Advertisement
১৯ মে ২০২৪

তল্লাশির নামে পুলিশি নির্যাতন নালিশ পাড়ুইয়ে

তল্লাশির নামে মাঝরাতে ঘরে ঢুকে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের হেনস্থা করার অভিযোগ উঠল পুলিশের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার রাতে পাড়ুই থানার বাতিকার পঞ্চায়েতের নরসুণ্ডা গ্রামের ঘটনা। পুলিশ যদিও ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এসডিপিও (বোলপুর) সূর্যপ্রতাপ যাদব বলেন, “লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে একটি মামলার অভিযুক্তদের খোঁজে পুলিশ ওই গ্রামে গিয়েছিল। কাইকে হেনস্থা করা হয়নি।”

নিজস্ব সংবাদদাতা
পাড়ুই শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:১৫
Share: Save:

তল্লাশির নামে মাঝরাতে ঘরে ঢুকে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের হেনস্থা করার অভিযোগ উঠল পুলিশের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার রাতে পাড়ুই থানার বাতিকার পঞ্চায়েতের নরসুণ্ডা গ্রামের ঘটনা। পুলিশ যদিও ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এসডিপিও (বোলপুর) সূর্যপ্রতাপ যাদব বলেন, “লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে একটি মামলার অভিযুক্তদের খোঁজে পুলিশ ওই গ্রামে গিয়েছিল। কাইকে হেনস্থা করা হয়নি।” অন্য দিকে, তৃণমূলের দাবি, বিজেপি-র দুষ্কৃতীরা ওই গ্রামে এক দলীয় সমর্থকের বাড়িতে হামলা চালায়। ওই ঘটনায় অভিযুক্তদের ধরার জন্যই পুলিশ গ্রামে গিয়েছিল। যদিও এখনও পর্যন্ত কেউ ধরা পড়েনি।

প্রসঙ্গত, গত ২৪ অক্টোবর বোমা উদ্ধার করতে এসে চৌমণ্ডলপুর গ্রামে আক্রান্ত হন পাড়ুই থানার ওসি প্রসেনজিত্‌ দত্ত। ওই সময়ও বাসিন্দাদের একাংশ অবশ্য পুলিশেরই বিরুদ্ধে পাল্টা মারধর-ভাঙচুর ও হেনস্থার একই অভিযোগ এনেছিলেন। তার পরে পরেই পাড়ুই থানা এলাকায় সাম্প্রতিক কালে সব চেয়ে বড় ঘটনাগুলি ঘটে গিয়েছে। মাখড়া, ইমাদপুর, সিরশিট্টা ছাতারবান্দি গ্রামে তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষে বেশ কয়েক জন খুন হয়ে গিয়েছেন। ওই সব ঘটনায় অভিযুক্তদের ধরতে মাঝে মধ্যেই তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। বিজেপি-র জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডল বলেন, “তৃণমূলের জনসমর্থন তলানিতে ঠেকেছে। তাই দুষ্কৃতী সমাজবিরোধীদের দিয়ে এলাকা দখল করার পরিকল্পনা করছে। হারানো জমি পুনরুদ্ধারের জন্য তৃণমূল মরিয়া হয়ে আক্রমণ করেছে, আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা সাজাচ্ছে। অন্য দিকে, পুলিশ দিয়ে সন্ত্রাস করছে। এটা মানুষ মেনে নেবেন না।” তাঁর আরও বক্তব্য, “অভিযুক্তদের পুলিশ ধরুক, তাতে কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু অভিযুক্তদের ধরার নামে নিরপরাধ মানুষ, বিশেষ করে বেছে বেছে বিজেপি-র কর্মী-সমর্থকদের হেনস্থা আমরা বরদাস্ত করব না।”

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার বিকেলে নরসুণ্ডা গ্রামের মুসলিম পাড়ার বাসিন্দা তৃণমূল সমর্থক শেখ জিয়ারুল ওরফে শেখ কটা ধান ঝাড়াইয়ের কাজ করছিলেন। ওই সময় বিজেপি-র কয়েক জন তাঁকে শাসানি দেয় বলে অভিযোগ। বাড়িতে ভাঙচুর চালানোর পাশাপাশি রাতে তাঁকে মারধরও করা হয় বলে তৃণমূলের অভিযোগ। ওই রাতেই পাড়ুই থানায় জিয়ারুল অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশের দাবি, ওই অভিযোগের ভিত্তিতেই পুলিশ ঘটনার রাতে এবং পরের দিন সকালে ওই গ্রামে যায়। কেবল অভিযুক্তদের বাড়িতেই তল্লাশি হয়েছে। হেনস্থা বা মারধরের কোনও ঘটনা ঘটেনি। যদিও বিজেপি-র পাল্টা অভিযোগ, বৃহস্পতিবার রাতে তো বটেই এমনকী শুক্রবার ভোর রাতে দ্বিতীয় দফায় বারো গাড়ি পুলিশ গ্রামে ঢুকে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের হেনস্থা করেছে।

বিজেপি-র অভিযোগ, নরসুণ্ডার কালীতলা, কবিরাজ পাড়া, পশ্চিম পাড়া-সহ বিভিন্ন জায়গায় শেখ ইব্রাহিম, শেখ করিম, মহেশ দাস, শেখ ফজলুল হকদের মতো কয়েক জন দলীয় কর্মী-সমর্থকদের বাড়ি বেছে নিয়ে পুলিশ অভিযান চালিয়েছে। ঘরের বয়স্ক ও মহিলাদের শাসিয়েছে। এমনকী সংবাদমাধ্যমের কাছে এ নিয়ে মুখ না খোলার জন্য পুলিশ তাঁদের শাসিয়েছে বলেও গ্রামের বিজেপি সমর্থকদের দাবি। কিছু বাড়িতে আবার পুলিশের বিরুদ্ধে আসবাবপত্র ভাঙচুরের অভিযোগও উঠেছে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিজেপি সমর্থকের ক্ষোভ, “পুলিশ আর তৃণমূলের সন্ত্রাসের ভয়ে গ্রামে থাকা দায় হয়ে উঠেছে। এই ঠান্ডাতেও মাঝে মধ্যেই মাঠে রাত কাটাতে হয়। ধানও মাঠে পরে থেকে নষ্ট হচ্ছে। কাটতে যেতে পারছি না। কীভাবে দিন চলবে বুঝতে পারছি না।”

তৃণমূলের পাড়ুই থানা কমিটির চেয়ারম্যান মুস্তাক হোসেন অবশ্য দুধকুমারের দাবিকে উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর পাল্টা দাবি, “সিপিএম ছেড়ে বিজেপিতে নাম লেখানো কিছু সমাজবিরোধী আমাদের সমর্থকের বাড়িতে হামলা করেছে। থানায় আট সমাজবিরোধীর নামে অভিযোগ করেছি।” তাঁর অভিযোগ, ওই এলাকায় সমাজবিরোধীরা সন্ত্রাস করে গ্রাম দখলে রেখেছিল। এলাকার মানুষ তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় দুষ্কৃতীরা গত কয়েক দিন ধরে ওই এলাকায় ভয় দেখাচ্ছিল। বৃহস্পতিবার রাতে তারাই তাণ্ডব চালিয়েছে বলে মুস্তাকের অভিযোগ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

parui police harassment searching
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE