌনকর্মী তাঁদের পেশা ছেড়ে স্বনির্ভর হতে চান, তাঁদের জন্য মুখ্যমন্ত্রী ‘মুক্তির আলো’ নামে একটি প্রকল্প করছেন। মন্ত্রিসভার বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাবিত প্রকল্প বাস্তবায়িত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আপাতত ৫০ জন যৌনকর্মীকে নিয়ে ৬ মাসের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রশিক্ষণ চলাকালীন শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের খরচ এবং বাড়ি ভাড়া সরকারই বহন করবে। এ জন্য বছরে ৮৮ লক্ষ টাকা খরচ বরাদ্দ হয়েছে। শিক্ষান্তে ওই মহিলারা যখন ব্যবসা করবেন, তখন তাঁদের তৈরি জিনিসপত্র বিক্রির ব্যাপারেও রাজ্য সরকার সহযোগিতা করবে। শশীদেবী আরও জানান, বৃদ্ধা ও অসুস্থ যৌনকর্মীদের জন্য ‘বৃদ্ধাবাস’ নির্মাণ ও যৌনকর্মীদের সন্তানদের শিক্ষার জন্য আবাসিক বিদ্যালয় চালু করার পরিকল্পনাও মুখ্যমন্ত্রী নিয়েছেন।

পাশাপাশি, তফসিলি জাতি, উপজাতিভুক্ত ছেলেমেয়েদের শিক্ষার প্রসারে ‘শিক্ষাশ্রী’ প্রকল্প চালুর সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে এ দিন। রাজ্যে দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের শিক্ষার প্রসারে ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্প আগেই চালু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। শিক্ষাশ্রী প্রকল্পে তফসিলি জাতি ও উপজাতিভুক্ত পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদের বছরে ৮০০ টাকা আর্থিক অনুদান দেওয়া হবে বলে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান। বৈঠকে ‘পিপিপি’ মডেলে রাজ্যের তিন জায়গায় মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের সিদ্ধান্তও গৃহীত হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, “সরকারি জমি ও সম্পদের ব্যবহার করে বেসরকারি উদ্যোগে মেডিকাল কলেজ তৈরি হবে। মেডিক্যাল শিক্ষার প্রসারে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়, কোচবিহার, নদিয়ার ধুবুলিয়ায় তিনটি কলেজ স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।”

বৈঠকে আরও বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। উত্তরবঙ্গের সচিবালয় ‘উত্তরকন্যা’ থেকে এ বার সেখানকার কর্মীদের পেনশন, ভবিষ্যনিধি প্রকল্পের কাজ হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী আগেই ঘোষণা করেছিলেন। মন্ত্রিসভায় এ দিন সেই প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। সেই সঙ্গে রাজ্যের ‘চাই’ সম্প্রদায়কে তফসিলি-ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পার্থবাবু বলেন, ‘‘নদিয়া, মালদহ, মুর্শিদাবাদ ও দক্ষিণ দিনাজপুরে চাই সম্প্রদায়ের বহু মানুষ বাস করেন। তফসিলি জাতি-উপজাতিভুক্ত হলে ওই সম্প্রদায়ের সুবিধা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bhaichung bhutia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE