Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ডাক্তার দেখার আগেই কি ব্যান্ডেজ করে দেন নার্স

একটা ‘ব্যান্ডেজ’। সেই ব্যান্ডেজই সিপিএমের রক্ষাকবচ, তৃণমূলের গলার ফাঁস। যে ‘ব্যান্ডেজ’ সরিয়ে পূর্বস্থলীর তৃণমূল নেতা সজল ঘোষের বুক থেকে গুলি বের করেছিলেন নবদ্বীপ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ডাক্তার। যে তথ্যের জোরে সিপিএম দাবি করে আসছে, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে সজলকে অন্য কোথাও খুন করে হাসপাতালে এনে ফেলা হয়েছিল। কেননা তৎক্ষণাৎ গুলি করা হয়ে থাকলে ব্যান্ডেজ থাকতে পারে না।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
পূর্বস্থলী শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:০০
Share: Save:

একটা ‘ব্যান্ডেজ’।

সেই ব্যান্ডেজই সিপিএমের রক্ষাকবচ, তৃণমূলের গলার ফাঁস।

যে ‘ব্যান্ডেজ’ সরিয়ে পূর্বস্থলীর তৃণমূল নেতা সজল ঘোষের বুক থেকে গুলি বের করেছিলেন নবদ্বীপ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ডাক্তার। যে তথ্যের জোরে সিপিএম দাবি করে আসছে, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে সজলকে অন্য কোথাও খুন করে হাসপাতালে এনে ফেলা হয়েছিল। কেননা তৎক্ষণাৎ গুলি করা হয়ে থাকলে ব্যান্ডেজ থাকতে পারে না।

তৃণমূল কখনও এই অভিযোগ স্বীকার করেনি। বরং নিজেদের ‘প্রত্যক্ষদর্শী’ দাবি করে দলের পাঁচ নেতাকর্মী বলে এসেছেন, নবদ্বীপ হাসপাতালে তাঁদের সামনেই সজলকে গুলি করেছিল এসএফআই সমর্থক লোকনাথ দেবনাথ। মাটিতে লুটিয়ে পড়া সজলকে তুলে তাঁরাই জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। তৎক্ষণাৎ সজলের বুকে ব্যান্ডেজ কোথা থেকে এল, সেই ধাঁধা কিন্তু রয়েই গিয়েছে। পুলিশের তদন্ত থেকে আদালতের শুনানি তথা সাক্ষ্যগ্রহণ, কোনও পর্বেই এই প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি।

সোমবার অন্যতম ‘প্রত্যক্ষদর্শী’ ফজলুল হক দাবি করলেন, জরুরি বিভাগে ডাক্তার দেখার আগেই এক নার্স সজলের বুকে ‘পট্টি’ লাগিয়ে দিয়েছিলেন। সেই কারণেই পরে চিকিৎসক পবিত্রকুমার করণ তাঁকে পরীক্ষা করতে গিয়ে তা দেখতে পান। এ দিন দুপুরে বর্ধমানের পূর্বস্থলীতেই বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি তথা তৃণমূলের পার্টি অফিসে বসে বর্তমানে দলের রাজ্য কমিটির সদস্য ফজলুল খুঁটিয়ে বলতে থাকেন ২০১২ সালের ৯ জানুয়ারির সেই রাতের কথা। যে দিন পূর্বস্থলী কলেজে ছাত্র সংঘর্ষে আহত ছাত্রদের দেখতে রাতে নদিয়ার নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে গিয়েছিলেন তৃণমূলের কিছু নেতাকর্মী।

ফজলুলের জবানিতে: “নিজের মোটরবাইকের পিছনে দলেরই গৌতম নাথকে বসিয়ে আমি হাসপাতালে পৌঁছই। বিধায়কের গাড়িতে পূর্বস্থলী পঞ্চায়েতের প্রধান পঙ্কজ গঙ্গোপাধ্যায় আর সজল এসে পৌঁছয় পরে। আমরা আগেই তত ক্ষণে উপরে ওয়ার্ড থেকে ঘুরে চলে এসেছি। ওরা তিন জন উঠে যায়। খানিক পরে পঙ্কজ নেমে আসে। আমরা তিন জন ইমার্জেন্সি গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে গল্প করতে থাকি।”

ঝিরঝির করে বৃষ্টি পড়ছিল সেই রাতে। ফজলুল বলে চলেন, “গেটের বাইরে শেডের নীচে গোল হয়ে দাঁড়িয়েছিলাম আমরা। তখন রাত ১১টা বেজে গিয়েছে। পিছন থেকে হাসপাতাল চত্বরে কেউ ঢুকেছে কি না, খেয়াল করিনি। একটু পরে দেখি, আহত টিএমসিপি সমর্থক শৌভিক আইচ নেমে এসেছে। হাতে স্ট্যান্ডে লাগানো স্যালাইন। সঙ্গে সজল। শৌভিককে গেটেই আটকে দেন রক্ষী। সজল বেরিয়ে যায়। তার পরেই ফট্ করে শব্দ। ঘুরে দেখি, সজল লুটিয়ে পড়ছে। আমরা ছুটে যাই..।”

কে তুলল সজলকে?

ফজলুলের দাবি, “আমরাই ওকে তুলে ধরাধরি করে জরুরি বিভাগে নিয়ে যাই। সেখানে তখন কোনও ডাক্তার ছিলেন না। কর্তব্যরত নার্স প্রথমেই ওর বুকে ক্ষতস্থানে খানিকটা তুলো লিউকোপ্লাস্ট দিয়ে লাগিয়ে দেন। পরে ডাক্তারবাবু এসে ওই তুলো সরিয়েই দেখেছিলেন।” তা হলে, সে কথা পুলিশকে বা আদালতে বলেননি কেন? ফজলুলের জবাব, “কেউ জিগ্যেস করেনি, তাই। (একটু থেমে) আর মাথাতেও আসেনি যে, এটা আলাদা করে বলতে হবে।”

যা শুনে সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য অঞ্জু করের প্রতিক্রিয়া, “আমরা এই সব মনগড়া কথা বিশ্বাস করি না। আমরা নিশ্চিত, ওই ব্যান্ডেজ হাসপাতালে করা হয়নি।” কী বলছেন প্রধান অভিযুক্ত, সদ্য বেকসুর খালাস হওয়া সিপিএম নেতা প্রদীপ সাহা? তাঁর সংক্ষিপ্ত জবাব, “ওখানে কী ঘটেছিল, আমি কী করে জানব? আমি তো তখন বাড়িতে ঘুমোচ্ছিলাম!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

debasish bandyopadhyay sajal ghosh murder case
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE