Advertisement
E-Paper

কেন ঘোড়া কিনলেন দেবাশিস, ধন্দ

মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপোকে চড়-ঘুষি মেরে যে যুবক রাজ্য জুড়ে আলোড়ন ফেলে দিয়েছেন, সেই দেবাশিস আচার্য তমলুকের ছেলে জানা গিয়েছিল রবিবারই। তবে গত আড়াই মাস যে তিনি কাঁথি শহরের আঠিলাগড়িতে আরএসএস কর্মী তমালপ্ললব বিশ্বাসের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন সোমবার তা জেনে হতভম্ব কাঁথিবাসী। তাঁদের বিস্ময় আরও বেড়েছে দেবাশিস ঘোড়া কিনেছেন জেনে। পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন বলেন, “ওই যুবক কেন ঘোড়া কিনেছিল খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:০৫
কাঁথিতে দেবাশিসের ভাড়া বাড়িতেই রয়েছে ঘোড়া। ছবি: সোহম গুহ

কাঁথিতে দেবাশিসের ভাড়া বাড়িতেই রয়েছে ঘোড়া। ছবি: সোহম গুহ

মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপোকে চড়-ঘুষি মেরে যে যুবক রাজ্য জুড়ে আলোড়ন ফেলে দিয়েছেন, সেই দেবাশিস আচার্য তমলুকের ছেলে জানা গিয়েছিল রবিবারই। তবে গত আড়াই মাস যে তিনি কাঁথি শহরের আঠিলাগড়িতে আরএসএস কর্মী তমালপ্ললব বিশ্বাসের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন সোমবার তা জেনে হতভম্ব কাঁথিবাসী। তাঁদের বিস্ময় আরও বেড়েছে দেবাশিস ঘোড়া কিনেছেন জেনে। পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন বলেন, “ওই যুবক কেন ঘোড়া কিনেছিল খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

কাঁথি শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে তমালবাবুর কয়েকবছর আগে কেনা একটি বাড়িতে গত নভেম্বর থেকে ভাড়াটে হিসেবে ছিলেন দেবাশিস। তমালবাবুকে ওই যুবক জানিয়েছিলেন, তিনি আধ্যাত্মিক জগতের সঙ্গে যুক্ত। তমালবাবুর বাড়িতেই রয়েছে আরএসএস-এর স্কুল সরস্বতী শিশু মন্দির। বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক ও প্রাক্তন সঙ্ঘ চালক প্রভাত নন্দ বলেন, “দিনের বেশির ভাগ সময়ই দেবাশিস ঘরে ধ্যান করত।” এ দিন জিজ্ঞাসাবাদে একই কথা কাঁথি থানার পুলিশকে জানিয়েছেন তমালবাবুও।

সোমবার সকালে কাঁথি থানার পুলিশ তমালবাবু ও দেবাশিসের সঙ্গে একই ঘরে থাকা সুখেন দাসকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তমালবাবু পুলিশকে জানান, গত নভেম্বরে দেবাশিস বিজ্ঞাপন দেখে বাড়ি ভাড়া নিতে আসেন। ভোটার পরিচয়পত্র দেখেই তিনি দেবাশিসকে বাড়ি ভাড়া দেন। দিন পনেরো আগে আবার খেজুরির বাঁশগোড়া থেকে সাড়ে ১৬ হাজার টাকা দিয়ে একটি ঘোড়া কিনে আনেন দেবাশিস। ঘোড়া রাখা নিয়ে তমালবাবু আপত্তি করলে ওই যুবক জানান, তিনি ৯ জানুয়ারি ঘর ছেড়ে দেবেন। এরই মধ্যে ঘটে যায় চড়-কাণ্ড। গত শুক্রবার দেবাশিসের সঙ্গে তমালবাবুর শেষ দেখা হয়েছিল।

দেবাশিসের সঙ্গী কাঁথি থানার রাউতারা গ্রামের বাসিন্দা সুখেন দাস জানিয়েছেন, তাঁরা দু’জনেই উত্তর ২৪ পরগনার পলিটেকনিক কলেজে পড়তেন। ঘোড়া দেখভাল করতে হবে বলেই সুখেনকে নাকি কাঁথিতে ডেকে এনেছিলেন দেবাশিস। রবিবার সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ ‘পাঁশকুড়া যাচ্ছি’ বলে কাঁথির বাড়ি থেকে দেবাশিস বেরিয়ে যান। দিনভর জেরার পরে সোমবার সন্ধ্যায় তমালবাবু ও সুখেনকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।

দেবাশিসের আচরণ, বিশেষ করে আস্ত একটা ঘোড়া কেনা নিয়ে কাঁথি জুড়ে জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। পরিচিত মুখ তমালবাবুর বাড়িতেই দেবাশিস ভাড়া থাকতেন জেনে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। কাঁথি শহরের বাসিন্দা প্রাক্তন হাইস্কুল শিক্ষক চিত্তরঞ্জন দাস বলেন, “এ দিন যখন জানলাম ইদানীং ওই ছেলেটি কাঁথিতেই বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকত, তখন শিউরে উঠি।” প্রায় লক্ষাধিক মানুষের বাস কাঁথি শহরে। কে, কোথায় ঘর ভাড়া নিয়ে থাকে তা সাধারণ মানুষের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। কিন্তু বাড়ি ভাড়া দেওয়ার আগে তো সতর্ক হওয়া উচিত? তমালবাবুর ব্যাখ্যা, তিনি দেবাশিসের ভোটার পরিচয়পত্র দেখেছিলেন। তাছাড়া, ওই যুবক নিজেকে বি-টেক পাশ বলায় ঘর ভাড়া দিতে দ্বিধা করেননি তমালবাবু।

দেবাশিস বেড়াচাঁপার পলিটেকনিক কলেজ থেকে ২০১২ সালে প্রথম শ্রেণিতে ইলেকট্রিক্যালে ডিপ্লোমা পাশ করেন। তারপর দুর্গাপুরের বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়ছেন বলে তিনি ও তাঁর পরিবার দাবি করলেও দুর্গাপুরের ওই কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, দেবাশিস আচার্য নামে তাঁদের কোনও ছাত্র নেই।

কাঁথি পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলার তাপস বেরা জানান, তাঁর ওয়ার্ডে আর এসএস কর্মী তমালবাবু বাড়ি কিনেছেন এবং সেখানে একটি আরএসএস-এর স্কুল চলে বলে তিনি জানেন। ওই বাড়িতে ভাড়াটে রয়েছে বলেও তাঁর জানা আছে। কিন্তু কে দেবাশিস, কেনই বা তিনি বাড়ি ভাড়া ছিলেন, ওই যুবক কী করেন, এ সবই তাপসবাবুর অজানা। তমালবাবুর যে বাড়িতে দেবাশিস ভাড়া থাকতেন, তার ঠিক উল্টো দিকে বাড়ি মাজেদ খান ও লালয়া বিবির। তাঁরা জানান, দেবাশিসকে এলাকায় দেখা যেত না। তবে সম্প্রতি সে একটি ঘোড়া কিনেছিল। তবে দেবাশিসকে ঘোড়ায় চড়তে দেখেননি কেউই।

যে ছেলে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপোর গালে চড় কষিয়েছে, সে গত কয়েক মাস কাঁথি শহরে ছিল যেতে বিস্মিত দক্ষিণ কাঁথির তৃণমূল বিধায়ক দিব্যেন্দু অধিকারীও। তিনি বলেন, “এটা খুবই দুঃখের যে দেবাশিসের মতো একজন হীন রুচির মানুষ কাঁথির মতো শান্তির শহরে আশ্রয় নিয়েছিল।” ৯ নম্বর ওয়ার্ডেই থকেন কাঁথির প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক ও নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটির সদস্য শৈলজা দাস। তাঁর কথায়, “ওই যুবক কাঁথিতেই ভাড়া নিয়ে থাকত। কাদের সঙ্গে তার ওঠাবসা ছিল জানি না। তবে রবিবার চণ্ডীপুরে যে ঘটনা সে ঘটিয়েছে, তার নিন্দা জানানোর ভাষা নেই।”

debashis acharya tamluk abhishek banerjee slapped on stage slapped
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy