প্রতিবাদ: রবিবার ব্রিগেডে উৎপল সরকারের তোলা ছবি।
রেজ্জাকের রসিকতা
নন্দীগ্রাম ছিল বামফ্রন্ট সরকারের পতনবিন্দু। সেই নন্দীগ্রাম থেকেই অনেক মানুষ এসেছিলেন বাম-ব্রিগেডে। আব্দুর রেজ্জাক মোল্লাকে তাঁরা জানালেন হুমকি, সন্ত্রাস উপেক্ষা করে ব্রিগেডে এসেছেন। নন্দীগ্রামের মাটিতে দাঁড়িয়ে দলটাও করছেন অনেক কষ্ট সহ্য করেই। ২০০৮ সালে ভূমিমন্ত্রী থাকাকালীন নন্দীগ্রামে গিয়ে জমির পাট্টা বিলি করেছিলেন রেজ্জাক। সে কথা তাঁকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে ওই সিপিএম কর্মীরা আর্জি করলেন, “তৃণমূলের মারধর, মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর সঙ্গে এঁটে ওঠা কঠিন। এখন আপনি নন্দীগ্রামে গেলে কর্মীদের মনোবল বাড়বে।” রেজ্জাকের সহাস্য জবাব, “এখন গেলে তো আমাকেও মারবে। তার চেয়ে যখন সুদিন আসবে, তখন যাব।”
সুদীপ্ত-জ্যোতি
ব্রিগেডে জ্যোতি বসুর সঙ্গে পাল্লা দিলেন এসএফআইয়ের প্রয়াত নেতা সুদীপ্ত গুপ্ত। জ্যোতিবাবুর জন্মশতবর্ষে তাঁকে নিয়ে বই বের করেছে দলের সল্টলেক লোকাল কমিটি ‘আলোর পথযাত্রী’। তাতে সিপিএমের বিভিন্ন নেতার লেখা ছাড়াও রয়েছে জ্যোতিবাবুর ভোটার পরিচয়পত্র-সহ বিভিন্ন তথ্য। দাম ১২০ টাকা। ব্রিগেডে ৭০। চতুর্ভুজ পুস্তকালয় বিক্রি করছে জ্যোতি বসুকে নিয়ে পাঁচ টাকার বই ‘মহান নেতা জ্যোতি বসু লহ প্রণাম’। পিছিয়ে নেই সুদীপ্ত গুপ্তও। দক্ষিণ ২৪ পরগনার গণতান্ত্রিক লেখক-শিল্পী সংঘের সম্পাদনায় প্রয়াত এসএফআই নেতা সুদীপ্ত গুপ্তকে নিয়ে তৈরি বই ‘রক্তঝরা দিনের আলোয়’ বিক্রি হয়েছে ব্রিগেডে। হুগলি জেলা গণনাট্য সংঘ আবার সুদীপ্ত-সহ বিভিন্ন বামপন্থী কর্মীর মৃত্যু নিয়ে সিডি করেছে। নাম ‘তোর লাশের দোহাই’।
দেশলাই কাঠি
এমনিতে কাঠখোট্টা মানুষ। পদটিও যথেষ্ট গম্ভীর। বিধানসভায় বামফ্রন্টের সচেতক। ফরওয়ার্ড ব্লকের বিধায়ক সেই বিশ্বনাথ কারক ব্রিগেড সমাবেশে অন্য ভূমিকায়। সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘দেশলাই কাঠি’ কবিতাটি আবৃত্তি করলেন তিনি। মাত্র ৪৮ ঘণ্টা আগে ফব-রই বিধায়ক সুনীল মণ্ডল রাজ্যসভায় তৃণমূল প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন। ২৪ ঘণ্টা আগে আনুষ্ঠানিক ভাবে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন তিনি। এমতাবস্থায় বিশ্বনাথবাবুর ‘দেশলাই কাঠি’ বারুদে অগ্নিসংযোগ করতে পারল কি না, তা সময়ই বলবে।
বিবর্ণ
ব্রিগেডে পুলিশের তৈরি টাওয়ারগুলি এ বার ছিল বর্ণহীন। কলকাতা পুলিশের রং এখন নীল-সাদা। সেই রঙের কাপড়েই প্রথমে টাওয়ারের বাঁশগুলি মুড়ে দিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু বামফ্রন্ট নেতৃত্ব তাদের হয় নীল, নয় সাদা কাপড় লাগাতে অনুরোধ করেন। বামেদের যুক্তি ছিল, মমতা জমানায় সরকারের রং হয়েছে নীল-সাদা। ব্রিগেড সমাবেশে যাঁরা আসবেন, তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ বিরোধীদের কর্মসূচিতে সরকারি রং দেখে অপমানিত বোধ করতে পারেন। তাঁদের মধ্যে কোনও অত্যুৎসাহী ওই টাওয়ারের কাপড় ছিঁড়ে দিলে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি হবে। সেই যুক্তি শুনেই পুলিশ টাওয়ারগুলির নীল-সাদা কাপড় বাদ দিয়ে কেবল বাঁশ রেখেছিল।
বাইক-মিছিল
প্রায় ৬০টি বাইক নিয়ে মিছিল করে ব্রিগেডে হাজির ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ অ্যান্ড সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ ইউনিয়ন’-এর হাওড়া জেলা শাখার কর্মীরা। আবার বাইক মিছিল? প্রশ্ন করতেই হাসলেন তাঁদের নেতা নিলয় বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্যামল মজুমদারেরা। বললেন, “দ্বিতীয় সেতু দিয়ে দ্রুত আসব বলেই বাইক নিয়ে এসেছি। আর এখন আমরা সন্ত্রাস করব কী! আমরাই তো সন্ত্রাস-কবলিত।”
সাতাত্তর থেকে
ছাতা মাথায় দিয়ে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে বসে রেলের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী বলছিলেন, “সেই সাতাত্তর সাল থেকে আমরা ব্রিগেডে আসছি। ঠিক এ রকম জায়গাতেই বসি। স্টেজের ডান দিকটায়।” হালিশহরের বাসিন্দা। এলাকায় তো বটেই, রেলেও শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তবে নাম বলা বা ছবি তুলতে দেওয়ায় অনীহা। বললেন, “এখন পরিস্থিতি আলাদা। পাড়ায় সবাই আমাদের চেনে। ঝুঁকি নেওয়া যাবে না।”
পূজারী সিপিএম
মাথায় তিলক কেটে ব্রিগেডে হাজির পুরুলিয়ার আরশা থানা এলাকার বাসিন্দা শ্রীপতি কুইরা। পুজো-আচ্চা করেন। আবার সিপিএম-ও করেন। ব্রিগেডে এসেও চাদর পেতে বাবু হয়ে পুরোহিতের ঢঙেই বসে। সিপিএমে থেকে পুজো-আচ্চা! বলেন, “পার্টির সঙ্গে কোনও বিরোধ নেই। ওদের সঙ্গে কাজ করতে ভাল লাগে। তাই করি। প্রতি বার ব্রিগেডেও আসি।”
জখম ১৬
ভিআইপি রোড দিয়ে রবিবার বামফ্রন্টের ব্রিগেড সমাবেশ আসার সময় লরি উল্টে ১৬ জন জখম হয়েছেন। পুলিশ জানায়, রাজারহাট নারায়ণপুরের ফ্রন্ট-সমর্থকেরা একটি ছোট লরিতে ব্রিগেড যাচ্ছিলেন। কেষ্টপুরের কাছে লরিটি উল্টে যায়। আহতদের রাজারহাট পুর হাসপাতালে পাঠানো হয়। ১৫ জনকে ছেড়ে দেওয়া হলেও এক জন হাসপাতালে। এ দিনই দমদম পার্কের কাছে চাকা ফেটে ব্রিগেডমুখী একটি বাস ফুটপাথে উঠে পড়ে। কয়েক জন জখম হন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy