Advertisement
E-Paper

এপ্রিলেই ছাঁটাইয়ের নির্দেশ বয়স্ক অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের

পঁয়ষট্টির বেশি বয়সী অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী এবং সহায়িকাদের ছাঁটাই করার নির্দেশ জারি করল রাজ্য সরকার। আগামী ১ এপ্রিল থেকে তাঁদের কার্যত বরখাস্ত করার নির্দেশিকা (মেমো নম্বর: ৩৬১-এসডব্লু/৩এস-২৫৫/০৪) ইতিমধ্যেই বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়েছে। রাজ্যের সমাজকল্যাণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সুসংহত শিশুবিকাশ প্রকল্পের আওতায় থাকা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতে অন্তত ৩৫ হাজার কর্মী রয়েছেন, যাঁদের বয়স ৬৫ পেরিয়ে গিয়েছে।

রাহুল রায়

শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৪ ০৩:১২

পঁয়ষট্টির বেশি বয়সী অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী এবং সহায়িকাদের ছাঁটাই করার নির্দেশ জারি করল রাজ্য সরকার। আগামী ১ এপ্রিল থেকে তাঁদের কার্যত বরখাস্ত করার নির্দেশিকা (মেমো নম্বর: ৩৬১-এসডব্লু/৩এস-২৫৫/০৪) ইতিমধ্যেই বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়েছে।

রাজ্যের সমাজকল্যাণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সুসংহত শিশুবিকাশ প্রকল্পের আওতায় থাকা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতে অন্তত ৩৫ হাজার কর্মী রয়েছেন, যাঁদের বয়স ৬৫ পেরিয়ে গিয়েছে। বয়সের ভারে প্রায় ন্যুব্জ ওই কর্মীদের অধিকাংশ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে নিয়মিত আসতে পারেন না। অথচ তাঁরা বেতন পাচ্ছেন নিয়মিত। তাঁদের পরিবর্তে নতুনদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতেই এই সিদ্ধান্ত।

লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ শাসকদলের অন্যতম হাতিয়ার। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাঁর প্রচারে বারংবার সে আশ্বাস দিয়েছেন। সরকারি এই নির্দেশিকা দেখে তাই বিরোধীদের পাল্টা প্রশ্ন, কর্মসংস্থানের গাজর ঝুলিয়ে ভোট টানতেই কি এই সিদ্ধান্ত? সমাজকল্যাণ দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজা অবশ্য অভিযোগ মানতে নারাজ। তিনি বলেন, “সিদ্ধান্তটা রাজ্য সরকারের নয়। কেন্দ্রীয় সমাজকল্যাণ মন্ত্রক ২০১৩ সালেই নির্দেশ পাঠায়। সেটাই পালন করা হচ্ছে।”

কিন্তু তাতেও প্রশ্ন উঠছে, বছর ঘুরে যাওয়ার পরে ভোটের মুখে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হল? মন্ত্রীর জবাব, “রাজ্যে পঁয়ষট্টি উর্ধ্ব অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ঠিক কত জন, তার তালিকা তৈরিতে কিছুটা দেরি হয়েছে। বিলম্ব সেই কারণেই।” তিনি জানান, রাজ্যে এমন বেশ কিছু অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে পঁয়ষট্টি বছরের বেশি বয়সী কর্মী রয়েছেন। মন্ত্রীর কথায়, “তাঁদের অনেকেরই বয়স হয়তো সত্তরোর্ধ্ব। কাগজে-কলমে কর্মরত। কিন্তু বাস্তবে কাজ করছেন তাঁদের আত্মীয়-পরিজনেরা। এ ব্যাপারে স্বচ্ছতা আনতে কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ম মেনেই বয়স বেঁধে দেওয়া হচ্ছে।”

তাতেও অবশ্য চিঁড়ে ভিজছে না। নির্বাচনের মুখে ওই নির্দেশিকার বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন আরএসপি নেতা বিশ্বনাথ চৌধুরী। বাম জমানায় দীর্ঘদিন সমাজকল্যাণ দফতরের দায়িত্ব সামলে আসা বিশ্বনাথবাবুর দাবি, “আমরা সরকারে থাকাকালীন দিল্লি থেকে এ ব্যাপারে বার কয়েক চাপ দেওয়া হয়েছিল। আমরা পাল্টা দাবি করেছিলাম, ওঁদের ছাঁটাই করতে হলে এককালীন অন্তত ৫ লক্ষ এবং সহায়িকাদের ৩ লক্ষ টাকা করে দিতে হবে। তা শুনে দিল্লি পিছিয়ে যায়।” তাঁর অভিযোগ, ভোট টানতেই এখন এই পদক্ষেপ করা হচ্ছে।

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী আরও এক ধাপ এগিয়ে বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকার এক বছর আগেই সতর্ক করেছিল। তখন সময় হয়নি। এখন কর্মসংস্থানের আশ্বাস দিয়ে ভোটভিক্ষা করছে তৃণমূল। এই সিদ্ধান্ত নির্বাচনী বিধিভঙ্গের সামিল।”

কর্মী ও সহায়িকা মিলে রাজ্যের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতে প্রায় দু’লক্ষ মানুষ কর্মরত। সমাজকল্যাণ দফতরের হিসেব, তাঁদের প্রায় ২০ শতাংশের বয়স পঁয়ষট্টির বেশি। কী করে তাঁদের বয়স যাচাই করা হল? দফতরের এক শীর্ষকর্তা বলেন, “মাধ্যমিক পাশ করলে তবেই অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী হওয়ার সুযোগ মেলে। মাধ্যমিকের সার্টিফিকেটে বয়সের উল্লেখ থাকে। সহায়িকাদের ক্ষেত্রে অষ্টম শ্রেণি পাশ করা বাধ্যতামূলক। তাঁদের বয়স যাচাই করা হয় স্কুলের সার্টিফিকেট দেখে। অনেক সময়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির কাছ থেকেও নিয়ে আসা শংসাপত্রেও বয়সের উল্লেখ থাকে।”

ওই বিপুল সংখ্যক কর্মী ছাঁটাই বাস্তবে কতটা সম্ভব, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে থাকা সরকারি কিংবা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে চলা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের ওই বয়স্ক কর্মীদের রাতারাতি বরখাস্তের চিঠি ধরালে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে বলে জেলা প্রশাসনের কর্তারা জানিয়েছেন। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা মাসে ৪৩৫০ টাকা এবং সহায়িকারা মাসে ২৮৫০ টাকা করে পান। অনেকেরই বেতনের কিছুটা বকেয়া রয়েছে। ছাঁটাইয়ের তালিকাভুক্ত কর্মীদের পাওনাগন্ডা রাতারাতি কী করে মেটানো যাবে, তা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে।

দফতরের এক শীর্ষকর্তা জানান, মার্চের শেষ সপ্তাহে নির্দেশ জারি হয়েছে। হাতে আর মাত্র একটা কাজের দিন। তাঁর দাবি, “নির্দেশিকায় ফেব্রুয়ারির তারিখ থাকলেও তা বিলি বণ্টনে কিছুটা দেরি হয়েছে। তাই দু’এক দিনের নোটিসে বিপুল সংখ্যক কর্মীর হাতে বরখাস্তের চিঠি ধরানো কতটা সম্ভব হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।” খোদ মন্ত্রীও বলেন, “নোটিস জারি করা হয়েছে ঠিকই, তবে তা কতটা কার্যকর করা যাবে সন্দেহ।”

সেই সংশয়ের সুতোতেই ঝুলছে ন্যুব্জ কর্মীদের ভবিষ্যৎ।

anganwadi rahul roy job cuts
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy