Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

ঝগড়া মেটাও, অর্পিতা-ব্রাত্যকে নির্দেশ মমতার

নাট্যস্বজন থাক বা যাক, তৃণমূলের মন্ত্রী-সাংসদদের অবিলম্বে ঝগড়া মিটিয়ে নিতে নির্দেশ দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। আপাত ভাবে তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ নাট্যকর্মীদের সংগঠন নাট্যস্বজন-এর সঙ্গে রাজ্যের শাসক দল বা নবান্নের কোনও প্রত্যক্ষ যোগ নেই। কিন্তু নাট্যস্বজনে রাজ্যের এক মন্ত্রী এবং এক সাংসদের গোলমালকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বই সামনে চলে এসেছে বলে মনে করছে নবান্ন। তাই বিষয়টি নিয়ে যাতে আর কোনও মতেই প্রকাশ্য জলঘোলা না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে চাইছেন মমতা স্বয়ং।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:৪৭
Share: Save:

নাট্যস্বজন থাক বা যাক, তৃণমূলের মন্ত্রী-সাংসদদের অবিলম্বে ঝগড়া মিটিয়ে নিতে নির্দেশ দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী।

আপাত ভাবে তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ নাট্যকর্মীদের সংগঠন নাট্যস্বজন-এর সঙ্গে রাজ্যের শাসক দল বা নবান্নের কোনও প্রত্যক্ষ যোগ নেই। কিন্তু নাট্যস্বজনে রাজ্যের এক মন্ত্রী এবং এক সাংসদের গোলমালকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বই সামনে চলে এসেছে বলে মনে করছে নবান্ন। তাই বিষয়টি নিয়ে যাতে আর কোনও মতেই প্রকাশ্য জলঘোলা না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে চাইছেন মমতা স্বয়ং।

বৃহস্পতিবার নাট্যস্বজন থেকে পদত্যাগ করেছিলেন সংস্থার সভাপতি ব্রাত্য বসু। পদত্যাগের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিলেন অন্যতম সাধারণ সম্পাদক অর্পিতা ঘোষও। প্রথম জন রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী, দ্বিতীয় জন লোকসভার সাংসদ। নাম না করে ব্রাত্যবাবুর বিরুদ্ধে সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলেছিলেন অর্পিতা।

এই অবস্থায় শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই ব্রাত্য এবং অর্পিতাকে নবান্নে ডেকে পাঠান। দু’জনকে সামনাসামনি বসিয়ে স্পষ্ট জানতে চান, কীসের এত গোলমাল। সূত্রের খবর, সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলা নিয়ে নিজের অসন্তোষও গোপন করেননি মমতা। এবং নাট্যজগতের ভিতরকার এই দ্বন্দ্ব নিয়ে বেশি সময় খরচ না করে তিনি স্পষ্ট বলে দেন, যেখানে যাই-ই ঘটে থাকুক না কেন, নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করা চলবে না। “কোনও কথা শুনতে চাই না, ঝগড়া মেটাও”, বলেন মুখ্যমন্ত্রী।

মুখ্যমন্ত্রীর এই নির্দেশের পরে ব্রাত্য এবং অর্পিতার মধ্যে বরফ গলেছে কি না, তার স্পষ্ট কোনও ইঙ্গিত অবশ্য শুক্রবার রাত পর্যন্ত মেলেনি।

এর আগে বৃহস্পতিবার ব্রাত্য এবং অর্পিতা দু’জনেই দাবি করেছিলেন, নাট্যস্বজন কখনওই সরাসরি তৃণমূলের সংগঠন নয়। সুতরাং নাট্যস্বজন নিয়ে বিরোধের জের তৃণমূলে বর্তাবে না। “নাট্যস্বজন থাকুক, না থাকুক রাজনীতিতে তার প্রভাব পড়বে না”, মন্তব্য করেছিলেন ব্রাত্য। প্রায় একই বক্তব্য ছিল অর্পিতারও। এবং দু’জনের কেউই সরকারি কমিটি নাট্য অ্যাকাডেমি, হল কমিটি বা মিনার্ভার কমিটি থেকে সরে যাচ্ছেন না বলেও জানিয়ে দিয়েছিলেন।

তা হলে মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টা নিয়ে এত উদ্বিগ্ন হলেন কেন? তৃণমূল সূত্রের খবর, নাট্যস্বজন নিয়ে ব্রাত্য-অর্পিতার বিরোধ যে আদতে ব্যক্তিগত সংঘাত সেটা নিয়ে কারওরই দ্বিমত নেই। কিন্তু একই দলের দুই মুখ এক জন মন্ত্রী, এক জন সাংসদ তাঁদের বিরোধ যখন প্রকাশ্যে চলে আসে, তার আঁচ দলের গায়েও লাগে। বস্তুত এ কথা অজানা নয় বলেই বৃহস্পতিবার নিজে পদত্যাগ করার আগে ব্রাত্য নিজে মুখ্যমন্ত্রীকে পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেছিলেন। ঘটনাচক্রে কয়েক মাস বাদেই কলকাতায় পুরভোট। প্রধানত নাগরিক ভোটাররাই নাট্যজগতের হাল-হকিকত নিয়ে সজাগ। এই রকম সময়ে এমন বিসম্বাদ নাগরিক ভোটারদের একাংশের কাছে ভুল বার্তা দিতে পারে, এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিতে পারছেন না তৃণমূল নেতৃত্ব। সেই কারণেই কালক্ষেপ না করে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই মঞ্চে অবতীর্ণ হয়েছেন।

এ সবের আগে অবশ্য শুক্রবার সংবাদমাধ্যমে আরও এক প্রস্ত মুখ খুলেছিলেন অর্পিতা। নাম না-করে ব্রাত্যর দিকে আঙুল তুলে বলেছিলেন, “বন্ধুত্বের মধ্যে ক্ষমতার দম্ভ চলে এলে তা আর বন্ধুত্ব থাকে না।”

চাপানউতোরের এই পর্ব অবশ্য শুরু হয়েছিল মঙ্গলবার থেকেই। ওই দিন নাট্যস্বজন থেকে ইস্তফা দেন নাট্যকর্মী দেবেশ চট্টোপাধ্যায়। প্রাথমিক ভাবে কারও বিরুদ্ধে মুখ না খুললেও অর্পিতা তখনই ঘনিষ্ঠ মহলে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি দেবেশের অসন্তোষকে সমর্থন করেন। এর পর বৃহস্পতিবার এবিপি আনন্দে একসঙ্গে মুখ খোলেন দেবেশ, অর্পিতা এবং মণীশ মিত্র। তখনই নাট্যস্বজন এবং নাটকের অন্যান্য কমিটিতে একনায়কতন্ত্র এবং স্তাবকতার রমরমা চলছে বলে অভিযোগ করেন ওঁরা। সকলেরই নিশানা ছিলেন ব্রাত্য বসু। কারা কোন হলে অভিনয় করবে থেকে শুরু করে কোন দলের ভাগ্যে কল শো-র শিকে ছিঁড়বে সব কিছুতেই ব্রাত্য-ঘনিষ্ঠদের হাতে রাশ থাকছে বলে তাঁদের অভিযোগ ছিল। জবাবে ব্রাত্য অবশ্য এ সব নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

তবে কিছু দিন আগে মণীশ যখন নাট্যস্বজন থেকে সরে যান, তখন কিন্তু মণীশের এমন সব অভিযোগকে আমল দেননি অর্পিতাও। মণীশ বিষয়টা ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার দিক থেকে দেখছেন বলে মন্তব্য করেছিলেন তিনি। কিন্তু দেবেশ সরে যেতেই অর্পিতা সরব হয়েছেন। কেন এমন হল? নাট্যজগতের একাংশের দাবি, অর্পিতার নতুন নাটক ‘দু’টো দিন’ (যা ব্রাত্যরই লেখা) নিয়ে মতান্তরই এর নেপথ্য কারণ। ব্রাত্য বা অর্পিতা নিজেরা যদিও বিষয়টি নিয়ে কিছু বলতে চাননি। আবার ব্রাত্যর ঘনিষ্ঠ মহলের একাংশের দাবি, অর্পিতা-দেবেশরা আসলে একজোট হয়ে ব্রাত্যকে কোণঠাসা করছেন। উত্তরে দেবেশ এ দিন বলেন, “এই অভিযোগ ভিত্তিহীন। পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে অর্পিতাকে জানিয়েছিলাম। ওঁর সঙ্গে আলোচনা করে পদত্যাগ করিনি।”

একদা তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ, অধুনা কিছুটা বীতশ্রদ্ধ এক বর্ষীয়ান নাট্য পরিচালকের অবশ্য মত, “নাট্যচর্চা সংক্রান্ত মতবিরোধ এই চাপান-উতোরের আসল কারণ বলে মনে হয় না। ব্রাত্য, অর্পিতা, দেবেশ, মণীশদের মধ্যে পারস্পরিক স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হয়েছে বৈ কী!” আর নাট্যকর্মী সুমন মুখোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘শাসক দলের ঘনিষ্ঠ কয়েক জন নাট্যকর্মীর ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধি ও রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা থেকেই নাট্যস্বজনের সূত্রপাত। এ সব গোলমালে সেই বিষয়টি অন্তত সবার সামনে ফাঁস হয়ে গেল।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE