Advertisement
১৮ মে ২০২৪

তাপস-বচন নিয়ে ফের পুলিশকে বিঁধল হাইকোর্ট

রাজ্য সরকার কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ তাপস পালকে আড়াল করতে চাইছে কি না, আগেই সেই প্রশ্ন তুলেছিলেন বিচারপতি নিশীথা মাত্রে। শুক্রবার তিনি মন্তব্য করলেন, অভিযোগপত্র, নথি থাকা সত্ত্বেও পুলিশ যদি ওই সাংসদের উস্কানিমূলক বক্তব্যে আদালতগ্রাহ্য অপরাধ খুঁজে না-পায়, তা হলে সেটা দুর্ভাগ্যজনক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:০৩
Share: Save:

রাজ্য সরকার কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ তাপস পালকে আড়াল করতে চাইছে কি না, আগেই সেই প্রশ্ন তুলেছিলেন বিচারপতি নিশীথা মাত্রে। শুক্রবার তিনি মন্তব্য করলেন, অভিযোগপত্র, নথি থাকা সত্ত্বেও পুলিশ যদি ওই সাংসদের উস্কানিমূলক বক্তব্যে আদালতগ্রাহ্য অপরাধ খুঁজে না-পায়, তা হলে সেটা দুর্ভাগ্যজনক।

লোকসভা ভোটের আগে, ১৪ জুন নদিয়ার পাঁচ জায়গায় ‘হেট স্পিচ’ বা উস্কানিমূলক বক্তৃতা দিয়েছিলেন তাপসবাবু। সেই ঘটনায় পুলিশি নিষ্ক্রিয়তায় বারবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। জনসমক্ষে সাংসদের ওই ধরনের বক্তৃতার পরেও পুলিশ কেন কোনও ব্যবস্থা নিল না, তা নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা হয়। এফআইআর দায়ের করে ওই ঘটনার তদন্ত করার জন্য সিআইডি-কে নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত। রাজ্য সরকার সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বিচারপতি গিরিশচন্দ্র গুপ্ত এবং বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চে আপিল করে। সেই বেঞ্চের দুই বিচারপতির মতভেদের জেরে সেখানে মামলাটির নিষ্পত্তি হয়নি। সেটি যায় বিচারপতি মাত্রের আদালতে। সেখানে ফের গোড়া থেকে শুনানি হয় ১০ সেপ্টেম্বর। চূড়ান্ত রায় হবে ওই এজলাসেই।

শুনানির প্রথম দিনেই বিচারপতি মাত্রে বলেছিলেন, তাপস পাল শাসক দলের সাংসদ বলেই সরকার বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চাইছে বলে তাঁর মনে হচ্ছে। তার জেরেই বৃহস্পতিবার সরকার পক্ষের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আদালতে জানিয়ে দেন, সাংসদের ওই মন্তব্য নিয়ে সিআইডি অনুসন্ধানে রাজি রাজ্য সরকার। নদিয়া জেলায় কর্মরত সিআইডি-র কোনও অফিসার সেই অনুসন্ধান করতে পারেন বলেও আদালতে জানায় রাজ্য। কিন্তু আবেদনকারী বিপ্লব চৌধুরীর আইনজীবী অনিরুদ্ধ চট্টোপাধ্যায় নিচু তলার কোনও অফিসারকে দিয়ে ঘটনার তদন্তে রাজি হননি। কারণ তাঁদের আশঙ্কা, নিম্ন পদমর্যাদার কোনও অফিসার দায়িত্ব পেলে নিরপেক্ষ তদন্ত হবে না। তাঁদের আর্জি ছিল, তদন্তের জন্য রাজ্য পুলিশের ডিজি-কে যথাযথ নির্দেশ দিতে হবে সিআইডি-র ডিআইজি-কে। এই অবস্থায় শুক্রবারেও এই মামলার শুনানির ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

তাপসবাবুর আইনজীবী কিশোর দত্ত এ দিন আদালতে জানান, সাংসদ ওই বক্তৃতা দিয়েছিলেন নির্বাচনের প্রাক্কালে। তা শুনে বিচারপতি মাত্রে বলেন, “নির্বাচনের সময় তাপ-উত্তাপ থাকতেই পারে। কিন্তু প্রার্থীকে সংযত থাকতে হবে।” বিচারপতি জানান, আবেদনকারীর অভিযোগ মূলত দু’টি বিষয়ে। প্রথম অভিযোগ, সাংসদের বক্তব্য উস্কানিমূলক ও বিদ্বেষমূলক। দ্বিতীয়ত অভিযোগ সাংসদের আগ্নেয়াস্ত্র রাখা নিয়ে। কারও কাছে যদি আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অনুমতি (লাইসেন্স) না-থাকে, তা হলে সেটা অস্ত্র আইনে আদালতগ্রাহ্য অপরাধ বলে মন্তব্য করেন বিচারপতি মাত্রে। তার পরেই তিনি বলেন, পুলিশের হাতে অভিযোগপত্র রয়েছে। সেই অভিযোগের পক্ষে নথিপত্রও আছে। তা সত্ত্বেও পুলিশ যদি এই ঘটনায় আদালতগ্রাহ্য অপরাধ খুঁজে না-পায়, তা হলে সেটা দুর্ভাগ্যজনক।

পুলিশের সমালোচনা করে বিচারপতি প্রশ্ন তোলেন, সাংসদের ওই বক্তৃতার পরিপ্রেক্ষিতে অভিযোগ জমা পড়েছে ২ জুলাই। ১৫ জুলাই হাইকোর্টে মামলা দায়ের হয়েছে। সেই মামলার শুনানি শুরু হয় ২৩ জুলাই। পুলিশ এত দিন সময় পেয়েও অনুসন্ধান করেনি কেন?

বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের নির্দেশের (তাপস পালের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে সিআইডি তদন্ত শুরু করতে হবে) উপরে স্থগিতাদেশ দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। কিন্তু একই সঙ্গে ডিভিশন বেঞ্চ এই নির্দেশও দিয়েছিল যে, পুলিশকে তদন্ত করতে হবে। বিচারপতি মাত্রের প্রশ্ন, “তা সত্ত্বেও পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করেনি। পুলিশকে কেউ বাধা দিয়েছে কি?”

দু’পক্ষের সওয়াল শেষে বিচারপতি মাত্রে এ দিন নির্দেশ দেন, মামলার রায় ঘোষণা না-হওয়া পর্যন্ত সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশের উপরে স্থগিতাদেশ বজায় থাকবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

tapas pal high court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE