প্রবল ভর্ৎসনা, এমনকী খোদ পুলিশকে জেলে পোরার হুঁশিয়ারি দিয়ে আদালত দশ দিন সময় বেঁধে দিয়েছিল। সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও নিখোঁজ সেই কিশোরীর কোনও হদিস কিন্তু পুলিশ বুধবার আদালতকে দিতে পারল না। বরং ঘটনায় জড়িত সন্দেহে মেয়েটির কিছু আত্মীয়ের দিকেই আঙুল তুলল। আদালত পুলিশকে আরও দু’সপ্তাহ সময় দিয়েছে তাকে খুঁজে বার করার জন্য।
তিন মাস আগে কলকাতার পাতিপুকুরের বাসিন্দা ওই কিশোরী নিখোঁজ হয়ে গিয়েছে। আত্মীয়দের দাবি, তাকে অপহরণ করা হয়েছে। সেই মামলার তদন্তে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে হাইকোর্টে মামলা করেছেন তাঁরা। গত ৪ আগস্ট যার শুনানিতে ক্ষুব্ধ হাইকোর্ট বলেছিল, ১৩ অগস্ট মেয়েটিকে আদালতে হাজির করাতে না-পারলে উঁচু থেকে নিচুতলার পুলিশকে জেলে পোরা হবে। এমনকী, সরকারি কৌঁসুলি সে দিন আদালতকে পুলিশি রিপোর্ট দেখাতে গেলে বিচারপতি নাদিরা পাথেরিয়া মন্তব্য করছিলেন, “রিপোর্ট গঙ্গায় ছুড়ে ফেলে দিন।”
বিচারপতির নির্ধারিত চরমসীমা এ দিন শেষ হয়েছে। এবং পুলিশ মেয়েটিকে আদালতে হাজির করাতে পারেনি। পরিবর্তে ফের হাজির করেছে তদন্ত-রিপোর্ট। রিপোর্টের দাবি: কিশোরীটির অপহরণে তারই কিছু আত্মীয়দের হাত রয়েছে। বিচারপতি অবশ্য এ দিন আর পুলিশকে ভর্ৎসনা করেননি। তদন্তকারীদের তিনি আরও ১৫ দিন সময় দিয়েছেন।
পাতিপুকুরের মেয়েটি মুর্শিদাবাদের কান্দিতে মামার বাড়ি বেড়াতে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে যায়। মামা প্রশান্ত দলুই পুলিশকে জানিয়েছেন, তাঁর ভাগ্নিকে শেষ দেখা গিয়েছিল গত ৬ মে বিকেল তিনটে নাগাদ, পড়শি অসীম দলুইয়ের বাড়িতে। ওই রাতেই তিনি কান্দি থানায় নিখোঁজ-ডায়েরি করেন। পরে বহরমপুর থানায় রুজু করেন অপহরণের নালিশ, যাতে অভিযুক্ত হিসেবে রয়েছে অসীম দলুই, সন্তু দাস, পরেশ দলুই ও অজয় দলুইয়ের নাম। পুলিশ জানিয়েছে, প্রশান্তবাবুর অভিযোগের ভিত্তিতে মে মাসে অসীম, সন্তু ও পরেশকে গ্রেফতার করা হয়। তবে মেয়েটির খোঁজ মেলেনি। অভিযুক্তেরা পরে নিম্ন আদালতে জামিন পেয়ে যায়।
এই পরিস্থিতিতে প্রশান্তবাবু পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ এনে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। তাঁর আর্জি শুনেই ৪ তারিখে বিচারপতি পাথেরিয়া পুলিশকে জেলে পোরার কথা বলেছিলেন। এ দিন মামলায় কী হল?
এ দিন শুনানির শুরুতে বিচারপতি পাথেরিয়া সরকারি কৌঁসুলি (গভর্নমেন্ট প্লিডার, সংক্ষেপে জিপি)-র কাছে জানতে চান, মেয়েটি কোথায়? জিপি অভ্রতোষ মজুমদার জানান, সরকার ইতিমধ্যে কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ করেছে, দেশের তিন শহরে তল্লাশি চলছে। শুনে বিচারপতির প্রশ্ন, “মেয়েটিকে কখন আদালতে হাজির করা হবে?” জিপি’র জবাব, “মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার একটা রিপোর্ট দিয়েছেন। আপনি দয়া করে দেখুন।” বিচারপতি এ বার বলেন, “রিপোর্ট দেখে কী করব! জুন মাসে আবেদনকারী পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে রিট পিটিশন করেছেন। আপনারা দু’মাস সময় পেয়েও ওকে উদ্ধার করতে পারলেন না!”
এমতাবস্থায় জিপি আবার বিচারপতিকে অনুরোধ করেন এসপি’র রিপোর্ট পড়ার জন্য। বিচারপতি রিপোর্ট পড়ে প্রশান্তবাবুর কৌঁসুলি সোমনাথ অধিকারীকে জিজ্ঞাসা করেন, “আপনি জানেন, মেয়েটির বাবা (কমল সিংহ) কী করেন?” সোমনাথবাবু জানান, কমলবাবুর জুতোর দোকান আছে হাতিবাগানে। বিচারপতি বলেন, “মেয়েটির বাবা সম্পর্কে পুলিশ কিন্তু ভাল রিপোর্ট দেয়নি। বলেছে, আপনার মক্কেলের আত্মীয়েরাই অপহরণে জড়িত!”
এ বার কমলবাবুকে তলব করেন বিচারপতি। কমলবাবু তাঁর সামনে হাজির হন। বিচারপতি পাথেরিয়া টেবিলের মাইক্রোফোন বন্ধ করে একান্তে কমলবাবুর সঙ্গে কথা বলেন মিনিট পাঁচেক। শেষে সোমনাথবাবুকে নির্দেশ দেন, “বেঙ্গালুরু, মুম্বই, রাজস্থান ও মুর্শিদাবাদে মেয়েটির যে সব আত্মীয় রয়েছেন, সকলের নাম-ঠিকানা পুলিশকে জানিয়ে দিন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy