Advertisement
০৮ মে ২০২৪

কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হচ্ছে পর্ষদ সভাপতিকে

বিতর্কিত মন্তব্য করার জন্য রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষক পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যকে কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠানো হচ্ছে। তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআরও করা হবে বলে নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছেন দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সুতাহাটা ও কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:৪৮
Share: Save:

বিতর্কিত মন্তব্য করার জন্য রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষক পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যকে কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠানো হচ্ছে। তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআরও করা হবে বলে নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছেন দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক।

শুক্রবার জেলার বালুরঘাটে প্রাথমিক শিক্ষকদের সভায় মানিকবাবুর একটি মন্তব্যকে কেন্দ্র করে রাজ্য জুড়েই বিতর্ক শুরু হয়েছে। সে দিন সেখানে তিনি বলেছিলেন, “প্রাথমিকে তৃণমূলের ছেলেমেয়েদের চাকরি হবে। তার সঙ্গে অন্যদেরও হবে।’’ এরপরে রবিবার মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে জেলাশাসকদের বৈঠক ছিল। সেই বৈঠকে দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক তাপস চৌধুরীকে জিজ্ঞাসা করা হয়, মানিকবাবুর ওই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে জেলার নির্বাচন আধিকারিক তাপসবাবু কোনও ব্যবস্থা নিয়েছেন কি না। তাপসবাবু তখন জানান, মানিকবাবুকে কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠানো হচ্ছে। এফআইআরও করা হবে। মানিকবাবুর ওই মন্তব্য নির্বাচনী নিয়মবিরুদ্ধ বলে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে কংগ্রেস।

মানিকবাবুর অবশ্য দাবি, তাঁর বক্তব্য ‘বিকৃত করা হয়েছে।’ রবিবার পূর্ব মেদিনীপুরের সুতাহাটায় এসে মানিকবাবু বলেন, “আমি বলেছি সিপিএম বা তৃণমূলের যে কোনও সমর্থক চাকরি পেতে পারেন। তবে তা নিরপেক্ষতা ও মেধার ভিত্তিতে। আমার বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে।” তবে বালুরঘাটের কর্মিসভায় তিনি যা বলেছিলেন, তার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহের চেষ্টা করছে স্থানীয় প্রশাসন। শুক্রবার সন্ধ্যায় বালুরঘাটে তৃণমূল প্রার্থী অর্পিতা ঘোষকে নিয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষকদের ওই সভায় মানিকবাবু বলেছিলেন, ‘বাম আমলে তৃণমূলের কারও চাকরি হয়নি। ওই নিয়ম আমরা ভেঙে দিয়েছি। তৃণমূলের ছেলেমেয়েদের চাকরি হবে। আজ হবে, আগামী কাল হবে, পরশু হবে। তার সঙ্গে অন্যদেরও চাকরি হবে।’ এর জন্য ‘জেলে যেতে হয় যাব’ বলে মানিকবাবু ঘোষণা করেন। এ দিন সুতাহাটায় পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল শিক্ষা সেলের ষষ্ঠ বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিতে এসেছিলেন মানিকবাবু। ওই সভায় উপস্থিত শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুও বলেন, “কেউ চাকরি পেতে পারেন। তাঁর রাজনৈতিক পরিচয়ও থাকতে পারে। কিন্তু সেটা আসল পরিচয় নয়। মানিকবাবুরা দেখিয়েছেন, যে কোনও দল নির্বিশেষে চাকরি হয়। তা হয় মেধা ও যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে।”

বাম আমলে চাকরির ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা বজায় রাখা হত না বলেও এ দিন অভিযোগ করেছেন ব্রাত্য। তিনি বলেন, “বাম জমানায় সিপিএম নেতা-কর্মীরা কী ভাবে চাকরি পেয়েছেন, বিধানসভায় দাঁড়িয়ে তা দেখাব। সিপিএমের বিধায়ক, মন্ত্রী, জেলা নেতাদের বাড়ির লোক ও আত্মীয়দের কে কে চাকরি পেয়েছেন, তার তালিকা তৈরি করেছি।” যুব তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি এবং লোকসভা ভোটের প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী আবার এক ধাপ এগিয়ে অভিযোগ করেন, “বাম আমলে তৃণমূল সমর্থকদের নাম মৌখিক পরীক্ষার সময় বার বার কেটে দেওয়া হয়েছে। আমাদের সময় কাউকে যদি মৌখিক পরীক্ষায় ৫ নম্বর করে দেওয়া হয়, তা হলে মহাভারত অশুদ্ধ হয় না।” শুভেন্দুবাবু আরও বলেন, “নন্দীগ্রামের স্কুলে হার্মাদ শিবির তৈরি করেছিল সিপিএম। মিড ডে মিলের চাল খেয়েছিল হার্মাদরা।” তবে প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য এ দিন বলেন, “ব্রাত্য ভুল করছেন। বামেরা ভুল করেছিল বলেই তো তাদের শাসনের অবসান হয়েছে। আজকের সরকারও কেন সেই একই ভুল করবে!”

বাম জমানায় শুধু বাম সমর্থকদেরই চাকরি হয়েছিল, এমন অভিযোগ প্রত্যাশিত ভাবেই মানতে নারাজ সিপিএম নেতৃত্ব। পাশাপাশিই তাঁদের প্রশ্ন, তৃণমূলের সমর্থক কেউ চাকরি পেলে যদি ‘মেধা ও যোগ্যতা’র ভিত্তিতে হয়, তা হলে একই যুক্তিতে বাম জমানায় বাম সমর্থকদের রাজনৈতিক পরিচয়ও তো গুরুত্ব পেতে পারে না! সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুজন চক্রবর্তীর অভিযোগ, “শিক্ষিত, তরুণ ছেলেমেয়েদের পেটে লাথি মেরে রাজ্য সরকার যে দলতন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে, প্রথমে মানিকবাবু এবং তার পরে ব্রাত্যবাবুর বক্তব্যেই তা প্রমাণিত!” যদিও প্রাথমিকে যাঁরা চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের মেধা নিয়েই এ দিন প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। রাজ্যে গণতন্ত্রের বদলে দলতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে বলে গোঘাটের এক সভায় তিনি বর্তমান সরকারের সমালোচনা করেন। সিপিএমের আর এক নেতা শ্যামল চক্রবর্তীর বক্তব্য, “আমরা ১৮ লক্ষ তরুণ-তরুণীকে বারবার বলছি, সরকার আপনাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। আপনারাও সেই মতো ভোটদানের ক্ষমতা প্রয়োগ করুন!”

তবে বালুরঘাটের সভায় তাঁর মন্তব্যে নির্বাচনী বিধিভঙ্গ হয়েছে বলে মনে করেন না মানিকবাবু। তাঁর ব্যাখ্যা, “আমি ভোটে প্রার্থী নই। আর বালুরঘাটের সভায় গিয়েছিলাম এক জন অধ্যাপক হিসাবে।”

নির্বাচনী বিধিভঙ্গের প্রশ্নে ব্রাত্যবাবুর বক্তব্য, “নির্বাচনী বিধিভঙ্গ হয়েছে কি না, সে কথা বলবে নির্বাচন কমিশন। তবে পঞ্চায়েত এবং পুরভোটে মানিকবাবু আমার সঙ্গে অন্তত ১০টা জনসভায় বক্তৃতা করেছেন। তখন যদি নির্বাচনী বিধিভঙ্গ হয়ে থাকে, তা হলে এখনও ভঙ্গ হয়েছে। আর তখন তা না হয়ে থাকলে, এখন হবে কেন?”

দক্ষিণ দিনাজপুরের সহকারী নির্বাচন আধিকারিক তথা বালুরঘাটের মহকুমাশাসক সন্দীপ দত্ত বলেন, “নির্বাচন কমিশন থেকে বিষয়ে এখনও আমরা কোনও নির্দেশ পাইনি। তবে ওই কর্মিসভার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে রাখা হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

manik bhattacharya show cause
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE