Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

কোন্দলে মাটি কংগ্রেসের বৈঠক

লোকসভা ভোটে সারা দেশে দল বেহাল হলেও, বাংলায় তাঁদের ফল কিছুটা স্বস্তিদায়ক বলে মনে করেন রাজ্য কংগ্রেস নেতারা। সেই ফলের ভিত্তিতে দলের সাংগঠনিক শক্তিকে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে এবং ভোট-পরবর্তী রাজনৈতিক পর্যালোচনা করতে সোমবার বিধানভবনে সাংসদ, বিধায়ক, দলীয় নেতৃত্বকে নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। সেই বৈঠকে রাজ্য কংগ্রেস আগামী ২০১৬-র বিধানসভা ভোটে সংগঠনকে আরও মজবুত করার অক্সিজেন নেবে বলেই নেতাদের অনেকে আশা করেছিলেন। কিন্তু বৈঠকের শুরুতেই গোষ্ঠীকোন্দল গড়ায় হাতাহাতিতে।

কংগ্রেস নেতৃত্বকে অবশ্য খোশমেজাজেই দেখা গেল।  নিজস্ব চিত্র

কংগ্রেস নেতৃত্বকে অবশ্য খোশমেজাজেই দেখা গেল। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৪ ০৩:৩৩
Share: Save:

লোকসভা ভোটে সারা দেশে দল বেহাল হলেও, বাংলায় তাঁদের ফল কিছুটা স্বস্তিদায়ক বলে মনে করেন রাজ্য কংগ্রেস নেতারা। সেই ফলের ভিত্তিতে দলের সাংগঠনিক শক্তিকে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে এবং ভোট-পরবর্তী রাজনৈতিক পর্যালোচনা করতে সোমবার বিধানভবনে সাংসদ, বিধায়ক, দলীয় নেতৃত্বকে নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। সেই বৈঠকে রাজ্য কংগ্রেস আগামী ২০১৬-র বিধানসভা ভোটে সংগঠনকে আরও মজবুত করার অক্সিজেন নেবে বলেই নেতাদের অনেকে আশা করেছিলেন। কিন্তু বৈঠকের শুরুতেই গোষ্ঠীকোন্দল গড়ায় হাতাহাতিতে। পরে শীর্ষ নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

ভোটের পরেই অধীর প্রদেশ কংগ্রেস কমিটি-সহ দলের সব কমিটি ভেঙে দেন। এ দিন গোলমালের সূত্রপাতও সেই কমিটি ভাঙা নিয়েই। অধীর যে ভাবে সব কমিটি ভেঙে দিয়েছেন, তার নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন নদিয়ার প্রাক্তন সভাপতি শঙ্কর সিংহ। দলের মধ্যে অধীর বিশৃঙ্খলা এবং পুরনো নেতা-কর্মীদের হেয় করার চেষ্টা করছেন বলেও সরাসরি অভিযোগ তোলেন তিনি। শঙ্করবাবুর পরেই একই সুরে কমিটি ভাঙার প্রসঙ্গ তোলেন তাঁরই পাশে বসা দলের সাধারণ সম্পাদক কনক দেবনাথ। লোকসভা ভোটের আগে অধীর প্রচার কমিটির সদস্যদের নিয়ে একটাও বৈঠক করেননি বলেও অভিযোগ তোলেন কনকবাবু। সভাপতির কাজের সমালোচনা হচ্ছে দেখে কংগ্রেস কাউন্সিলর সন্তোষ পাঠক এবং দলের সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তী কনকবাবুর মাইক ছিনিয়ে নেন। তাঁর সঙ্গে দু’জনেই হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন।

বৈঠকের পরে এই বিষয়ে প্রশ্নের জবাব কার্যত এড়িয়ে গিয়েছেন অধীর। তাঁর কথায়,“কিছুই ঘটেনি। আলোচনার মধ্যে একজনের কোনও বিষয়ে বিরোধিতা ছিল। তা মিটে গিয়েছে। ক্ষমাও চেয়ে নিয়েছে।” কনকবাবুই জানান, সন্তোষবাবু ঘটনার অব্যবহিত পরে চলে গেলেও পরে বৈঠকেই দুঃখপ্রকাশ ও ক্ষমা চান অমিতাভ। হাতাহাতির নিন্দা করেন বৈঠকে উপস্থিত অধিকাংশ নেতাই। তবে কমিটি ভাঙা নিয়ে তিনি যে অসন্তুষ্ট, বৈঠকের পরে তা জানিয়ে শঙ্করবাবু বলেন, “কমিটি ভেঙে দেওয়া ঠিক হয়েছে কি না, সেটাই সভাপতির কাছে জানতে চেয়েছি। তা হলে আজ আমাদের ডাকার দরকার কী ছিল, সেটাই বলেছি!” কনকবাবু অবশ্য জানান, দলীয় বৈঠকে তাঁকে যেভাবে হেনস্থা হতে হয়েছে, তা বিশদে সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী ও সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধীকে তিনি জানাবেন।

হাতাহাতি পর্ব মেটার পর, প্রায় সওয়া চার ঘণ্টার বৈঠকে দলকে পুনরুজ্জীবনের দাওয়াই দেওয়ার চেষ্টা করেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। জনসংযোগ বাড়িয়ে এ বার থেকে তৃণমূল, সিপিএমের পাশাপাশি বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, “শুধুমাত্র বিরোধিতা করলে হবে না, তথ্যনির্ভর বিরোধিতা করলে তবেই রাজনৈতিক সুফল পাবে কংগ্রেস।”

বিধানসভা বা পুরভোটকে নিশানায় রেখেও এলাকায় স্কুলের ভোটেও কংগ্রেসের অংশ নেওয়া উচিত বলে অধীর বৈঠকে জানিয়েছেন অধীর। দলীয় এক নেতার কথায়, “এলাকায় এলাকায় কংগ্রেস সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির প্রেক্ষিতেই অধীর স্কুল ভোটে অংশ নেওয়ার কথা বলেছেন।” আগামী বিধানসভা ভোটে সাংগঠনিক কাজের দক্ষতাই যে প্রার্থী বাছাইয়ের মাপকাঠি হবে, তার ইঙ্গিত বৈঠকে দিয়েছেন অধীর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE