Advertisement
E-Paper

গরহাজির তন্ময়, ফোন করে কথা বললেন তদন্তকারী আধিকারিক

আর্থিক দুর্নীতিতে নাম জড়িয়েছে তাঁর। অথচ শাসক দলের একাংশ প্রকাশ্যে তাঁকে আড়াল করার মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। নদিয়ার চাপড়া ভক্তবালা বি এড কলেজের আর্থিক দুর্নীতির ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সম্পাদক টিএমসিপির তন্ময় আচার্য।

বিতান ভট্টাচার্য ও মনিরুল শেখ

শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৪ ০৩:২৩
কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী। —নিজস্ব চিত্র।

কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী। —নিজস্ব চিত্র।

আর্থিক দুর্নীতিতে নাম জড়িয়েছে তাঁর। অথচ শাসক দলের একাংশ প্রকাশ্যে তাঁকে আড়াল করার মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ।

নদিয়ার চাপড়া ভক্তবালা বি এড কলেজের আর্থিক দুর্নীতির ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সম্পাদক টিএমসিপির তন্ময় আচার্য। নানা টানাপড়েনে ওই কলেজের ৩৯ জন ছাত্রছাত্রী তাঁদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। অথচ বৃহস্পতিবার কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজ্য সরকার নিযুক্ত তদন্তকারী আধিকারিক যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী এলেও তাঁর সঙ্গে মুখোমুখি দেখা হল না তন্ময়ের। তন্ময়ের মোবাইলে ফোন করে কথা বলতে হল অভিজিৎবাবুকে!

তন্ময়ের এমন ‘ঔদ্ধত্য’ দেখে রীতিমতো বিস্মিত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের একাংশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘আমরা তন্ময়কে কমিশনের সামনে হাজির হওয়ার জন্য জানিয়েছিলাম। তার থেকেও বড় কথা, যে ভাবে ওকে আড়াল করার চেষ্টা হচ্ছে সেটা তো সকলেরই চোখে পড়ছে। সত্যিই যদি ও নিরপরাধ হয় তাহলে এত আড়ালের দরকার ছিল না। এ দিন হাজির থেকে অভিযোগ খন্ডানো ও এতজন ছাত্র-ছাত্রীর পাশে নৈতিক কারণেই থাকা উচিত ছিল তন্ময়ের।” এ দিন কমিশনের বৈঠক থাকা সত্ত্বেও ৩৯ জন ছাত্র-ছাত্রীর অধিকাংশই হাজির ছিলেন না। এক অভিযোগকারী ছাত্র বলেন, ‘‘আর্থিক দুর্নীতির ঘটনায় যে ভাবে রাজনীতির প্রভাব রয়েছে তাতে হতাশ হয়েই অনেকে পরীক্ষা দেওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছে।’’

সরকার নিযুক্ত তদন্তকারী আধিকারিক যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তীও তাঁর অনুপস্থিতিকে অস্বাভাবিক মানতে নারাজ। এ দিন সকাল দশটায় রাজ্য পুলিশের পাইলট কার নিয়ে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকেন অভিজিৎবাবু। শিক্ষক, অশিক্ষক কর্মী ও ১৯জন ছাত্রের সঙ্গে আলাদা করে তিনি কথা বলেন। এর ফাঁকেই অভিজিৎবাবু তন্ময়কে ফোন করে তাঁর বক্তব্য শুনতে চান। অভিজিৎবাবু বলেন, “আমি তো ভক্তবালা বি এড কলেজের দুর্নীতির ঘটনায় সকলের সঙ্গে কথা বলতে চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে জানিয়েছিলাম। আজ অনেক তথ্য সংগ্রহ করেছি। তন্ময় বলছিল, ও জানত না। তাই আসতে পারেনি। আমিই ওর ফোন নম্বর জোগাড় করে ফোন করে ওর সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বললাম।’’

কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অবশ্য দাবি করেছেন, বৃহস্পতিবারে কমিশন যে জিজ্ঞাসাবাদ করবে তা তন্ময়কে আগেই জানানো হয়েছিল। এমনকি তিনি আসবেন বলেও জানিয়েছিলেন। যদিও তন্ময়ের সাফাই, ‘‘আমি যদি জানতাম তাহলে অবশ্যই যেতাম। সে কথা অভিজিৎবাবুকে জানিয়েছি। উনি যা জানতে চেয়েছেন সব তথ্য দিয়েছি। প্রয়োজনে আবারও দেব।’’ কিন্তু এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে, অভিযুক্ত হাজির না হলে তাঁকে এ দিন অনুপস্থিত দেখিয়ে ফের অন্যদিন ডাকা যেত। তাঁর পরিবর্তে খোদ সরকার নিযুক্ত তদন্তকারী আধিকারিক তাঁর ফোন নম্বর জোগাড় করে ফোন করার এত গরজ দেখালেন কেন? এ ভাবে অভিযুক্তের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ কি আইনসিদ্ধ? তাছাড়া ফোনের ওপারে যে অভিযুক্ত ছাত্র নেতাই কথা বলছেন তার কী প্রমাণ আছে? শুধু তাই নয়, এদিন ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলার সময় অভিজিৎবাবু তাঁদের পরামর্শ দেন, বাইরে বেরিয়ে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা না বলতে। তন্ময়কেও তিনি আড়াল করার চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ উঠছে। এ ব্যাপারে অভিজিৎবাবুকে প্রশ্ন করা হলে তাঁর বক্তব্য, ‘‘এই অভিযোগের বিষয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না। তন্ময়ের বক্তব্য শুনেছি। তদন্ত চলছে। যা বলার রিপোর্টেই বলব।’’

সকাল দশটা থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত অভিজিৎবাবু অভিযোগকারী ও অভিযুক্তদের বক্তব্য শোনেন। কথা বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দশ জন আধিকারিকের সঙ্গেও। অভিযুক্ত শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীরা সংবাদমাধ্যমকে এড়াতে এ দিন কার্যত পালিয়ে বেড়ান। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ দিনও সংবাদমাধ্যমকে গোটা দিন বিশ্ববিদ্যালয় ভবনের বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখে। বসার জায়গা বা পানীয় জল চাওয়া হলেও নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ভিতরে সংবাদমাধ্যমের প্রবেশ নিষেধ। বাইরেই অপেক্ষা করতে হবে আপনাদের। বাকি ব্যবস্থা আপনাদেরকেই করে নিতে হবে।’’

বিকেল পাঁচটা নাগাদ অভিজিৎবাবু যখন দোতলায় উপাচার্যের ঘর থেকে বেরিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামছেন তখন তাঁকে ঘিরে ধরেন এ দিন হাজির থাকা ১৯জন ছাত্র-ছাত্রী ও তাঁদের অভিভাবকেরা। নিঃশর্ত পরীক্ষার দাবি জানাতে থাকেন তাঁরা। অভিজিৎবাবু বলেন, ‘‘অ্যাকাডেমিক বিষয়ে আমি কিছু বলব না। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলবেন। আমি একটি নির্দিষ্ট দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত করতে এসেছিলাম। সেই বিষয়ে যথেষ্ট তথ্য সংগ্রহ করেছি। প্রয়োজনে আবার আসব। তবে উপাচার্য থাকলে ভাল হত। উনি বিদেশে। ওঁর সঙ্গে ফোনেও যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।’’ অভিজিৎবাবু চলে যাওয়ার পর এ দিন বিকাল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামক বিমলেন্দু বিশ্বাস তাঁর চেম্বারে ভক্তবালা বি এড কলেজের অভিযোগকারী ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি তাঁদের চলতি মাসের ৭ তারিখেই পরীক্ষায় বসার আশ্বাস দেন। উপস্থিত পড়ুয়াদের বক্তব্য, “পরীক্ষা নিয়ামক জানিয়েছেন, নদিয়ার তেহট্টে রেণুকাদেবী বি এড কলেজে আমাদের সিট পড়বে। বিমলেন্দুবাবু নিজেও সে দিন সেখানে থাকবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।” পরীক্ষা নিয়ামক জানান, এই ৩৯জন পরীক্ষার্থীকে কোনও অ্যাডমিট কার্ড দেওয়া হবে না। পরীক্ষার খাতায় কোনও রোল নম্বর লেখারও দরকার নেই। পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে এর বেশি কিছু বলতে চাননি তিনি। পরীক্ষা নিয়ামকের বক্তব্যে ভুক্তভোগী অনেক পড়ুয়াই অসন্তুষ্ট। তেহট্টের এক ছাত্র বলেন, “অ্যাডমিট কার্ড ছাড়া কীভাবে পরীক্ষা হবে বুঝতে পারছি না। আমরা পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার কথা বারবার জানিয়েছি। এখনও আমরা অন্ধকারে।” অন্যদিকে পরীক্ষা নিয়ামক বলেন, ‘‘ছাত্র স্বার্থটাই আমরা সবসময় দেখব। তবে সবটাই নিয়ম নীতি মেনে। তাই ওঁদের বলেছি এই বিষয়ে যা বলার উপাচার্য বলবেন।” এখন অপেক্ষা উপাচার্যের ফেরার। কিন্তু ততদিনে তো পরীক্ষা শুরু হয়ে যাবে। তবে কী করণীয়? বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে কোনও সদুত্তর মেলেনি।

bhaktabala BEd college tanmoy acharya abhijit chakraborty bitan bhattacharya manirul sheikh kalyani
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy