Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
দত্ত এজলাস

তপন-হত্যায় সিবিআইয়ে কী আপত্তি, প্রশ্ন কোর্টের

নিম্ন আদালতে অভিযুক্তেরা বেকসুর খালাস পেয়েছে। যদিও নিম্ন আদালতের বিচারক সিআইডি-তদন্তের রকম-সকম দেখে সন্তুষ্ট হতে পারেননি। এমতাবস্থায় বালির জলাভূমি বাঁচাও কমিটির নেতা তপন দত্ত খুনের রহস্য উদ্ঘাটনে সিবিআই তদন্ত হবে না কেন, সে প্রশ্ন তুলল কলকাতা হাইকোর্ট। তপনবাবু যে খুন হওয়ার দু’বছর আগেই প্রশাসনের কাছে নিজের প্রাণহানির আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, সে কথা উল্লেখ করে শুক্রবার হাইকোর্টের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের পর্যবেক্ষণ, “প্রশাসন খুন আটকাতে পারেনি। খুনিকেও ধরতে পারেনি।”

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:৪৫
Share: Save:

নিম্ন আদালতে অভিযুক্তেরা বেকসুর খালাস পেয়েছে। যদিও নিম্ন আদালতের বিচারক সিআইডি-তদন্তের রকম-সকম দেখে সন্তুষ্ট হতে পারেননি। এমতাবস্থায় বালির জলাভূমি বাঁচাও কমিটির নেতা তপন দত্ত খুনের রহস্য উদ্ঘাটনে সিবিআই তদন্ত হবে না কেন, সে প্রশ্ন তুলল কলকাতা হাইকোর্ট। তপনবাবু যে খুন হওয়ার দু’বছর আগেই প্রশাসনের কাছে নিজের প্রাণহানির আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, সে কথা উল্লেখ করে শুক্রবার হাইকোর্টের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের পর্যবেক্ষণ, “প্রশাসন খুন আটকাতে পারেনি। খুনিকেও ধরতে পারেনি।”

এবং ঘটনাটিকে রাজ্য সরকারের ব্যর্থতা হিসেবেই দেখছে হাইকোর্ট। ২০১১-র ৬ মে রাতে তপনবাবু খুন হন। হত্যাকাণ্ডের সিবিআই-তদন্ত চেয়ে তাঁর স্ত্রী প্রতিমাদেবী ২০১২-য় হাইকোর্টে যান। ইতিমধ্যে গত বছর হাওড়া আদালতে খুনের মামলার রায় ঘোষণা হয়েছে। তপন-হত্যায় জড়িত অভিযোগে রাজ্য পুলিশের সিআইডি যে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছিল, উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণের অভাবে হাওড়া আদালত তাঁদের বেকসুর খালাস করে দিয়েছে। এ দিন হাইকোর্টে প্রতিমাদেবীর মামলাটির শুনানি ছিল।

বিচারপতি দত্তের এজলাসের সেই শুনানিতে সরকারি কৌঁসুলি প্রদীপ রায় সিবিআই-তদন্তের আর্জির বিরোধিতা করে বলেন, নিম্ন আদালতে মামলার রায় ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। তার প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতে আপিল-মামলা হতে পারে। কিন্তু সিবিআই-তদন্তের দাবিতে দায়ের করা মামলা টেকে না। ওঁর আরও যুক্তি, নিম্ন আদালতে বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন নিহতের স্ত্রী এক বারও অভিযোগ করেননি যে, পুলিশি-তদন্তে খামতি রয়েছে। এমনকী, বিচার চলাকালীন নির্দিষ্ট কারও বিরুদ্ধে প্রতিমাদেবী কোনও অভিযোগও জানাননি বলে দাবি করেন প্রদীপবাবু।

সরকারি কৌঁসুলির সওয়াল শুনে বিচারপতি দত্ত বলেন, এতে সন্দেহ নেই যে, তপনবাবু খুন হয়েছেন। রাষ্ট্র এক নাগরিককে হারিয়েছে। খুনিকে খুঁজে বার করা রাজ্য সরকারের কাজ। খুনের মামলায় তথ্য-প্রমাণ জোগাড় করাও রাজ্যের দায়িত্ব। “সুবিচার না-পেলে নিহতের পরিবার উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ তো হবেনই!” মন্তব্য বিচারপতির। একই সঙ্গে তাঁর প্রশ্ন, “নিম্ন আদালতের বিচারক রায় ঘোষণার সময়ে পরিষ্কার জানিয়েছেন, তিনি তদন্তে খুশি নন। এখন হাইকোর্ট যদি নিজের ক্ষমতাবলে পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দেয়, তাতে অসুবিধেটা কীসের? সিবিআই-কে তদন্ত করতে বললে রাজ্যের আপত্তি কোথায়?”

অন্য দিকে সরকারপক্ষের দাবি: তদন্তের ক্ষেত্রে পুলিশের তরফে গাফিলতি হয়নি। সরকারি কৌঁসুলি সওয়ালে জানান, প্রথমে কোনও সাক্ষীই নিম্ন আদালতে হাজির হচ্ছিলেন না। পরে সমন পাঠিয়ে তাঁদের হাজির করা হয়। কিন্তু সাক্ষীরা আদালতে কিছু জানাননি। “এই পরিস্থিতিতে তদন্তকারীর কী-ই বা করার থাকতে পারে?” প্রশ্ন প্রদীপবাবুর। তাঁর এ-ও মন্তব্য, নিহতের স্ত্রী শুধু এক জনকেই (রাজ্যের কৃষি বিপণনমন্ত্রী তথা হাওড়া জেলা তৃণমূলের সভাপতি অরূপ রায়) গ্রেফতারের দাবি তুলছেন! শুনে বিচারপতি দত্ত প্রদীপবাবুর কাছে জানতে চান, তিনি কি সেই ব্যক্তির (মন্ত্রীর) আইনজীবী? যদি না-হয়ে থাকেন, তা হলে তাঁর আপত্তির কারণ কী?

এর পরে বিচারপতি দত্ত বলেন, খুনের ঘটনার কোনও প্রত্যক্ষদর্শী না-থাকলে পারিপার্শ্বিক তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে প্রকৃত আততায়ীকে খুঁজে বার করাটা তদন্তকারীর দায়িত্ব। নিম্ন আদালতে বিচার চলাকালীন সরকারি কৌঁসুলি কোনও সাক্ষীর কাছে অপরাধীদের সম্পর্কে কিছু জানতে চাইলেন না কেন, সে ব্যাপারেও বিস্ময় প্রকাশ করেছে হাইকোর্ট।

প্রসঙ্গত, খুনের রাতে তপনবাবুর মোটরসাইকেলের পিছনে বসে থাকা যুবক গুলিবিদ্ধ না-হওয়ায় বিচারপতি দত্ত আগেই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। এ দিন তিনি সরকারি কৌঁসুলির কাছে জানতে চান, আততায়ীরা আট রাউন্ড গুলি চালিয়েছিল। তপনবাবুর শরীরে ছ’টি গুলি ঢুকেছিল। ওগুলো একাধিক বন্দুক থেকে ছোড়া হয়েছিল নাকি একটা বন্দুক থেকে? এ বিষয়ে তদন্তকারী পুলিশ অফিসার কোনও বিশেষজ্ঞের মতামত (ব্যালিস্টিক এক্সপার্ট রিপোর্ট) নিয়েছেন কি না, সরকারপক্ষের কাছে তা-ও জানতে চেয়েছেন বিচারপতি দত্ত।

মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ১৩ জানুয়ারি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

tapan dutta murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE