খড়দত্তপাড়ায় কালামের শ্বশুরবাড়ি। নিজস্ব চিত্র।
তিন দিকে সবুজ ধান খেতের মাঝখানে দাঁড়িয়ে বাড়িটা। ভাল করে না দেখলে বোঝা মুশকিল, গাছপালার আড়ালে আস্ত বাড়ি রয়েছে সেখানে।
পূর্বস্থলীর খড়দত্তপাড়ার এই বাড়ি খাগড়াগড় বিস্ফোরণ-কাণ্ডে অন্যতম সন্দেহভাজন আবুল কালামের শ্বশুরবাড়ি। বুধবার রাতে খড়দত্তপাড়ায় হাসেম মোল্লার বাড়িতে অভিযানের কয়েক ঘণ্টা পরে বৃস্পতিবার সকালে ফের এই গ্রামে এলেন এনআইএ-র গোয়েন্দারা। এ বার তাঁদের গন্তব্য ছিল আবুল কালামের এই শ্বশুরবাড়ি। বাড়ির মালিক লাল মহম্মদ শেখ, গ্রামের মানুষ যাঁকে লালু শেখ নামে চেনেন, তাঁর ছোট মেয়ে বিলকিসের সঙ্গে বছর চারেক আগে বিয়ে হয়েছিল মঙ্গলকোটের কুলসুনো গ্রামের কালামের। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শ্বশুরবাড়িতে নিয়মিত যাতায়াতও ছিল তার। মাস দুয়েক রমজানের সময় শেষ বার সে এসেছিল বলে দাবি শ্বশুরবাড়ির লোকজনের। খাগড়াগড়-কাণ্ডের দিন তিনেকের মাথায় এই গ্রাম থেকে ধৃত হাসেম মোল্লার সঙ্গে কালামের ঘনিষ্ঠতা ছিল বলে গোয়ন্দাদের ধারণা।
হাসেম মোল্লার বাড়ি থেকে বেশ কিছুটা দূরে, খড়দত্তপাড়া এবং হাপানিয়া গ্রামের সীমানায় রাস্তার ধারে লালু শেখের বাড়ি। এসটিকেকে রোডের বড়ডাঙা মোড় থেকে উত্তর দিকে গিয়েছে কৈচর-সিঙ্গি-বর্ধমান রোড, এলাকাবাসীর কাছে যা মিলিটারি রোড বলে পরিচিত। বছর চোদ্দ আগে এই বাড়িটি তৈরি করেন লালু শেখ। তার আগে তিনি থাকতেন গ্রামের ভিতরে।
এ দিন সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ এনআইএ-র দল গ্রামে ঢুকে সরাসরি যায় লালু শেখের বাড়িতে। তাদের সঙ্গে ছিল পূর্বস্থলী থানার পুলিশ। লালু শেখ তখন বাড়িতে ছিলেন না। তাঁর স্ত্রী আসমা বিবিকে দীর্ঘক্ষণ জেরা করেন গোয়েন্দারা। বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়। পরে আসমা বিবি জানান, গোয়েন্দারা বাড়ি থেকে একটি কাগজে লেখা কয়েকটি ফোন নম্বর নিয়ে গিয়েছে। এ ছাড়া নিয়েছে একটি স্কেল। যাওয়ার আগে পুলিশ তাঁকে ও তাঁর স্বামীকে শুক্রবার পূর্বস্থালী থানায় দেখা করতে বলেছে।
পূর্বস্থলীর খড়দত্তপাড়ায় হাসেম মোল্লার জুতোর দোকানে তল্লাশি চালাল এনআইএ। ছবি তুলেছেন সুদীপ ভট্টাচার্য।
আসমা বিবি জানান, গোয়েন্দারা বারবার মেয়ে-জামাই কোথায় রয়েছে, তা জানতে চেয়েছে। তাঁর দাবি, “আমরা সত্যিই জানি না, ওরা এখন কোথায় আছে।” তিনি জানান, মাস তিনেক আগে বিলকিসের প্রসব হয় এখানে। তার মাসখানেক পরে এসে জামাই বিলকিস ও তার ছেলেকে নিয়ে গিয়েছে। আসমা বিবির দাবি, “তার পর থেকে মেয়ের কোনও খবর জানি না। মঙ্গলকোটের কুলসোনায় জামাইয়ের বাড়ি আর বেলডাঙায় তার বোরখার কারখানা। জামাই যেখানে মেয়েও সেখানেই থাকবে।”
আসমা বিবির দাবি, কারও নম্বর তাঁদের কাছে নেই। এমনকী তাঁদের কোনও মোবাইল ফোনও নেই। তিনি জানান, ছেলে ফারুক আবদুল্লা শ্রমিকের কাজ করে। চেন্নাই বা কেরালা, যেখানে যখন কাজ পায়, সেখানে থাকে। তাঁরা সাতপাঁচে থাকেন না। তাঁদের বাড়িতেও বিশেষ কেঊ আসেন না। আসমা বিবি বলেন, “আজ পুলিশ এসেছে বলে এত লোক বাড়িতে ঢুকেছে।” গ্রামবাসীদের অনেকেই অবশ্য দাবি করেন, কালামের শ্বশুরবাড়ির লোকজনই খুব একটা মেলামেশা করেন না তাঁদের সঙ্গে। কালাম সেখানে এলেও প্রতিবেশী কারও সঙ্গে কথা বলতেন না।
আসমা বিবি জানান, জামাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ হলে তিনি জানতে চাইবেন, সে কী এমন কাজ করেছে যার জন্য পুলিশ তাকে খুঁজছে। তবে জামাইয়ের খোঁজ পেলে তিনি পুলিশে খবর দেবেন কি না, এ প্রশ্নের কোনও উত্তর দিতে চাননি তিনি।
এনআইএ কর্তাদের কাছে কান্না আসমা বিবির। নিজস্ব চিত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy