Advertisement
E-Paper

জামিন রুখতে গিয়ে মুখ পুড়েছে আগেও

জমি বিক্রি নিয়ে কুড়ি কোটি টাকা প্রতারণার মামলা। অভিযোগ, টাকা দিয়েও জমি মেলেনি। আগাম জামিন চেয়ে অভিযুক্ত আদালতের দ্বারস্থ, জামিনের বিরোধিতা করছেন সরকারপক্ষের কৌঁসুলি (পাবলিক প্রসিকিউটর, সংক্ষেপে পিপি)। বিচারপতি তাঁর কাছে জানতে চাইলেন, অভিযোগকারী যে টাকা দেন, তার রসিদ কোথায়? পিপি দেখাতে পারেননি। বিস্মিত বিচারপতির প্রশ্ন, এত টাকা লেনদেন হল রসিদ ছাড়াই? পিপি চুপ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:৫০
পার্ক সার্কাসের বাড়িতে আসিফ খানের স্ত্রী তবস্সুম। শুক্রবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

পার্ক সার্কাসের বাড়িতে আসিফ খানের স্ত্রী তবস্সুম। শুক্রবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

জমি বিক্রি নিয়ে কুড়ি কোটি টাকা প্রতারণার মামলা। অভিযোগ, টাকা দিয়েও জমি মেলেনি। আগাম জামিন চেয়ে অভিযুক্ত আদালতের দ্বারস্থ, জামিনের বিরোধিতা করছেন সরকারপক্ষের কৌঁসুলি (পাবলিক প্রসিকিউটর, সংক্ষেপে পিপি)। বিচারপতি তাঁর কাছে জানতে চাইলেন, অভিযোগকারী যে টাকা দেন, তার রসিদ কোথায়?

পিপি দেখাতে পারেননি। বিস্মিত বিচারপতির প্রশ্ন, এত টাকা লেনদেন হল রসিদ ছাড়াই? পিপি চুপ।

আর সরকারপক্ষের ওই নীরবতাই জন্ম দিয়েছে বিবিধ প্রশ্ন, বিভ্রান্তি ও অবিশ্বাসের। কেন্দ্রবিন্দুতে আসিফ খান, একদা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের যে ছায়াসঙ্গীকে বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ গ্রেফতার করেছে অন্য এক প্রতারণার মামলায়। বিশ কোটি প্রতারণার এই মামলাতেও আসিফ মূল অভিযুক্ত। অভিযোগকারীর নাম ওয়াহিদুল হাসান সিদ্দিকি, নিজেকে যিনি উত্তরপ্রদেশের তৃণমূল সভাপতি হিসেবে দাবি করে থাকেন। লখনউয়ের হজরতরঞ্জের বাসিন্দা ব্যবসায়ীটির অভিযোগ, রাজারহাটে ইকো পার্কের উল্টো দিকে ৪৮০ একর জমি পাইয়ে দেওয়ার নামে আসিফ ২০১৩-য় তাঁর থেকে কয়েক দফায় কুড়ি কোটি টাকা নিয়েছেন, চুক্তিপত্র ছাড়াই। এখনও জমি হস্তান্তর হয়নি।

গত ২৪ জুলাই নিউ টাউন থানায় ওয়াহিদুল প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেন। আগাম জামিন চেয়ে আসিফ যান হাইকোর্টে। ৩ সেপ্টেম্বর বিচারপতি প্রণব চট্টোপাধ্যায় ও বিচারপতি সুদীপ অহলুওয়ালিয়ার ডিভিশন বেঞ্চে তার শুনানি হয়। অভিযোগকারীর হয়ে সওয়াল করেন পিপি। আদালতের প্রশ্নবাণে তাঁকে কার্যত নাস্তানাবুদ হতে হয়েছে। রসিদের খোঁজ ছাড়াও ডিভিশন বেঞ্চ বেশ কয়েকটা প্রশ্ন সে দিন করেছিল পিপি’কে। সরকারপক্ষের কৌঁসুলি কোনওটারই যথাযথ জবাব দিতে না-পারায় হাইকোর্ট আসিফের আগাম জামিন মঞ্জুর করে। রাজ্য সুপ্রিম কোর্টে যায়। সেই সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতাও বিতর্কের মুখে।

হাইকোর্টের কোন কোন প্রশ্নের যথাযথ জবাব পিপি দিতে পারেননি?

হাইকোর্ট সূত্রের খবর: ডিভিশন বেঞ্চ জানতে চায়, যে-জমি পাইয়ে দেওয়ার নামে টাকা নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ, তার মালিকদের নাম কী? পিপি বলতে পারেননি। বেঞ্চের পরের প্রশ্ন, সাধারণত টাকা লেনদেন হয় জমি রেজিস্ট্রেশনের সময়েই। জমি রেজিস্ট্রি সংক্রান্ত কী নথি আছে? পিপি নীরব। ওয়াহিদুলের অভিযোগে বলা হয়েছে, জমির জন্য ১ হাজার টাকার নোটের দু’হাজারটি বান্ডিল (অর্থাৎ ২০ কোটি টাকা) দেওয়া হয়। তার রসিদ নেই শুনে আদালত প্রশ্ন করে, “রসিদ ছাড়াই এত টাকা দেওয়া হল কী ভাবে?” পিপি ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। লেনদেনের বিষয়টা আয়কর দফতরের গোচরে আছে কি না, ডিভিশন বেঞ্চের প্রশ্নের উত্তর সরকারপক্ষের কৌঁসুলি দিতে পারেননি।

অর্থাৎ, ওয়াহিদুলের তোলা অভিযোগের সমর্থনে সরকারপক্ষ হাইকোর্টের সামনে কার্যত কোনও প্রামাণ্য নথি দাখিল করতে পারেনি। পরিণামে আসিফ তো আগাম জামিন পেয়েইছেন, পাশাপাশি অভিযোগের বাস্তবতা ঘিরেও সংশয়-অবিশ্বাসের বাতাবরণ ঘনীভূত হয়েছে। এমনকী আইনজীবীদের একাংশের এখন এ-ও প্রশ্ন, স্রেফ আসিফকে ফাঁসানোর উদ্দেশ্যেই কি এই মামলা? হাইকোর্টের আইনজীবী অরুণাভ ঘোষের কথায়, “এত মারাত্মক একটা অভিযোগ, অথচ তার সপক্ষে রাজ্য সরকার কোনও তথ্য ডিভিশন বেঞ্চকে দেখাতে পারল না! ভেবে অবাক হচ্ছি।”

এবং এই পরিস্থিতিতেও রাজ্য সরকার সর্বোচ্চ আদালতে গিয়ে হাইকোর্টের নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করায় আইনজীবী মহলে ঘোর বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়েছে। “সরকার কেন কোষাগারের টাকা খরচ করে সুপ্রিম কোর্টে গেল, তা-ও মাথায় ঢুকছে না।’’ বলছেন অরুণাভবাবু। ওয়াহিদুলের অভিযোগের সমর্থনে হাইকোর্টে তথ্য পেশে ব্যর্থ হওয়ার পরেও রাজ্য কীসের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্টে গেল, তা জানতে চাইলে সরকারপক্ষের এক সূত্রের দাবি, “তদন্ত এখনও চলছে। প্রয়োজনে সব তথ্য-প্রমাণ সুপ্রিম কোর্টে দাখিল করা হবে।”

কিন্তু অভিযোগকারী তো নিজে থেকে সুপ্রিম কোর্টে যাননি! রাজ্য আগ বাড়িয়ে গেল কেন?

সরকারপক্ষের ব্যাখ্যা: উত্তরপ্রদেশের ওই ব্যবসায়ী এখানকার পুলিশকে একটি তথ্য দিয়েছিলেন। পুলিশ তা খতিয়ে দেখে মনে করেছে, আসিফের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ খাটে। সেই মতো পুলিশ এফআইআর করেছে। আর এক বার পুলিশ এফআইআর নিলে মামলার পুরো দায়িত্বই বর্তায় রাজ্যের উপরে। “এই কারণেই পাবলিক প্রসিকিউটর হাইকোর্টে অভিযোগকারীর হয়ে সওয়াল করেছেন। একই যুক্তিতে হাইকোর্টের নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে রাজ্য সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে।” মন্তব্য সরকারি সূত্রের।

আগামী সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্টে মামলাটির শুনানি রয়েছে। সেখানে রাজ্যকে ‘প্রতারণা’র অভিযোগের সমর্থনে যাবতীয় কাগজপত্র দেখাতে হবে। শীর্ষ আদালতের সামনে তারা এ বার কী তথ্য পেশ করে, হাইকোর্টের আইনজীবীরা তা দেখার অপেক্ষায়।

asif khan tmc bidhannagar police commissionerate
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy