Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

এখন ফের সেই সুব্রত পাশে, ধন্দ রাখলেন রাজ্যপাল

শিক্ষাঙ্গনে তাণ্ডবের সময় রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন মন্তব্য করেছিলেন, ‘গুন্ডামি’ চলছে! তার প্রতিক্রিয়ায় রাজ্যপালকে ‘হলুদ কার্ড’ দেখিয়েছিলেন পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। বলেছিলেন, প্রয়োজনে লাল কার্ডও দেখানো হতে পারে! ঘটনা পঞ্চায়েত ভোটের আগের। এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেই সুব্রতবাবুই ব্যাট ধরলেন রাজ্যপাল নারায়ণনের পক্ষে!

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৪ ০৩:৫৮
Share: Save:

শিক্ষাঙ্গনে তাণ্ডবের সময় রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন মন্তব্য করেছিলেন, ‘গুন্ডামি’ চলছে! তার প্রতিক্রিয়ায় রাজ্যপালকে ‘হলুদ কার্ড’ দেখিয়েছিলেন পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। বলেছিলেন, প্রয়োজনে লাল কার্ডও দেখানো হতে পারে! ঘটনা পঞ্চায়েত ভোটের আগের।

এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেই সুব্রতবাবুই ব্যাট ধরলেন রাজ্যপাল নারায়ণনের পক্ষে!

ইউপিএ জমানায় মনোনীত রাজ্যপালদের উপরে পদ ছাড়ার জন্য চাপ সৃষ্টির যে পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তাতে রাজ্যপাল নারায়ণন ইস্তফা দিয়ে দিতে পারেন বলেই মনে করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব অনিল গোস্বামী রাজ্যপালকে ফোন করে তিনি ইস্তফা দিচ্ছেন কি না, জানতে চাওয়ার পরে জল্পনা আরও গতি পেয়েছে। নারায়ণন-সহ বেশ কয়েক জন রাজ্যপাল পদ থেকে সরে যান, বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার এমনই চাইছে কি না, প্রশ্ন উঠেছে। মেয়াদ ফুরনোর আগেই বর্তমান রাজ্যপালকে সরিয়ে সঙ্ঘ পরিবারের ঘনিষ্ঠ কাউকে রাজভবনে বসানোর চেষ্টা হচ্ছে বলে মনে করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই প্রেক্ষাপটেই বুধবার রাজ্যপাল-প্রশ্নে মুখ খুলেছেন বর্ষীয়ান মন্ত্রী সুব্রতবাবু। তাঁর বক্তব্য, “সঙ্কীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে রাজ্যপালকে সরানো উচিত নয়।”

ঘনিষ্ঠ মহলে সুব্রতবাবু আরও বলেছেন, অতীতে কেউ কেউ রাজ্যপাল পদটিকে খারাপ ভাবে ব্যবহার করেছেন। তাই বর্তমান রাজ্যপাল শেষ পর্যন্ত সরে গেলে নতুন কে আসবেন, সেটা দেখতে হবে। নির্বাচিত সরকারের মাথার উপরে রাজ্যপাল হিসাবে কেউ থাকবেন কেন, সেই প্রশ্নও তুলে দিয়েছেন সুব্রতবাবু। তাঁর এ দিনের কথাতেই ইঙ্গিত মিলছে, রাজ্যপাল সরানো বা নতুন নিয়োগকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সংঘাতের রাস্তায় যেতে তৈরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।

তিনি পদ থেকে সরে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে স্বয়ং রাজ্যপালও ধোঁয়াশা বজায় রেখেছেন। সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের মুখে এ দিন সন্ধ্যায় তিনি শুধু বলেছেন, “আমি এখনও তো ইস্তফা দিইনি!” একে তিনি আগামী মাস থেকে কোনও কর্মসূচি রাখছেন না। তার উপরে এ দিন ‘এখনও’ শব্দটির ব্যবহার জল্পনায় আরও ইন্ধন দিয়েছে!

বিড়লা সভাগৃহে একটি অনুষ্ঠানে এ দিন রাজ্যপালই ছিলেন প্রধান অতিথি। চলতি মাসে শহরে এমন আরও কয়েকটি অনুষ্ঠানে তাঁকে দেখা যাবে। কিন্তু ১ জুলাই থেকে রাজভবনের বাইরে কোনও অনুষ্ঠানের যাওয়ার কর্মসূচি রাখতে বারণ করে দিয়েছেন রাজ্যপাল। দিল্লিতে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য কোনও প্রস্তাব বা চিঠি কি তাঁর কাছে এসেছে? এই প্রশ্নে রাজ্যপালের জবাব, “আপনাদের বলব কেন? আমি কী করব-না করব, তা আপনাদের বলতে বাধ্য নই!” কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল হিসেবে কার্যভার চালিয়ে যাওয়া নিয়ে তিনি নিজে কি কোনও সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন? অনুষ্ঠান ভবনে ঢোকার মুখে ঘাড় ঘুরিয়ে রাজ্যপাল বলেন, “কোনও সিদ্ধান্ত নিলে আপনাদের জানিয়ে দেব।”

শাসক দল তৃণমূলও এখন নজর রাখছে কেন্দ্রীয় সরকার এবং নারায়ণন নিজে কী করেন, তার উপরে। সুব্রতবাবু কিছু মন্তব্য করলেও তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় এ দিন অবশ্য বলেন, “দল এখনও কিছু সিদ্ধান্ত নেয়নি। আগে সরকার অবস্থান ঠিক করুক। তার পরে দলে আলোচনা করে বক্তব্য ঠিক করা হবে।”

তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের যুক্তি, নতুন সরকার এলে আগের জমানার রাজ্যপালদের সরিয়ে দেওয়াই ইদানীং প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই ধারা মেনেই নারায়ণন সরে দাঁড়াতে পারেন বলে তৃণমূল নেতৃত্ব মনে করছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতাও সোমবার সন্ধ্যায় রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে তাঁর মন বোঝার চেষ্টা করে এসেছেন।

এমতাবস্থায় চটশিল্পের সমস্যা নিয়ে এ দিন রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস নেতা তথা সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য নারায়ণনকে অনুরোধ করেছেন, মেয়াদ শেষের আগে তিনি যেন সরে না যান। রাজ্যপাল অবশ্য কোনও মন্তব্য করেননি। পরে প্রদীপবাবুর মন্তব্য, “কেন্দ্র কি রাজ্যপালদের অস্থায়ী কর্মী হিসাবে ধরছে? কেন্দ্র যদি আগের আমলের রাজ্যপালদের এই ভাবে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে, তা হলে তা অত্যন্ত অগণতান্ত্রিক ও অন্যায়!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

governor m k narayanan subrata mukhopadhyay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE