পাহাড়ে তো বটেই, ডুয়ার্সেও প্রভাব বাড়াতে দার্জিলিঙের সঙ্গে আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্রেও বিজেপি প্রার্থীকে সমর্থন করল মোর্চা। মোর্চা নেতাদের দাবি, এই দুই লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্বর্তী অঞ্চলে তাঁদের প্রভাব যে ক্রমশ বাড়ছে, তা গত পঞ্চায়েত ভোটের ফল থেকেই স্পষ্ট। তার উপরে, এ বার চতুর্মুখী লড়াই হবে বলে ভোটের গণিতেও তাঁরাই সুবিধেজনক অবস্থানে রয়েছেন বলে মনে করছেন মোর্চা নেতারা।
এক ঝলকে দেখে নেওয়া যাক, এই দুই লোকসভা কেন্দ্রে মোর্চা ও বিজেপির প্রভাব ঠিক কতটা।
গত বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে প্রবল ‘পরিবর্তনের’ হাওয়াতেও আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত মাদারিহাট বিধানসভাতে ২৬ শতাংশ ভোট পেয়ে কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের প্রার্থীকে তৃতীয় স্থানে ঠেলে দিয়েছিল বিজেপি। কালচিনিতে জেতেন মোর্চা সমর্থিত নির্দল প্রার্থী। পঞ্চায়েত নির্বাচনে মাদারিহাটের একটি জেলা পরিষদ আসনও দখল করেছেন মোর্চা সমর্থিত প্রার্থী। ওই নির্বাচনে এই দুই লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত এলাকায় ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চাকে সমর্থন করে বিমল গুরুঙ্গেরা মোট ২টি জেলা পরিষদ আসন, গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে অন্তত ২০০টি এবং পঞ্চায়েত সমিতিতে ৩০টি আসন পায়।
এই নিরিখে বিজেপির নিজস্ব ভোট ব্যাঙ্কের সঙ্গে মোর্চার ভোট যোগ হলে ডুয়ার্সের রাজনৈতিক দলগুলির ক্ষমতার ভারসাম্য বদলে যাবে বলে মনে করছেন মোর্চা নেতারা। মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তথা ডুয়ার্সের নেতা মধুকর থাপা বলেন, “ডুয়ার্সে মোর্চা কতটা প্রাসঙ্গিক তা এ বারের লোকসভা ভোটে প্রমাণ হয়ে যাবে। মোর্চার সমর্থন জলপাইগুড়ির দু’টি আসনে হার-জিতে ফয়সালা করতে পারে। সেটা এখন সময়ের অপেক্ষা।” মোর্চার অন্দরের খবর, এই দুই কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থীকে সমর্থন করায় রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের উপরে যেমন চাপ তৈরি করা যাবে, তেমনই ভবিষ্যতে পৃথক গোর্খাল্যান্ডে ডুয়ার্সের বেশ কিছু এলাকার অন্তর্ভুক্তির দাবি তোলার রাস্তাও খোলা রাখা হল।
বিজেপিও মনে করছে, মোর্চার সমর্থন পেলে ডুয়ার্সের অন্তত একটি আসন তারা জিততে পারবে। গত লোকসভা ভোটে আলিপুরদুয়ার আসনে বিজেপি প্রার্থী প্রায় ২১ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। ওই কেন্দ্রে জয়ী আরএসপি প্রার্থী যেখানে পেয়েছিলেন ৪১ শতাংশ ভোট। নির্বাচনে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের প্রার্থী। তিনি পেয়েছিলেন ২৯ শতাংশ ভোট। এ বারে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট না হওয়ায় সেই ২৯ শতাংশ ভোট কংগ্রেস বা তৃণমূল একক ভাবে কারওরই ধরে রাখা সম্ভব নয়। সেই সঙ্গে বিজেপি নেতাদের ধারণা, বিধানসভা ভোটের পরে বামেদের ভোটব্যাঙ্কে ভাঙন ধরেছে। তাই এই কেন্দ্রে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে ও তাতে মোর্চার সমর্থনে বিজেপি প্রার্থীরই জেতার আশা বেশি বলে বিজেপি নেতারা মনে করছেন।
জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্রেও গতবারের লোকসভা ভোটে ৯৪ হাজারেরও বেশি ভোট পেয়েছিল বিজেপি। গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ১০ শতাংশ ভোট পায়। বিজেপির জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বাপি গোস্বামী বলেন, “দেশ জুড়ে বিজেপির হাওয়া বইছে। মোর্চার সমর্থন বাড়তি পাওনা। এমনিতেই জেলায় দলের ভোট বাড়বে, মোর্চার সমর্থনে আমরা জলপাইগুড়ির দু’টি আসনেই জয়ের আশা করছি।”
যদিও, মোর্চার ভোটের অঙ্ককে গুরুত্ব দিতে রাজি নয় তৃণমূল বা কংগ্রেস। তৃণমূলের জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি চন্দন ভৌমিকের কথায়, “কে কাকে সমর্থন করল, সেটা বিষয় নয়। যারা উন্নয়ন চান তাঁরা তৃণমূলের সঙ্গেই রয়েছেন।” জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ারের কংগ্রেসের কোঅর্ডিনেটর মোহন বসুর দাবি, “সাম্প্রদায়িক এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি উত্তরবঙ্গে কোনও প্রভাব ফেলতে পারবে না।”
ঘটনা হল, ওই দু’টি লোকসভা আসন এখন বামেদের দখলে। মোর্চা-বিজেপি, তৃণমূল, কংগ্রেস পৃথক ভাবে লড়ায় বামেরা ওই দু’টি আসন ফের দখলে রাখা নিয়ে অনেকটাই আশাবাদী। তাঁদের দাবি, বামেদের ভোটব্যাঙ্ক অটুট রয়েছে। গত পঞ্চায়েত ভোটে জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদও দখলে রেখেছে বামেরা। তাই পাহাড় ও লাগোয়া সমতলের দু’টি আসনের ব্যাপারে সিপিএম নেতা তথা প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যের দাবি, “আমরা বরাবর মানুষের সঙ্গে থাকি। পাহাড়ে এখন আমাদের সংগঠন আগের চেয়ে ভাল। জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদ ফের আমাদের হাতে তুলে দিয়ে মানুষ আমাদের সঙ্গে থাকার বার্তা দিয়েছেন। তাই তরাই-ডুয়ার্সের বিস্তীর্ণ এলাকায় আমাদের ফল ভাল হবে বলেই মনে হচ্ছে।”
(সহ প্রতিবেদন: অনির্বাণ রায়)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy