Advertisement
E-Paper

গৌতমের পর সুজন, দরজায় লটকে দিয়ে আসা হল নোটিস

প্রাক্তন মন্ত্রীর পরে এ বার যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী। সারদা-তদন্তে বুধবার বিধাননগর কমিশনারেটের নোটিস পৌঁছল সুজন চক্রবর্তীর বাড়িতে। মঙ্গলবার রাতে গৌতমবাবু বাড়ি না থাকায় ঘুরে এসেছিল পুলিশ। এ দিন সুজনবাবুও বাড়ি ছিলেন না। এক বার ঘুরে আসার পরে তাঁর দরজায় নোটিস লটকে দেওয়া হয়। ঘটনাচক্রে, গৌতম দেব এবং সুজনবাবু দু’জনই সিপিএমের জেলা সম্পাদক। প্রথম জন উত্তর ২৪ পরগনার, দ্বিতীয় জন দক্ষিণের। দুই জেলাতেই ভোট এখনও বাকি। প্রচার যখন তুঙ্গে, সেই সময়ে পুলিশের এমন নোটিসে রাজনৈতিক অভিসন্ধিই দেখছেন সিপিএম নেতৃত্ব।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৪ ০৪:৩৮
এই সেই নোটিস। দেখাচ্ছেন সুজন।   ছবি:শশাঙ্ক মণ্ডল।

এই সেই নোটিস। দেখাচ্ছেন সুজন। ছবি:শশাঙ্ক মণ্ডল।

প্রাক্তন মন্ত্রীর পরে এ বার যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী। সারদা-তদন্তে বুধবার বিধাননগর কমিশনারেটের নোটিস পৌঁছল সুজন চক্রবর্তীর বাড়িতে। মঙ্গলবার রাতে গৌতমবাবু বাড়ি না থাকায় ঘুরে এসেছিল পুলিশ। এ দিন সুজনবাবুও বাড়ি ছিলেন না। এক বার ঘুরে আসার পরে তাঁর দরজায় নোটিস লটকে দেওয়া হয়। ঘটনাচক্রে, গৌতম দেব এবং সুজনবাবু দু’জনই সিপিএমের জেলা সম্পাদক। প্রথম জন উত্তর ২৪ পরগনার, দ্বিতীয় জন দক্ষিণের। দুই জেলাতেই ভোট এখনও বাকি। প্রচার যখন তুঙ্গে, সেই সময়ে পুলিশের এমন নোটিসে রাজনৈতিক অভিসন্ধিই দেখছেন সিপিএম নেতৃত্ব।

পুলিশের নোটিস মেনে ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানায় বুধবার দুপুরে অবশ্য হাজিরা দিতে যাননি গৌতমবাবু। আইনজীবী মারফত পুলিশকে জানিয়ে দিয়েছেন, ভোটের কাজে ব্যস্ত থাকায় আপাতত হাজির হতে পারছেন না। ভোট মিটলে তার পরে দেখা যাবে। একই কথা বলেছেন সুজনবাবুও। তাঁর বক্তব্য, “যে মামলায় নোটিস পাঠানো হয়েছে, সেটি শুরু হয়েছিল ৬ মে, ২০১৩। এক বছর কি নাকে তেল দিয়ে ঘুমোচ্ছিলেন? এখন ভোটের সময় হয়রান করার জন্যই নোটিস পাঠানো হয়েছে।” সুজনবাবুর আরও মন্তব্য, “পুলিশের যদি অতই জরুরি হয়ে থাকে, তা হলে তারা আমার কাছে এসে প্রশ্ন করুক!”

আলিমুদ্দিনে সাংবাদিক সম্মেলন করে মঙ্গলবার বিকেলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি বিক্রির হিসেবে গরমিল এবং তাঁর পরিবারের লোকজনের অল্প সময়ে বিপুল সম্পত্তি সংক্রান্ত কিছু অভিযোগ করেছিলেন গৌতমবাবু। দেখিয়েছিলেন বেশ কিছু নথি। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাঁর সল্টলেকের বাড়িতে পুলিশের নোটিস পৌঁছয় সারদার একটি মামলায় হাজিরা দেওয়ার জন্য তলব করে। সেই একই মামলায় এ দিন নোটিস আটকে দেওয়া হয়েছে সুজনবাবুর বাড়িতেও। গৌতমবাবু এ দিন বলেন, “কমিশনের কাছে ভোটের প্রচারকদের যে তালিকা আমাদের দল দিয়েছে, তাতে আমার নাম আছে। সুতরাং, কমিশন আমাকে প্রচারক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। প্রচারের কাজ ছেড়ে এখন পুলিশের কাছে যাওয়া কী করে সম্ভব?”

সল্টলেকের বাড়ি থেকে বেরিয়ে এ দিন সকালে আলিমুদ্দিনে গিয়েছিলেন গৌতমবাবু। সেখানে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, দলের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুর সঙ্গে গোটা বিষয়টি নিয়ে তাঁর আলোচনা হয়। মুখ্যমন্ত্রীকে জড়িয়ে অভিযোগ এবং তার পরেই পুলিশি নোটিসের ঘটনা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে পরে বুদ্ধবাবু বলেন, “গোটাটাই শুনেছি। দেখা যাক, কী হয়!” বিমানবাবু বলেন, “মুখ খুললেই পুলিশ! সাংবাদিক সম্মেলনে তথ্য দিল আর রাতে বাড়িতে পুলিশ চলে গেল! এটা কোন গণতন্ত্র?” আর দুই জেলা সম্পাদককে নোটিস দেওয়ার ঘটনাকে ‘পাগলের মতো আচরণ’ বলে মন্তব্য করেছেন বিরোধী দলনেতা সূর্যবাবু। তাঁর মতে, ‘এ সব ছিঁচকে কাজ’ করে কোনও লাভ হবে না!

শাসক দলের তরফে অবশ্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে আইনগত প্রক্রিয়ার কথাই বলা হয়েছে। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের

প্রশ্ন, “পুরনো মামলা থাকলে কী আর করা যাবে?”

গত বছর পঞ্চায়েত ভোটের আগেও সারদা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করতে সুজনবাবুকে নোটিস পাঠিয়েছিল বিধাননগর পুলিশ। সে বারেও নোটিস পৌঁছনোর সময়ে সুজনবাবু বাড়ি ছিলেন না। তাঁর ভাইপো পুলিশের কাছ থেকে নোটিস নিয়েছিলেন। যদিও সেই নোটিসের ভিত্তিতে সুজনবাবু পুলিশের সামনে হাজির হননি। গত এক বছরে পুলিশও আর তাঁকে ডাকেনি। ঘটনাচক্রে, এ দিন নোটিস পৌঁছনোর সময়েও সুজনবাবু বাড়িতে অনুপস্থিত ছিলেন। তবে এ বার তাঁর কোনও পরিজন নোটিস গ্রহণ করেনি।

সিপিএম সূত্রের খবর, এ দিন বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ বিধাননগর কমিশনারেটের এক অফিসার নোটিস নিয়ে সুজনবাবুর চম্পাহাটির তেমাথা মোড়ের বাড়িতে যান। সুজনবাবু বাড়ি নেই শুনে ফিরে যান ওই অফিসার। ঘণ্টাখানেক পরে ফের ওই পুলিশ অফিসার সুজনবাবুর বাড়িতে যান। তখনও তিনি বাড়ি না-থাকায় সুজনবাবুর বাড়ির দরজায় নোটিস সেঁটে দিয়ে যায় পুলিশ। তাতে বলা হয়েছে, আজ, বৃহস্পতিবার বেলা দু’টোয় ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানায় হাজিরা দিতে বলা হয়েছে।

বাড়ি ফিরে দেওয়ালে পুলিশের নোটিস ঝুলিয়ে দিয়ে যাওয়ায় কথা শুনে ক্ষুব্ধ সুজনবাবু। তাঁর বক্তব্য, “আমি কি দুষ্কৃতী? আচমকা এত জরুরি হয়ে গেল যে, আর এক ঘণ্টাও অপেক্ষা করতে পারল না। এটা অসভ্যতা! বোঝাই যাচ্ছে, তৃণমূলের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে!”

তলব-কাহন। সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন...

গত এক বছরে তাঁকে না ডেকে পাঠানো নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন যাদবপুরের সিপিএম প্রার্থী। তিনি বলছেন, “এক বছর ধরে তদন্তের নামে শুধু সময় নষ্ট হয়েছে। এর আগেও পঞ্চায়েত ভোটের সময় শুনেছিলাম, কোনও একটা মামলায় আমাকে নোটিস দেওয়া হবে। আর এখন আমি নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছি। তাই আচমকাই এই নোটিস ধরিয়ে দিয়ে চলে গেল!”

সারদা তদন্ত নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে তোপ দাগার সময়ে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন সিপিএমের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক। বলেছেন, “এই মামলার তদন্তকারী অফিসার এত দিন কোনও কাজই করেননি! এখন ইডি ধরাধরি করছে বলে ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করছেন।”

এই প্রসঙ্গে শাসক দলের সঙ্গে পুলিশের যোগসাজশ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন যাদবপুরের বাম প্রার্থী। “রাজনৈতিক হিংসা দল করবে, কিন্তু পুলিশ কেন করবে! তৃণমূলের হয়ে পুলিশ কখনও কাজ করতে পারে না” বলেন তিনি। একই সঙ্গে সুজনবাবু জানান, তিনি মামলার পথে যেতে পারেন।

একই সঙ্গে এ দিন মুখ্যমন্ত্রীকেও বিঁধেছেন সুজনবাবু। তিনি জানান, সোনারপুরে মুখ্যমন্ত্রী সভা করতে গিয়ে দেখেন, সাধারণ মানুষের জমায়েতের থেকে পুলিশের সংখ্যা বেশি। “মনে হয়, তখনই আমাকে ফাঁসানোর কথা তাঁর মাথায় এসেছিল!” বলেছেন সুজনবাবু।

গৌতমবাবু এ দিন অবশ্য নিজের মেজাজেই ছিলেন। তাঁর বাড়ি এবং ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানায় সংবাদমাধ্যমের ভিড় ছিল। থানায় হাজিরা নিয়ে বারবার প্রশ্ন হওয়ায় রসিকতার সুরেই সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিকে গৌতমবাবু বলেন, “ডেকেছে আমাকে। তোমাকে তো ডাকেনি! তুমি এত উদগ্রীব হয়ো না!” ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছেন, মঙ্গলবার থেকে গোটা পর্বটাই তিনি উপভোগ করছেন। আগের বয়স এবং শরীর জুতে থাকলে প্রতিবাদও আরও জোরালো হতো, এমন ইঙ্গিতও দিয়েছেন।

gautam deb sujan chakraborty notice
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy