Advertisement
১৬ মে ২০২৪

এমনটাই হওয়ার ছিল, বললেন জলু-শঙ্কর

কৃষ্ণগঞ্জে উপনির্বাচন শেষ হল। জলুবাবুকে দেখলেন কি? কিংবা শঙ্কর সিংহকে? রাজ্যের মন্ত্রী হয়েও উজ্জ্বল বিশ্বাস তেমন করে নেমে পড়লেন কি ভোটের ময়দান কাঁপাতে? বসন্তের অকাল-নির্বাচনে এ বার যে বাঘা নেতারা স্বেচ্ছায় রইলেন আড়ালে, ফল ঘোষণার দিন তাঁরা কী বলছেন? “আমাকে তো কেউ ডাকেইনি। তাহলে যাবো কেন?”

সত্যব্রত মুখোপাধ্যায়। ডান দিকে, শঙ্কর সিংহ।—ফাইল চিত্র

সত্যব্রত মুখোপাধ্যায়। ডান দিকে, শঙ্কর সিংহ।—ফাইল চিত্র

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
কৃষ্ণগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৪:৪৪
Share: Save:

কৃষ্ণগঞ্জে উপনির্বাচন শেষ হল। জলুবাবুকে দেখলেন কি? কিংবা শঙ্কর সিংহকে? রাজ্যের মন্ত্রী হয়েও উজ্জ্বল বিশ্বাস তেমন করে নেমে পড়লেন কি ভোটের ময়দান কাঁপাতে? বসন্তের অকাল-নির্বাচনে এ বার যে বাঘা নেতারা স্বেচ্ছায় রইলেন আড়ালে, ফল ঘোষণার দিন তাঁরা কী বলছেন?

“আমাকে তো কেউ ডাকেইনি। তাহলে যাবো কেন?” প্রশ্ন করলেন সত্যব্রত মুখোপাধ্যায়, ওরফে জলুবাবু। নদিয়া থেকে এখনও পর্যন্ত একবারই বিজেপি প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। ১৯৯৯ সালে কৃষ্ণনগর লোকসভা আসন থেকে সত্যব্রত মুখোপাধ্যায়, জলুবাবু নামেই বেশি পরিচিত। নামী আইনজীবী জলুবাবু সেবার কেন্দ্রে মন্ত্রীও হয়েছিলেন। গত লোকসভা ভোটে তাঁর হয়ে প্রচারে কৃষ্ণনগরে এসেছিলেন স্বয়ং নরেন্দ্র মোদী। এহেন জলুবাবুকে উপনির্বাচনে একদিনের জন্যও দেখা গেল না কেন? তাঁর অভিমান, দল ডাকেনি তাঁকে।

কিন্তু নিজের জেলার ভোটে ডাকতেই বা হবে কেন? জলুবাবুর উত্তর, “এক সময়ে কৃষ্ণগঞ্জ আমার লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে ছিল, কিন্তু এখন আর নেই। ফলে কৃষ্ণগঞ্জের পরিস্থিতি সম্পর্কেও এখন বিশেষ কিছু জানাও নেই। তাছাড়া আমার বয়সও হয়েছে। এখন অত ‘অ্যাক্টিভ ক্যাম্পেন’ পারি না।” মান-অভিমান করে সরে থাকার কথা মানলেন না, তবু বলেই ফেললেন, “জেলা নেতৃত্ব যাঁরা আছেন, তাঁরা আমায় কিছুই বলেননি, যোগাযোগও করেননি।”

এ দিন বিজেপির ফলাফলে জেলা নেতাদের বিঁধতে ছাড়লেন না জলুবাবু। বললেন, “সারা দেশ জুড়ে বিজেপির হাওয়া চলছে। আমাদের দুর্ভাগ্য, পশ্চিমবঙ্গে সেই হাওয়ার ফসল তুলতে পারলাম না।” কোথায় ভুল হল? প্রবীণ নেতার আক্ষেপ, “শুধু মিটিং করে, ভাষণ দিয়ে এ জিনিস হয় না। লোকের ঘরে ঘরে গিয়ে বোঝাতে হবে, স্বচ্ছ বিকল্প সরকার কেবল আমরাই দিতে পারি।”

নদিয়ার কংগ্রেসে এই সেদিন পর্যন্ত শঙ্কর সিংহই ছিলেন শেষ কথা। গত লোকসভা ভোটেও রানাঘাট-কুপার্স অঞ্চলের এই নেতা রাজ্য রাজনীতির মঞ্চ দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। অথচ কী আশ্চর্য, তাঁর নিজের জেলায় এত বড় উপনির্বাচন পর্বে শঙ্কর সিংহকে কোথাও খুঁজেই পাওয়া গেল না। কেন ভোটের ময়দানে নামলেন না? প্রশ্নটা করতে যা দেরি, শুনেই ফুঁসে উঠলেন শঙ্করবাবু, “কেন যাব? নিমন্ত্রণ ছাড়া কেউ বিয়েবাড়ি যায় না।” তাঁর ক্ষোভ, প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অধীর চৌধুরী সাংবাদিক সম্মেলন করে বলছেন, তিনি শঙ্করবাবুকে পছন্দ করেন না। এ ঘটনা ‘নজিরবিহীন’ এবং ‘শিষ্টাচারবিরোধী’, দাবি শঙ্করবাবুর। “তার মানে, তাদের আমাকে দরকার নেই। সুতরাং সেখানে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।”

পিছনে তৃণমূল সমর্থকদের উচ্ছ্বাস। গণনাকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে আসছেন নিঃসঙ্গ বিজেপি প্রার্থী মানবেন্দ্র রায়।—নিজস্ব চিত্র

জেলায় কংগ্রেসের ফলাফলে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন শঙ্করবাবু। গত ভোটেও ছ’হাজার ভোট পেয়েছিল কংগ্রেস কৃষ্ণগঞ্জে। এবার কমে চারের ঘরে। শঙ্করবাবুর প্রশ্ন “কেন হবে না? জেলা সভাপতি থেকে ব্লকস্তর পর্যন্ত যাঁরা এখন দলের নেতৃত্বে আছেন, তাঁদের কী গ্রহণযোগ্যতা আছে সাধারণ মানুষের কাছে?” তাঁর কটাক্ষ, দলের জেলা সভাপতি তাঁর নিজের ওয়ার্ডে বিগত পুরভোটে ১৩২টা ভোট পেয়েছিলেন। “এমন নেতারা দলকে নেতৃত্ব দিলে যা হয় তাই হয়েছে,” বললেন তিনি।

উপনির্বাচনে সেভাবে দেখা মেলেনি রাজ্যের মন্ত্রী তথা নদিয়ার হেভিওয়েট নেতা উজ্জ্বল বিশ্বাসেরও। ভোটের প্রচারে চিরকালই মন্ত্রীরা আলাদা গুরুত্ব পেয়ে থাকেন। সে তিনি কেন্দ্র বা রাজ্য যে পর্যায়েরই মন্ত্রী হোন। অথচ কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা উজ্জ্বলবাবুকে বাড়ির পাশে কৃষ্ণগঞ্জের উপনির্বাচনে দেখা গেল না। এমনকী সোমবারও তাঁকে দেখা গেল না গণনা কেন্দ্রের আশেপাশে। কিন্তু কেন? নিন্দুকেরা বলছেন, কৃষ্ণগঞ্জের উপনির্বাচনে তাঁর পছন্দের প্রার্থী বিধান পোদ্দার শেষ পর্যন্ত টিকিট পায়নি। দলে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী, তৃণমূল জেলা সভাপতি গৌরী দত্তের পছন্দের লোক সত্যজিৎ বিশ্বাস প্রার্থী হয়েছেন। তাই উজ্জ্বলবাবু মাঠে নামেননি। দল অবশ্য জিতেছে, কিন্তু তার জন্য জেলা নেতৃত্বকে বিশেষ কৃতিত্ব দিতে রাজি নন উজ্জ্বলবাবু। তিনি বলেন, “নদিয়ায় এই জয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূলের। কোনও দাদার জয় নয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE