Advertisement
০২ মে ২০২৪
এনটিপিসি

জমি পেলে বাড়তি ইউনিট গড়ার ভাবনা

ক’দিন আগেই সর্বদল বৈঠকে কাটোয়ার বিধায়ক বলেছিলেন, দু’টি নয়, প্রস্তাবিত তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের চারটি ইউনিট করুক এনটিপিসি। ইতিমধ্যে চাষিদের থেকে জমি কেনার ব্যাপারে যাবতীয় জড়তা ঝেড়ে ফেলে মধ্যস্থতায় নেমেছে রাজ্য প্রশাসন। প্রকল্প এলাকার বাইরে থাকা গ্রামের লোকেরা আবেদনপত্র দিয়ে জানিয়েছেন, সুযোগ পেলে তাঁরাও জমি বিক্রি করতে চান।

প্রকল্প এলাকায় বসেছে এনটিপিসি-র বোর্ড। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।

প্রকল্প এলাকায় বসেছে এনটিপিসি-র বোর্ড। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায় ও সৌমেন দত্ত
কাটোয়া শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৪ ০৩:৩৭
Share: Save:

ক’দিন আগেই সর্বদল বৈঠকে কাটোয়ার বিধায়ক বলেছিলেন, দু’টি নয়, প্রস্তাবিত তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের চারটি ইউনিট করুক এনটিপিসি।

ইতিমধ্যে চাষিদের থেকে জমি কেনার ব্যাপারে যাবতীয় জড়তা ঝেড়ে ফেলে মধ্যস্থতায় নেমেছে রাজ্য প্রশাসন। প্রকল্প এলাকার বাইরে থাকা গ্রামের লোকেরা আবেদনপত্র দিয়ে জানিয়েছেন, সুযোগ পেলে তাঁরাও জমি বিক্রি করতে চান।

এত দিনের জট কাটিয়ে কাজের এই যে আবহ তৈরি হয়েছে, তাতে উজ্জীবিত এনটিপিসিও। সংস্থা সূত্রের খবর, দু’টি ইউনিট যে গড়া হবে তা নিশ্চিত। বাড়তি কিছু জমি পাওয়া গেলে তৃতীয় ইউনিট গড়ার ব্যাপারেও চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। যদিও এই ব্যাপারে নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নিতে হলেও অনেকটা সময় প্রয়োজন।

প্রাথমিক ভাবে কাটোয়ায় ৮০০ মেগাওয়াটের দু’টি বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ার পরিকল্পনা করেছিল রাজ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম। তাতে মোট ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হত। কিন্তু জমি নিয়ে সমস্যা তৈরি হওয়ায় তারা পরিকল্পনা কাটছাঁট করে ৬৬০ মেগাওয়াটের দু’টি ইউনিট গড়ার সিদ্ধান্ত নেয়। উৎপাদনক্ষমতা নেমে যায় ১৩২০ মেগাওয়াটে। এখন তিনটি ইউনিট হলে উৎপাদনক্ষমতা দাঁড়াবে ১৯৮০ মেগাওয়াটে, যা প্রাথমিক পরিকল্পনার চেয়েও বেশি।

আজ, শনিবারই প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখতে আসছেন এনটিপিসির চেয়ারম্যান অরূপ রায়চৌধুরী। সংস্থা সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে প্রস্তাবিত দু’টি ইউনিট নির্মাণের জন্য দরপত্র চাওয়া হয়েছে। কয়েকটি পেশাদার সংস্থা দরপত্র জমা দিয়েছে, যার মধ্যে লার্সেন অ্যান্ড ট্যুব্রো, মিৎসুবিশি এবং ভেল ছাড়াও দক্ষিণ কোরিয়ার একটি সংস্থা রয়েছে। আগামী অগস্টের মধ্যে দরপত্র খোলা হবে। রাজ্য সরকারও চাইছে, যত দ্রুত সম্ভব কাজ শুরু হোক। প্রকল্পে সব রকম সাহায্য করার জন্য বর্ধমানের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহনকে নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন। এনটিপিসির এক কর্তা তাঁর সঙ্গে দেখাও করেছেন।

এরই মধ্যে এনটিপিসিকে চিঠি দিয়ে রাজ্য সরকার জানিয়ে দিয়েছে, কাটোয়া তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পে উৎপাদিত বিদ্যুতের ৮৫ শতাংশ রাজ্যই কিনে নিতে চায়। তার পরেও যদি এনটিপিসি-র আরও বিদ্যুৎ দেওয়ার উপায় থাকে, তা-ও তারা কেনার কথা ভাবছে। রাজ্যের যুক্তি, বীরভূমে দেউচা-পাঁচামিতে রাজ্যের যে নিজের খনি রয়েছে, সেখান থেকে কাটোয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য কয়লা সরবরাহ করা হবে। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ কমবে। রাজ্য সরকার নিজেও প্রায় ১০০ একর খাসজমি এনটিপিসি-র হাতে তুলে দিচ্ছে।

কাটোয়ায় তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ার পরিকল্পনা আদতে ছিল প্রাক্তন বাম সরকারের। তার জন্য ৫৫৬ একর জমি অধিগ্রহণও করা হয়েছিল। কিন্তু ২০১১ সালে ক্ষমতায় এসেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, তাঁর সরকার চাষিদের থেকে এক ছটাক জমিও নেবে না। শিল্পসংস্থাকেই তা সরাসরি কিনে নিতে হবে। এনটিপিসি প্রকল্পের আয়তনে কাটছাঁট করলেও এখনও তাদের অন্তত ২২০ একর জমি প্রয়োজন। চাষিদের থেকে সরাসরি এতটা জমি কেনার জটিলতার কারণে সব থমকে যায়। শেষমেশ সিংহ ভাগ চাষির সম্মতিপত্র আদায় করে জমি কেনার লক্ষ্যে এগোচ্ছে এনটিপিসি। অনড় মনোভাব ছেড়ে রাজ্য প্রশাসনও এগিয়ে এসেছে।

সরকারের নির্দেশেই গত ১০ জুন কাটোয়া মহকুমাশাসক তাঁর নিজের দফতরে সর্বদল বৈঠক ডেকেছিলেন। চার প্রধান দল তৃণমূল, কংগ্রেস, সিপিএম ও বিজেপি জানায়, এই বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ার জন্য তারা সব রকম সাহায্য করতে প্রস্তুত। এক পা এগিয়ে কাটোয়ার কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, “দু’টি নয়, চারটি ইউনিট গড়ুক এনটিপিসি। জমি সমস্যা হবে না।” তিনটি ইউনিট গড়ার চিন্তা হচ্ছে শুনে এ দিন তিনি বলেন, “জমি সমস্যা হবে না জেনেই আমরা চার ইউনিট গড়ার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। তিনটি ইউনিট গড়ার ভাবনাকেও স্বাগত জানাচ্ছি। আশা করি, পরে ওরা আরও ইউনিট গড়ার ব্যাপারে চিন্তা করবে।” স্থানীয় বিধায়ক, তৃণমূলের শেখ সাহানেওয়াজ বলেন, “সরকার এবং মানুষ এগিয়ে এসেছে দেখেই এনটিপিসি নতুন করে চিন্তাভাবনা করছে। এটা শুভ লক্ষণ।” জমির দর নিয়ে চাষিদের সঙ্গে কথা বলতে তাঁরা গ্রামে-গ্রামে ক্যাম্প করবেন বলেও মহকুমাশাসক জানিয়ে দিয়েছেন।

সর্বদল বৈঠকের দিনেই গোটা বিষয়টায় যাঁরা অন্য মাত্রা যোগ করে দিয়েছিলেন, তাঁরা প্রকল্প এলাকার বাইরে থাকা সাহাপুর মৌজার আঙারপুর ও যতীনপুর গ্রামের চাষি। এনটিপিসি যদি প্রকল্প বাড়াতে চায়, তাঁরা প্রায় ২০০ একর জমি বিক্রি করতে রাজি জানিয়ে মহকুমাশাসকের কাছে তাঁরা চিঠি দেন। এমনকী বিনা আমন্ত্রণে সর্বদল বৈঠকে ঢুকে পড়ে এক চাষি অনুরোধ করেন, এনটিপিসি যেন ওই দুই গ্রামের জমি কেনে। সে দিনই সংস্থার অতিরিক্ত জেনারেল ম্যানেজার শিবাশিস বসু বলেছিলেন, “ওই দুই গ্রামের বাসিন্দাদের দাবি আমরা নজরে রাখছি।”

তৃতীয় ইউনিটের চিন্তাভাবনার কথা শুনে আঙারপুর ও যতীনপুরের প্রভাত পাল, বিশ্বম্ভর পালেরা বলেন, “এনটিপিসি-র এই ভাবনায় আমরা খুবই খুশি। নতুন ইউনিট হলে যেন আমাদের জমি নেওয়া হয়।” এই আবহেই আজ কাটোয়ায় পৌঁছচ্ছেন এনটিপিসি-র চেয়ারম্যান। সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ তাঁর হেলিকপ্টারে প্রকল্প এলাকায় নামার কথা।

আশায় বুক বাঁধছে সব পক্ষই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ntpc pinaki bandyopadhyay soumen dutta
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE