যাকে নিয়ে মহোৎসবেও বড় ভয়, সেই বর্ষার বিদায় নিতে দেরি আছে। তবু আম-বাঙালির জন্য সুখবরই দিচ্ছে হাওয়া অফিস। তাদের আশ্বাস, পাঁজির সঙ্গে আপাতত বোঝাপড়া করে নেওয়ারই ইঙ্গিত দিচ্ছে প্রকৃতি। অর্থাৎ ভরা শরতে বর্ষা গ্যাঁট হয়ে বসে থাকলেও পুজোয় বৃষ্টির আশঙ্কা তেমন নেই।
দুর্গা এ বার একটু আগেভাগেই বাপের বাড়িতে আসছেন। তাই পুজোকর্তা থেকে আমজনতা, সকলেই চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন। কারণ, দক্ষিণবঙ্গ থেকে খাতায়-কলমে বর্ষা যে এখনও বিদায় নেয়নি! উৎসবের কয়েক দিনও আকাশ যদি বেঁকে বসে! কপালে ভাঁজের কারণ সেটাই। তবে রবিবার আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়ে দিয়েছে, পুজোর ক’টা দিন অন্তত রাজ্যে বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। কারণ, এখনও পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে কোনও ঘূর্ণাবর্ত বা নিম্নচাপ তৈরির ইঙ্গিত পাননি আবহবিজ্ঞানীরা।
“পুজোর সময় ঝড়ঝঞ্ঝার সম্ভাবনা নেই। শুধু তা-ই নয়, আকাশ পরিষ্কার থাকায় তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকবে,” বলছেন আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ। তবে দশমীতে কোনও কোনও এলাকায় স্থানীয় ভাবে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হলেও হতে পারে।
আবহবিদদের একাংশ বলছেন, গত কয়েক বছরে বর্ষার ক্যালেন্ডার পিছিয়ে গিয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী ৮ অক্টোবর তার বিদায় নেওয়ার কথা। কিন্তু ইদানীং ওই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের আগে তার রেশ কাটছে না। ফলে গত কয়েক বছরে পুজোয় বৃষ্টি বাঙালির কিছুটা হলেও পরিচিত হয়ে গিয়েছে। ২০১৩ সালে পুজোর কয়েক দিন আগেই আন্দামান সাগরে গভীর নিম্নচাপ তৈরি হয়েছিল। শক্তি বাড়িয়ে তা পরিণত হয় অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ে। আবহবিদেরা তার নাম দেন ‘পিলিন’। দুর্গাষ্টমীর রাতে সেই ঝড় আছড়ে পড়েছিল ওড়িশার গোপালপুরে। তার প্রভাবে প্রবল বৃষ্টিতে ধুয়ে গিয়েছিল মহানগরীর অষ্টমী-নবমীও।
গত বছরের সেই অভিজ্ঞতার মধ্যে এ বার বর্ষা-বিদায়ের আগেই পুজো এসে যাওয়ায় পূর্বাভাস নিয়ে কিছুটা চিন্তায় ছিলেন আবহাওয়া দফতরের বিজ্ঞানীরাও। হাওয়া অফিস সূত্রের খবর, বর্ষার গতিপ্রকৃতি, বঙ্গোপসাগরের হালহকিকত দেখতে নিয়মিত উপগ্রহ-চিত্র, রেডারে চোখ রাখছেন তাঁরা। বস্তুত, মহালয়ার কয়েক দিন আগেই বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া একটি নিম্নচাপের ধাক্কায় জোর বৃষ্টি শুরু হয়েছিল দক্ষিণবঙ্গে। তা দেখে চিন্তা বেড়ে গিয়েছিল পুজোকর্তাদের। আবহবিজ্ঞানীরা বলছেন, বর্ষার শেষ দফায় অনেক সময়েই পরপর নিম্নচাপ তৈরি হয়। সেই প্রবণতা অনুযায়ী মহালয়ার আগের ওই নিম্নচাপের পিছনে পিছনে আরও একটা নিম্নচাপ হাজির হলে পুজোর আনন্দ জলে জল হয়ে যেতেই পারে। তবে আশার কথা, রবিবার পর্যন্ত তেমন আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে না।
আবহাওয়া দফতর এ দিন জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরের কোথাও তেমন মেঘ নেই। উল্টে উত্তর-পশ্চিম ভারত থেকে বর্ষার বিদায় শুরু হয়েছে। দিন দুয়েকের মধ্যে বর্ষা বিদায় নেবে মধ্য ভারত থেকেও। পুজোর পরে পরে এ রাজ্য থেকে বর্ষার বিদায় নেওয়ার পালা। আবহবিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা, বর্ষা বিদায় নেওয়ার সময় রাজ্যের পরিমণ্ডলে ঠান্ডা বাতাস ঢুকবে। সেই ঠান্ডা বাতাস আর বায়ুমণ্ডলে থাকা গরম বাতাস মিশে স্থানীয় ভাবে বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হতে পারে। স্থানীয় ভাবে বৃষ্টি হতে পারে সেই মেঘ থেকেই। “সেই বৃষ্টিতে অবশ্য পুজো পণ্ড হবে না,” আশ্বাস গোকুলবাবুর।
পুজোর আগেই যে শরতের আবহাওয়া মিলবে, সেটা অবশ্য দেবীপক্ষের সূচনার দিনেই আঁচ করা গিয়েছিল। কালো মেঘলা আকাশের বদলে দেখা দিয়েছিল রোদ-ঝলমলে নীল নির্মল আকাশ আর সাদা পেঁজা তুলো মেঘ। সে-দিন রাতের দিকে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের কোথাও কোথাও বৃষ্টি হয়েছিল ঠিকই। তবে তা বিশেষ স্থায়ী হয়নি। দেবীপক্ষ যত গড়িয়েছে, ততই উন্নতি হয়েছে আবহাওয়ার। দিনের বেলা পারদও বেশ চড়েছে চড়চড়িয়ে।
হাওয়া অফিস সূত্রের খবর, গত কয়েক দিনে কলকাতা এবং সংলগ্ন এলাকার তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে ৩-৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি থাকছে। রবিবার ছিল পাঁচ ডিগ্রি বেশি। আবহবিদেরা বলছেন, আকাশে মেঘ না-থাকায় রোদের তেজ বেড়েছে। মরসুমের এই সময়ে এমনটাই দস্তুর।
সেই শরৎ-আলোর অঞ্জলিতেই উৎসব কাটবে, মিলেছে বরাভয়।