Advertisement
E-Paper

খোঁজ নেই, তাই আলো জ্বলেনি ‘গুরু’র পাড়ায়

রুদ্রনাথের পথে তথাগত জানা। বন্ধুর অ্যালবাম থেকে। আলোর উৎসব সর্বত্র। কিন্তু দীপাবলিতে কার্যত নিষ্প্রদীপই রইল বৈদ্যবাটির কামারপাড়া। গুরুর কোনও খবর যে এখনও এল না! একে একে কেটে গেল ১২টা দিন। নেপালে ট্রেকিংয়ে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন কামারপাড়ার তথাগত জানা। যাঁকে ‘গুরু’ নামেই বেশি ডাকেন আত্মীয়-বন্ধু-পড়শিরা।

প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:০০

রুদ্রনাথের পথে তথাগত জানা। বন্ধুর অ্যালবাম থেকে।

আলোর উৎসব সর্বত্র। কিন্তু দীপাবলিতে কার্যত নিষ্প্রদীপই রইল বৈদ্যবাটির কামারপাড়া।

গুরুর কোনও খবর যে এখনও এল না! একে একে কেটে গেল ১২টা দিন।

নেপালে ট্রেকিংয়ে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন কামারপাড়ার তথাগত জানা। যাঁকে ‘গুরু’ নামেই বেশি ডাকেন আত্মীয়-বন্ধু-পড়শিরা। গত ১৪ অক্টোবর সেই গুরুর নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার খবর জানার পর থেকে তাঁরা তাঁকে খুঁজে চলেছেন। ট্রেকিংয়ে ওস্তাদ গুরু যে তুষার-ঝড়ের কবলে পড়ে নিখোঁজ হয়ে যাবেন, তা যে কেউই এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না। এমনকী, গুরুর একরত্তি মেয়ে রচিস্না পর্যন্ত থেকে থেকেই বলে উঠছে, ‘বাবা ঠিক বরফ ঝেড়ে ফিরে আসবে’।

প্রতি বার ট্রেকিং থেকে ফেরার পরে তথাগতকে ঘিরেই উৎসব শুরু হত পাড়ায়। এ বাড়ি-ও বাড়ি, এই প্যান্ডেলে-ওই প্যান্ডেলে নিজের তোলা ট্রেকিংয়ের ছবি প্রোজেক্টরের মাধ্যমে দেখাতেন তথাগত। ভিড় হত আত্মীয়-বন্ধু-পড়শিদের। হইচই, খাওয়া-দাওয়া মিলিয়ে যেন এক উৎসব। সেই সুরটাই এ বার যেন কেটে গিয়েছে কামারপাড়ায়। তথাগত এখনও ফেরেননি। প্রতীক্ষার সঙ্গে মিশেছে উৎকণ্ঠা। তাই দীপাবলির রাতে পাড়ার অনেক বাড়িতেই নেই আলোর রোশনাই। জ্বলেনি আতসবাজি।

সন্দাকফু, বরাসু পাস, শতপন্থ, ভুইন্দার খাল, পারং লা, বাঘিনি বেস ক্যাম্প হিমালয়ের একের পর এক রুটে ট্রেক করেছেন তথাগত। তাঁর পরিবারের লোকজনের হিসেবে, এ বারের অন্নপূর্ণা অঞ্চলে ট্রেকিংটা ছিল ১৯ বা ২০ তম। দুর্গম পাহাড়ি পথে ট্রেকিংয়ে পোক্ত ছেলেটা আপাত সহজ রাস্তায় এ বার কী ভাবে হারিয়ে গেল, ভেবে কুলকিনারা পাচ্ছেন না তাঁরা। তাই অন্যান্যবার দীপাবলির রাতে যে বাড়ির ছাদে গভীর রাত পর্যন্ত আতসবাজি পুড়ত, এ বার সেই জানাবাড়িতে একটিও বাজি পোড়েনি।

“আমাদের সবাইকে নিয়ে গুরুই কালীপুজোয় রাত পর্যন্ত বাজি পোড়াত। ভীষণ হাসিখুশি, হুল্লোড়বাজ ছিল তো! এ বার ও নেই। কে আর বাজি পোড়াবে? একটা জলজ্যান্ত ছেলেকে এত দিনেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, মানা যায়?” উৎকণ্ঠা প্রবল তথাগতর বড় বৌদি জ্যোৎস্নাদেবীর।

বছর চল্লিশের তথাগত চার ভাইয়ের মধ্যে ছোট। গোটা পরিবারই পাহাড় ভালবাসে। সকলকে উৎসাহিত করে এসেছেন তথাগতই। এ বার তথাগত যখন ট্রেকিং শুরু করেন, তখন তাঁর বড়দা গৌতমবাবু স্ত্রী জ্যোৎস্নাদেবীকে নিয়ে নেপালেই ছিলেন। কাঠমান্ডুতে ভাইয়ের নিখোঁজ হওয়ার খবর পেয়ে গৌতমবাবু অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁরা ফিরে আসেন। মঙ্গলবার তথাগতর মেজদা সিদ্ধার্থও ভাইয়ের খোঁজে নেপাল যান। তাঁর স্ত্রী মিতাদেবী বলেন, “আর পারা যাচ্ছে না। ভাল হোক বা মন্দ একটা খবর আসুক।” তথাগতর স্ত্রী মৌসুমীও তাই চান। অশীতিপর মা তারামণিদেবী সকাল হলেই খবরের কাগজ নিয়ে বসে পড়ছেন।

ক্যামেরা অন্ত প্রাণ তথাগতর ছবি তোলাই ছিল পেশা এবং নেশা। বেশি সাহসে ভর করে দুর্যোগের ছবি তুলতে গিয়েই কি ছেলেটা বিপদে পড়ল? নাকি অন্য কাউকে বাঁচাতে গিয়ে কিছু হয়েছে? হরেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে জানাবাড়িতে। ওই বাড়ির সামনে গাড়ি থামার শব্দ পেলেই বন্ধুরা কৌতূহলে এগিয়ে আসছেন। পড়শি রঞ্জন শূর বলছিলেন, “গুরু ট্রেকিং থেকে ফেরা মানে সাড়া পড়ে যেত। এ বারও অনেক ছবি দেখব বলে ভেবেছিলাম। জানি না কী হবে!” সুদীপ্ত হালদার নামে তথাগতর এক বন্ধুর কথায়, “বেশ কয়েকটা ট্রেকিংয়ে গিয়েছি গুরুর সঙ্গে। ওর খোঁজ না মেলা পর্যন্ত কিছুই ভাল লাগছে না।”

আলোর উৎসবে মন নেই কামারপাড়ার।

nepal blizzard tathagata jana prakash pal baidyabati
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy