Advertisement
E-Paper

দীনেশদের বাঁধার আশায় দলে ফের রদবদল

ফের রদবদল তৃণমূলের অন্দরে! লোকসভা ভোটের পর গত আট মাসে এই নিয়ে কত বার রাজ্যের শাসক দল সাংগঠনিক রদবদল করল, তা মনে করতে পারছেন না তৃণমূল নেতারাই। তাঁদের একটা বড় অংশের মতে, দলে অবিশ্বাসের ছায়া যত দীর্ঘ হচ্ছে, ততই ফুটোফাটা ঢাকা দেওয়ার মরিয়া চেষ্টা করছেন দলনেত্রী। কিন্তু ঘনঘন রদবদলে আসলে প্রকট হচ্ছে দলের দেউলিয়া দশাই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:৫৮
কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে দলীয় বৈঠকের পরে শুভেন্দু অধিকারী, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও সৌগত রায় ।  —নিজস্ব চিত্র

কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে দলীয় বৈঠকের পরে শুভেন্দু অধিকারী, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও সৌগত রায় । —নিজস্ব চিত্র

ফের রদবদল তৃণমূলের অন্দরে!

লোকসভা ভোটের পর গত আট মাসে এই নিয়ে কত বার রাজ্যের শাসক দল সাংগঠনিক রদবদল করল, তা মনে করতে পারছেন না তৃণমূল নেতারাই। তাঁদের একটা বড় অংশের মতে, দলে অবিশ্বাসের ছায়া যত দীর্ঘ হচ্ছে, ততই ফুটোফাটা ঢাকা দেওয়ার মরিয়া চেষ্টা করছেন দলনেত্রী। কিন্তু ঘনঘন রদবদলে আসলে প্রকট হচ্ছে দলের দেউলিয়া দশাই।

এ বারের রদবদলে সব চেয়ে উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্ত অবশ্যই তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের অতিরিক্ত দায়িত্বে দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীকে তুলে আনা। এত দিন যে পদে একচ্ছত্র ছিলেন মুকুল রায়। অধুনা বিরূপ মুকুলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ানোর কৌশল নিলেও আর এক ‘বিদ্রোহী’ দীনেশ ত্রিবেদীর ক্ষেত্রে কিন্তু উল্টো পথে হেঁটেছেন মমতা। সর্বভারতীয় সভাপতির নতুন পদ তৈরি করে সেখানে বসিয়েছেন ব্যারাকপুরের সাংসদকে।

রাজীব গাঁধীর আমলে কংগ্রেসে সহ সভাপতির পদ তৈরি হয়েছিল বিদ্রোহী অর্জুন সিংহকে শান্ত করতে। মমতাও সেই পথেই হেঁটেছেন। সম্প্রতি প্রকাশ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রশংসা এবং দলনেত্রীর সমালোচনা করেছেন দীনেশ। এক তৃণমূল নেতার কথায়, “ক’দিন আগেই মুম্বই থেকে ফেরার পথে বিমানে বিজেপি নেতা শাহনওয়াজ হুসেনের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা সেরেছেন দীনেশবাবু। দিল্লিতে অমিত শাহের ছেলের বিয়ে উপলক্ষে আয়োজিত ভোজসভাতেও যেতে পারেন তিনি। এ সবই মমতার জানা। তাঁর নতুন দায়িত্ব দিয়ে দীনেশকে বেঁধে রাখার চেষ্টা করলেন তিনি।”

দীনেশ অবশ্য প্রকাশ্যে এ নিয়ে মুখ খোলেননি। কিন্তু তৃণমূল নেতাদেরই একাংশ বলছেন, কারও যদি যাওয়ার হয়, তা হলে কি পদ দিয়ে তাঁকে বেঁধে রাখা যায়! এ নিয়ে দলের এক জেলা সভাপতির উদাহরণ টানছেন তাঁরা। ওই নেতা যখন কংগ্রেস ছাড়ব ছাড়ব করছেন, তখন তাঁকে বেঁধে রাখতে জেলা সভাপতির পদ দিয়েছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব। সেই পদ পাওয়ার পদ সাত দিনও গড়ায়নি, তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন ওই নেতা।

একে তো পদ দিয়েই নেতা ধরে রাখা যায় না, তার উপরে যে পদ দেওয়া হয়েছে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠে গিয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। যেমন তমলুকের সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর ক্ষেত্রে। লোকসভা ভোটের পরে ৩০ মে শুভেন্দুকে যুব তৃণমূল সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন মমতা। তার পরই অতীতের বিরোধ ভুলে মুকুলের কাছাকাছি চলে আসেন শুভেন্দু। সেই নৈকট্য ভাঙতে গত বারের রদবদলে শুভেন্দুকে দলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছিল। দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল মালদহ জেলার। এ দিন তাঁকে অসমের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যা দেখে দলেরই এক নেতার সরস মন্তব্য, “কাঁথি থেকে শুভেন্দুর উত্তর হয়ে উত্তর-পূর্বে যাত্রা শুরু হয়েছে! অসমে তৃণমূলের হয়ে কী-ই বা করার আছে, কে জানে!”

শুভেন্দুকে গুরুত্ব দিয়ে ধরে রাখার চেষ্টা হচ্ছে মমতা ঘনিষ্ঠ মহল এমন ব্যাখ্যা দিলেও এ বারের পদ যে মোটেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, তা কবুল করছেন দলের বেশির ভাগ নেতাই। সুতরাং শুভেন্দু শেষ পর্যন্ত কী করেন তা নিয়ে জল্পনা কমার বদলে এ দিন আরও বেড়েছে।

তৃণমূলের একটি অংশের অবশ্য বিশ্লেষণ, এই পদক্ষেপের মধ্যে দিয়ে নেত্রী আসলে বিভাজনের রাজনীতি করতে চেয়েছেন। এত দিন উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির দায়িত্বে ছিলেন মুকুল-ঘনিষ্ঠ বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত। তাঁকে সরিয়ে কিছুটা দায়িত্ব শুভেন্দুকে দিয়ে একটা অবিশ্বাসের বাতাবরণ তৈরি করার চেষ্টা করেছেন মমতা। সব্যসাচীর হাতে থাকা রাজ্যগুলির মধ্যে ত্রিপুরার দায়িত্ব পেয়েছেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। উত্তর-পূর্বের বাকি রাজ্যগুলির পাশাপাশি কেরলও সামলাবেন ডেরেক ও’ব্রায়েন।

বিভিন্ন জেলার সভাপতি এবং শাখা সংগঠনগুলির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে এ দিন তাঁর কালীঘাটের বাড়িতে বৈঠক ডেকেছিলেন মমতা। আসন্ন পুরভোট নিয়ে বৈঠক ডাকা হলেও সাংগঠনিক রদবদলই মুখ্য হয়ে ওঠে সেখানে। মন্ত্রী সুব্রতবাবু এবং সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রস্তাব দেন, জাতীয় স্তরে অ-বিজেপি শক্তির সঙ্গে তৃণমূল নেত্রীর সমন্বয় বাড়ানো উচিত। সেই মতো সংগঠনেও সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া দরকার। তাঁদের সমর্থন করেই দীনেশ বলেন, অ-বিজেপি দলগুলির কাছে এখন তৃণমূল নেত্রীর গ্রহণযোগ্যতা বিপুল। এই সূত্র ধরেই মমতা বলেন, অন্য রাজ্যেও তিনি দলকে সম্প্রসারিত করতে চান। তাই সংগঠনের কিছু পদে নতুন অন্তর্ভুক্তি করতে হচ্ছে। বৈঠকের পরে দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “জাতীয় স্তরে আমাদের দলের ভূমিকা বিস্তৃত হচ্ছে। সবাই চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যাতে বিভিন্ন রাজ্যে নিজে যান। সে দিকে খেয়াল রেখেই জাতীয় স্তরে দলের কিছু পদে নতুন অন্তর্ভুক্তি হয়েছে।”

পার্থবাবুই জানান, কল্যাণবাবু ও ডেরেক জাতীয় স্তরে সমমনোভাবাপন্ন দলগুলির সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন। দলের জাতীয় সম্পাদকমণ্ডলী তৈরি করে সেখানে ডেরেকের সঙ্গেই সদস্য করা হয়েছে ফিরহাদ (ববি) হাকিম ও কাকলি ঘোষ দস্তিদারকে। ফিরহাদকে যেমন সংখ্যালঘু মুখ হিসাবে দলে বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছেন মমতা, তেমনই বিধাননগর-রাজারহাটে সব্যসাচী-বিরোধী বলে পরিচিত কাকলিকে দায়িত্ব দিয়ে মুকুল-শিবিরকে আরও একটি বার্তা দিয়ে রেখেছেন। সুব্রতবাবু-শুভেন্দুরা ভার পাওয়ায় সব্যসাচীকে কি উত্তর-পূর্বের দায়িত্ব থেকে একেবারে সরিয়ে দেওয়া হল? দলের এক শীর্ষ নেতার জবাব, “নতুনদের দায়িত্ব দেওয়া হলে পুরনোদের তো সরে যেতেই হয়!”

পুরভোটে দলের সাংগঠনিক তৎপরতা বাড়াতে জেলা ও রাজ্য স্তরে দু’টি কমিটি গড়ে দিয়েছেন মমতা। প্রার্থী বাছাই থেকে শুরু করে সার্বিক পুরভোট পরিচালনার প্রক্রিয়া পর্যালোচনার কাজ এই দুই কমিটিকে করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক বাছাইয়ের পরে অবশ্য প্রত্যাশিত ভাবেই চূড়ান্ত প্রার্থী-তালিকা অনুমোদন করবেন দলনেত্রী স্বয়ং। দলের এক নেতার কথায়, “তৃণমূলের সব কিছু এখন থেকে দলনেত্রীই দেখবেন। বাকিরা সব শুধুই সৈনিক!”

dinesh trivedi mamata bandhopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy