Advertisement
E-Paper

এই লাইনেই চলুন দাদা, ট্রেনে উঠে টের পেলেন নেতা-সাংসদ

দাদা, একটু চা খাবেন? দাঁড়ান, নৈহাটি আসুক। আমি এনে দিচ্ছি। প্রস্তাব দিয়ে নিজেই নেমে গিয়ে রূপায়ণ করে ফেললেন এক জন! কল্যাণীর এক কারখানায় কর্মরত, আদতে রায়গঞ্জের লোক, এমন এক জন জানালেন, চিকিৎসার খরচ পেতে ভোগান্তিতে পড়েছেন। কোনও পথ বার করা যায়? তুরন্ত তাঁকে রায়গঞ্জের সাংসদ মহম্মদ সেলিমের নম্বর দিয়ে যোগাযোগ করতে বলা হল।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৪৬
সুজন চক্রবর্তী এবং ঝতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের ট্রেন সফর। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

সুজন চক্রবর্তী এবং ঝতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের ট্রেন সফর। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

দাদা, একটু চা খাবেন? দাঁড়ান, নৈহাটি আসুক। আমি এনে দিচ্ছি। প্রস্তাব দিয়ে নিজেই নেমে গিয়ে রূপায়ণ করে ফেললেন এক জন!

কল্যাণীর এক কারখানায় কর্মরত, আদতে রায়গঞ্জের লোক, এমন এক জন জানালেন, চিকিৎসার খরচ পেতে ভোগান্তিতে পড়েছেন। কোনও পথ বার করা যায়? তুরন্ত তাঁকে রায়গঞ্জের সাংসদ মহম্মদ সেলিমের নম্বর দিয়ে যোগাযোগ করতে বলা হল।

একটি ছোট ছেলের ক্যানসার। তার চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে কী ভাবে সহায়তা পাওয়া যেতে পারে, জানতে চাইলেন এক জন। তাঁকে দ্রুত আশ্বাস দেওয়া হল, সাংসদের চিঠি দিয়ে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া হবে।

ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের এক শিক্ষক তাঁদের প্রতিষ্ঠানের সমস্যা নিয়ে মত বিনিময় করলেন। তার পরে আর্জি, এই নিয়ে কিছু প্রতিবাদ করা যায় না? তাঁকে বলা হল, তিনি যা ভাবছেন, সেটাই অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে দিলে কাজ হবে। এখনই কাউকে গিয়ে মিছিল করতে হবে না। আবার কেউ এসে বললেন, একটু চেপে বসুন তো! বলা হল, ও’দিকেও তো জায়গা আছে। কিন্তু দাবিদার নাছোড়! তাঁকে এ দিকের সিটেই বসতে হবে!

এ সবই শিয়ালদহ থেকে শান্তিপুর এবং রানাঘাট থেকে শিয়ালদহ লোকাল ট্রেন-যাত্রার টুকরো ছবি। নিত্যযাত্রায় যা সব ঘটে থাকে, তার থেকে এই আলাপচারিতার ফারাক অন্য জায়গায়। এই টুকরো টুকরো সংলাপের এক দিকে যেমন সাধারণ যাত্রীরা, উল্টো দিকের চরিত্রেরা কিঞ্চিৎ ‘অ-সাধারণ’! সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তী এবং দলের রাজ্যসভার সাংসদ ঝতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। নদিয়ার ফুলিয়ায় এসএফআইয়ের সম্মেলনে যাওয়ার জন্য যাঁরা শনিবার বেছে নিয়েছিলেন লোকাল ট্রেন! ফেরার সময় রানাঘাট থেকে কল্যাণী পর্যন্ত আবার তাঁদের সঙ্গী সিপিএমের আরও এক জেলা সম্পাদক, নদিয়ার সুমিত দে এবং প্রাক্তন সাংসদ অলোকেশ দাস। যাওয়ার সময় সঙ্গে ছিলেন এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক দেবজ্যোতি দাস। লোকাল ট্রেন ধরে ছাত্র-নেতা দেবজ্যোতিকে বেলঘরিয়ায় নামতে দেখতে লোকে অভ্যস্ত। কিন্তু বড় কোনও রাজনৈতিক দলের পরিচিত নেতারা সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গে গণ-পরিবহণে, তার মধ্যে আবার সাংসদও এই ছবি বঙ্গে বিরল বটে!

ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী লন্ডনের টিউব রেলে জায়গা না পেয়ে দাঁড়িয়ে যেতে পারেন। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী সাইকেল চালিয়ে অফিসে ঢুকতে পারেন। কিন্তু এ দেশে ভিআইপি-দের পা অত সহজে আম যাত্রীদের মাঝে পড়ে না! দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে মেট্রো ধরেছিলেন অরবিন্দ কেজরীবাল। কিন্তু প্রতীকি সেই ট্রেন-যাত্রার আর পুনরাবৃত্তি হয়নি! সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য সীতারাম ইয়েচুরি দিল্লিতে এক বার গাড়ি ছেড়ে ট্রেনে যাতায়াতের সিদ্ধান্ত নিয়েও পরে হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন। কী করবেন সুজন-ঝতব্রতেরা?

সিপিএম নেতাদের ট্রেন সফরের ছবি সোশ্যাল সাইটে আপলোড হতেই যে মতামত উপচে পড়েছে, তাকে মান্যতা দিতে চাইলে এই পথই ধরে রাখতে হবে সুজনবাবুদের। বাম-সমর্থক কেউ কেউ সেখানে লিখেছেন, ‘সব সিপিএম নেতৃত্বের এই ছবি দেখা উচিত’! কেউ বলেছেন, ‘বাংলার মানুষ বামফ্রন্টকে এই ভাবেই দেখতে চায়। খুব সাধারণ ভাবে। হয়তো একটু দেরি হয়ে গিয়েছে কিন্তু আবার আসবে সেই দিন’! পরিচিত তৃণমূলপন্থীও মন্তব্য করেছেন, ‘পাবলিক ট্রান্সপোর্টে সাংসদ যাচ্ছেন, এটা দেখতে খুব ভাল লাগছে। এতে সব সমস্যার সমাধান হবে না ঠিকই। কিন্তু রাজনীতিকদের উপরে ভরসা ফেরাতে পারে’।

পরের পর নির্বাচনে ধাক্কা খেয়ে কোণঠাসা দলের জনসংযোগে নতুন মাত্রা আনতে চেয়েই এই রেল-রাস্তা ধরেছিলেন সুজনবাবুরা। এর আগে ভোট প্রচারে ট্রেনে চেপেছেন প্রাক্তন সাংসদ সুজন। তখন তাকে নিতান্তই ভোটের তাগিদ বলে ধরা যেত। কিন্তু এ বার সচেতন ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া। সুজনবাবু অবশ্য বলছেন, “এ আর কী এমন ব্যাপার! আমি মাঝে মাঝে ট্রেনে যাই। আমার মতে, সব রাজনীতিকদেরই লোকজনের মাঝে যাতায়াত করা উচিত।” একই সঙ্গে তিনি জানাচ্ছেন, জনতার ভাল-মন্দ সব মতামত নিয়ে লোকাল ট্রেনের আলাপচারিতা দামী অভিজ্ঞতা। সুজনবাবুর কথায়, “দলের কর্মসূচিতে গেলে নিজেদের লোকেরাই থাকে। কিন্তু এই ভাবে ট্রেনে গেলে সব ধরনের মানুষের কথা শোনা যায়। চেনা মুখ বলে লোকে চিনে নিয়েই কথা বলতে আসেন।” আর সাংসদ ঝতব্রতের অভিজ্ঞতা, “এতে গাড়ির খরচ নেই, ধকলও কম। মানুষ তাঁদের নানা রকম দাবি বা সমস্যা নিয়ে এগিয়ে আসছেন, এটা ভাল লাগল।”
জনবিচ্ছিন্নতার রোগে আক্রান্ত একটা দলকে লোকাল ট্রেন যদি আবার লাইনে ফেরাতে পারে!

sfi meet sandipan chakrabarty sujan chakrabarty shantipur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy