রাজনৈতিক অভিসন্ধির অভিযোগ উঠলেও রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রর স্ত্রী ঊষা মিশ্রের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় তল্লাশি বন্ধ হল না। উল্টে দু’টি দলে ভাগ হয়ে তল্লাশি চালালেন তদন্তকারীরা। বুধবার পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়ণগড়ের খাকুড়দায় ঊষাদেবীর স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘ভগবতীদেবী নারী কল্যাণ সমিতি’র কার্যালয়ে প্রায় ন’ঘণ্টা তল্লাশি চালান রাজ্য পুলিশের দুর্নীতি দমন শাখার চার জন। বৃহস্পতিবার সে দলেরই দু’জন ফের খাকুড়দায় তদন্তে যান। অন্য দু’জন যান মেদিনীপুর সদরের মহতাবপুরে সংস্থার কোষাধ্যক্ষ কার্তিকচন্দ্র আচার্যের শ্বশুরবাড়িতে।
ঊষাদেবীর সংস্থায় এই তল্লাসি প্রক্রিয়াকে ‘বেআইনি হামলা’ বলে বিঁধেছেন সিপিএমের মুখপাত্র মহম্মদ সেলিম। তাঁর যুক্তি, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বলে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলেও ব্যবসায়ী শিবাজী পাঁজাকে পুলিশ গ্রেফতার করছে না। অথচ, সার্চ ওয়ার্যান্ট ছাড়া কেন্দ্রের প্রকল্প নিয়ে রাজ্য সরকারের দুর্নীতি দমন শাখা তদন্ত করছে! সূর্যকান্তর মিশ্রের স্ত্রী-র বিরুদ্ধে এফআইআর করছে। পুরো ব্যাপারটাই রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র।” দলের জেলা সম্মেলন উপলক্ষে মেদিনীপুরে যাওয়া আরএসপি-র রাজ্য সম্পাদক ক্ষিতি গোস্বামী বলেন, “প্রতিহিংসা থেকেই এমনটা হচ্ছে। মানুষ সবই বুঝছেন।”
একই সুর ঊষাদেবীর গলাতেও। তাঁর ক্ষোভ, “চাবি বানিয়ে খাকুড়দার অফিসের আলমারি খোলা হয়েছে। ন্যূনতম অনুমতিটুকুও নেওয়া হয়নি। এমনটা কি আদৌ করা যায়?” দুর্নীতি দমন শাখার তরফে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, বিধি মেনেই তল্লাশি চালানো হচ্ছে। আজ, শুক্রবার ফের খাকুড়দায় যাওয়ার কথা রয়েছে তদন্তকারীদের।
যৌন কর্মীদের মধ্যে এড্স নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে ঊষাদেবীর সংস্থাটি কাজের বরাত পায় ২০০৮-এ। রাজ্যে ক্ষমতায় এসেই ওই সংস্থার কাজ নিয়ে তদন্ত করে মমতা সরকার। ২০১২ সালে সংস্থাটির বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ এনে রিপোর্ট দেয় তদন্ত কমিটি। তারও প্রায় তিন বছর পরে, বুধবার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটির বিষয়ে ফের তল্লাশি শুরু করেন দুর্নীতি দমন শাখার অফিসারেরা। এই পরিস্থিতিতে কি এ বার আইনি পদক্ষেপের কথা ভাবছেন? ঊষাদেবীর জবাব, “সিপিএমের রাজ্য সম্মেলনের পরে, দলীয় ভাবে আলোচনা করে বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ করা হবে।”
খাকুড়দায় এক সমবায় ব্যাঙ্কের শাখায় এ দিন ১১টা নাগাদ যান দুই তদন্তকারী। ম্যানেজার হাজির ছিলেন না। অন্য আধিকারিকদের ঊষাদেবীর সংস্থার নামে থাকা অ্যাকাউন্টগুলির ‘স্টেটমেন্ট’ তৈরি করে রাখতে বলে তাঁরা। দিনভর ‘ভগবতীদেবী নারী কল্যাণ সমিতি’র অফিসে তল্লাশি চালানোর পরে, সাড়ে ৫টা নাগাদ তদন্তকারীরা ‘স্টেটমেন্ট’ নিয়ে যান।
ব্যাঙ্ক সূত্রের খবর, তাদের শাখায় ‘ভগবতীদেবী নারী কল্যাণ সমিতি’র নামে ষোলোটি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল। তিনটি অ্যাঙ্কাউন্ট বছর তিনেক আগে বন্ধ হয়। তার একটিতে ৫৩৭ টাকা ছিল ছিল অন্য দু’টির কোনওটিতে ১৫ হাজারের বেশি ছিল না। চালু ১৩টি অ্যাকাউন্টের মধ্যে যেটিতে সব চেয়ে কম সেটিতে ২৯৮ টাকা এবং যেটিতে সব চেয়ে বেশি সেটিতে ১,৭৯,৩১৫ টাকা রয়েছে।
অন্য দুই তদন্তকারী সংস্থার কোষাধ্যক্ষ তথা এড্স প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের প্রোজেক্ট ডিরেক্টর কার্তিকচন্দ্র আচার্যের শ্বশুরবাড়িতে তল্লাশিতে যান। কার্তিকবাবু প্রায় সতেরো বছর ঊষাদেবীর সংস্থায় যুক্ত। তাঁর বাড়ি দাঁতনে। সেখানে না গিয়ে তাঁর শ্বশুরবাড়িতে তল্লাশি কেন? দুর্নীতিদমন শাখার দাবি, শ্বশুরবাড়িতে বেশি থাকতেন কার্তিকবাবু।
তবে সেখানে কার্তিকবাবু ছিলেন না। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। মোবাইল বন্ধ ছিল। জবাব আসেনি এসএমএসের। তদন্তকারীরা তাঁর স্ত্রী মিলি অধিকারী আচার্যের কাছে জানতে চান, ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাগজপত্র বাড়িতে রয়েছে কি না। মিলিদেবী জানান, তেমন কিছু বাড়িতে নেই। মিলিদেবীর বাবা শশাঙ্কশেখর অধিকারী সম্পর্কে কাঁথির তৃণমূল সাংসদ শিশির অধিকারীর দাদা। শশাঙ্কশেখরবাবু বলেন, “তদন্তকারীরা মিনিট কুড়ি ছিলেন। কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। এ দিন কিছু নিয়ে যাননি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy