Advertisement
E-Paper

দেড়শো কোটি সরিয়ে পালান সুদীপ্ত: সিবিআই

সারদা তখন ডুবে গিয়েছে। ফাঁস হয়ে গিয়েছে হাজার হাজার মানুষকে প্রতারণার বিষয়টিও। ২০১৩-র ৯ এপ্রিল। সময় সকাল ১০টা। সল্টলেকের মিডল্যান্ড পার্কের অফিসে গেলেন সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন। সেটাই শেষ বার সুদীপ্তর ওই অফিসে যাওয়া। তিনি সেখানে পৌঁছনোর কিছু ক্ষণ আগেই তাঁর নির্দেশ মতো চারটি বস্তা ঢুকেছিল ওই অফিসে তাঁর নিজস্ব চেম্বারে। দু’টি গাড়িতে বয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ওই চারটি ভারী বস্তা। তাতে ভরা ছিল আমানতকারীদের কাছ থেকে জমা নেওয়া নগদ প্রায় দেড়শো কোটি টাকা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৪ ০৩:৪৭

সারদা তখন ডুবে গিয়েছে। ফাঁস হয়ে গিয়েছে হাজার হাজার মানুষকে প্রতারণার বিষয়টিও। ২০১৩-র ৯ এপ্রিল। সময় সকাল ১০টা। সল্টলেকের মিডল্যান্ড পার্কের অফিসে গেলেন সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন। সেটাই শেষ বার সুদীপ্তর ওই অফিসে যাওয়া। তিনি সেখানে পৌঁছনোর কিছু ক্ষণ আগেই তাঁর নির্দেশ মতো চারটি বস্তা ঢুকেছিল ওই অফিসে তাঁর নিজস্ব চেম্বারে। দু’টি গাড়িতে বয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ওই চারটি ভারী বস্তা। তাতে ভরা ছিল আমানতকারীদের কাছ থেকে জমা নেওয়া নগদ প্রায় দেড়শো কোটি টাকা।

সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তে নেমে এই খবর জানতে পেরেছে বলে দাবি জানিয়েছে সিবিআই। তদন্তকারীদের বক্তব্য, সুদীপ্ত সেনের যে দুই বিশ্বস্ত গাড়িচালক গাড়িতে করে চারটি বস্তা বয়ে মিডল্যান্ড পার্কের অফিসে দিয়ে এসেছিলেন, তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করেই ওই তথ্য পাওয়া গিয়েছে। সিবিআই সূত্রের খবর, সারদার ওই দুই গাড়িচালকের বয়ান অনুযায়ী, বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগৃহীত আমানতকারীদের অর্থ ২০১৩-র মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে সল্টলেকে সারদার অন্য একটি অফিসে রাখা ছিল। সেখান থেকে সুদীপ্তর নির্দেশ অনুযায়ী ওই বিপুল নগদ মিডল্যান্ড পার্কের অফিসে পৌঁছে দেন ওই দুই চালক। তবে তার পর ওই দেড়শো কোটি টাকা নিয়ে সুদীপ্ত সেন কী করলেন, সে কথা তাঁরা জানেন না বলে ওই দু’জন সিবিআইয়ের কাছে দাবি করেছেন।

তদন্তকারীদের একাংশের ধারণা, বিপদ আঁচ করতে পেরে সেই টাকা অন্যত্র সরিয়ে রেখেছেন সুদীপ্ত, কিন্তু এখন মুখে কুলুপ এঁটেছেন। ওই টাকা সুদীপ্তর কথা মতো মিডল্যান্ড পার্কের অফিসে পৌঁছনোর দু’সপ্তাহ পর কাশ্মীরের একটি হোটেল থেকে গ্রেফতার করা হয় সুদীপ্ত সেনকে। বস্তায় ভরে টাকা পৌঁছে দেওয়ার তথ্য ওই দুই গাড়িচালকের কাছ থেকে এখন সিবিআই পেলেও গত এক বছর ধরে রাজ্য পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল বা ‘সিট’ কিন্তু তাঁদের সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজনই মনে করেনি।

সিবিআই সূত্রের খবর, কেষ্টপুর ও বেহালার বাসিন্দা ওই দুই গাড়িচালক জেরায় আরও দাবি করেছেন, ২০১১-র বিধানসভা নির্বাচনের কয়েক মাস আগে সারদার মিডল্যান্ড পার্কের অফিস থেকেই নগদ মোট ৩৫ কোটি টাকা দফায় দফায় তাঁরা পৌঁছে দিয়েছেন এলগিন রোডের একটি বাড়িতে। জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে এক চালক জানান, তিনটি লাল ট্রলি ব্যাগে টাকা ভরে মাঝরাতে মিডল্যান্ড পার্কের অফিস থেকে দু’টি গাড়ি রওনা হত এলগিন রোডের ওই বাড়ির উদ্দেশে। টাকা গুনে তুলে দেওয়া হত এক প্রভাবশালী ব্যক্তির হাতে। তার পর খালি ব্যাগ নিয়ে ফিরে আসত দু’টি গাড়ি। এ কথা জানার পর এলগিন রোডের ওই বাড়ি সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজ নিচ্ছেন তদন্তকারীরা। ওই বাড়ির সঙ্গে কোনও রাজনৈতিক দলের যোগ রয়েছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সেই সঙ্গে চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে ওই প্রভাবশালী ব্যক্তিকেও। তবে ইতিমধ্যেই ছবি দেখানো হলে সারদার নিরাপত্তারক্ষীরা সে সব দেখে শনাক্ত করেছেন কয়েক জন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও মহিলাকে, যাঁরা মাঝেমধ্যেই রাতে সারদার মিডল্যান্ত পার্কের অফিসে যেতেন।

তদন্তে নেমে ঠিক যেমন সুদীপ্ত সেনের স্ত্রী ও ছেলেকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন অনুভব করেনি সিট, তেমনই তারা কথা বলেনি ওই দুই গাড়িচালকের সঙ্গেও। অথচ সিবিআই এখন জেনেছে, নিজের বিশাল সাম্রাজ্য চালানোর ফাঁকে ক’জন গাড়িচালককে প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্ব দিতেন সারদা কর্তা। কোনও বিশেষ কারণে তিনি অসম্ভব বিশ্বাস করতেন এই চালকদের। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, সুদীপ্তর একান্ত ব্যক্তিগত কাজের সাক্ষী কোনও না কোনও গাড়িচালক। আর তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করেই এখন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতে আসছে বলে দাবি সিবিআইয়ের।

sarada scam sudipto sen cbi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy