Advertisement
১৮ মে ২০২৪

ধর্নার মন রসনায়, জাগল না তৃণমূলের প্রতিবাদ

শীতের বিকালে ময়দানে কি ভোজন মেলা! ময়দান চত্বরে সোমবারের বিকালে ইতিউতি উঠল এমন প্রশ্ন! কারণ, ময়দানের একটি মঞ্চ ঘিরে তখন ফুচকা, আলু-কাবলি, স্যাঁকা পাপড়, কাটা ফল, আইসক্রিম-সহ হরেক কিসিমের খাবার নিয়ে বিক্রেতাদের ভিড়। মঞ্চের পিছনের মাঠে নেতারা কেউ টপাটপ মুখে ফেলছেন ফল, কেউ বা মিষ্টি। একটু আগে মিছিলে যাঁরা হেঁটেছিলেন, তাঁদের কেউ কেউ আবার তরকারি-রাধাবল্লভীতে ব্যস্ত! কে বলবে, এই মঞ্চ থেকেই ৪৮ ঘণ্টা আগে বাংলার গর্জে ওঠার ডাক দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী!

বেলা সাড়ে তিনটের সময়ে ধর্না মঞ্চের হাল। সোমবার।  নিজস্ব চিত্র

বেলা সাড়ে তিনটের সময়ে ধর্না মঞ্চের হাল। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:৪৮
Share: Save:

শীতের বিকালে ময়দানে কি ভোজন মেলা!

ময়দান চত্বরে সোমবারের বিকালে ইতিউতি উঠল এমন প্রশ্ন! কারণ, ময়দানের একটি মঞ্চ ঘিরে তখন ফুচকা, আলু-কাবলি, স্যাঁকা পাপড়, কাটা ফল, আইসক্রিম-সহ হরেক কিসিমের খাবার নিয়ে বিক্রেতাদের ভিড়। মঞ্চের পিছনের মাঠে নেতারা কেউ টপাটপ মুখে ফেলছেন ফল, কেউ বা মিষ্টি। একটু আগে মিছিলে যাঁরা হেঁটেছিলেন, তাঁদের কেউ কেউ আবার তরকারি-রাধাবল্লভীতে ব্যস্ত! কে বলবে, এই মঞ্চ থেকেই ৪৮ ঘণ্টা আগে বাংলার গর্জে ওঠার ডাক দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী!

প্রতিবাদের দ্বিতীয় দিনেই অবশ্য ধৈর্যচ্যুতি ঘটেছিল কর্মীদের। বেলা বাড়তেই রবিবার ক্রমশ ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল মদন মিত্রের গ্রেফতারের প্রতিবাদে গড়ে ওঠা ধর্না-মঞ্চ। সোমবার ধর্নার তৃতীয় দিনে সেই ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’-এ ফের রাস্তায় নেমেছিলেন প্রতিবাদীরা। গোষ্ঠ পালের মূর্তির পাদদেশ থেকে মিছিল বেরিয়ে পার্ক স্ট্রিট মোড়ের সামনে দিয়ে আবার ধর্না-মঞ্চেই ফিরেছে। মিছিলের কলেবর ধর্নার প্রথম দিন শনিবারের চেয়ে আকারে-বহরে এ দিন বড় ছিল। রবিবারের নিষ্প্রভ ধর্নার জৌলুস বাড়াতে এ দিন তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ নামী খেলোয়াড় তো বটেই, কলকাতা পুর-এলাকার অধিকাংশ তৃণমূল কাউন্সিলর ও নেতা, শহর ও শহরতলির বিভিন্ন ক্লাবের সদস্যদেরও নামানো হয়েছিল। এমনকী, অরূপ বিশ্বাস, শশী পাঁজার মতো মন্ত্রী, কলকাতার ডেপুটি মেয়র ফরজানা আলম, পুরসভার চেয়ারম্যান সচ্চিদানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়, মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ, স্বপন সমাদ্দার, সুশান্ত ঘোষ, বিধায়ক পরেশ পাল, ইকবাল আহমেদ প্রমুখ অনুগামীদের নিয়ে ভিড় বাড়িয়েছিলেন। দূর-দূরান্ত থেকে বাসে, ম্যাটাডোরেও তৃণমূলের কর্মীদের নিয়ে আসা হয় মুখরক্ষার স্বার্থে। মিছিলের প্রথম দিকে মদন মিত্রের গ্রেফতারের প্রতিবাদে বেশ কিছু স্লোগান শোনা গেলেও শেষ দিকে তা কার্যত মৌনী রূপ নিয়েছিল! মিছিলের মাঝামাঝি থেকে ল্যাজ পর্যন্ত নিজেদের মধ্যে খোশ মেজাজে গল্প করতে করতে মিছিল ক্রমশ এগোতে থাকে মেয়ো রোডের দিকে। ডোরিনা ক্রসিং হয়ে দুপুর পৌনে তিনটে নাগাদ ধর্না-মঞ্চেই মিছিলের প্রত্যাবর্তন। কিন্তু এর পরেই ধর্না-মঞ্চ রবিবারের মতোই ভাঙা হাটের চেহারা নেয়।

মঞ্চের বেহাল অবস্থা নিয়ে মন্ত্রী অরূপকে প্রশ্ন করা হলে তিনি দেখিয়ে দেন প্রাক্তন ফুটবলার গৌতম সরকারকে! গৌতম বলেন, “আজকে যা হয়েছে, তা অভাবনীয়। প্রায় ৬০ হাজার মানুষ এসেছে।” কিন্তু তৃণমূল সূত্রের খবর, সব মিলিয়ে এ দিনের মিছিলে হাজার পঁচিশেক লোক ছিল। কিন্তু ৬০-ই হোক, ২৫-ই হোক, মঞ্চ কেন ফাঁকা? গৌতম

বলেন, “মিছিলে এসে কেউ চলে যেতেই পারেন। কিন্তু যাঁরা ধর্নার আয়োজক, তাঁরা সবাই ৫টা অবধি ছিলেন।” ক্রমশ পাতলা হওয়া ভিড়ের মাঝেই গৌতম বলেন, “ক্রীড়া জগতের জন্য তৃণমূল সরকার যা করেছে, কোনও সরকার করেনি। ক্রীড়ামন্ত্রীর অবদানও যথেষ্ট।”

তবে যে ফুটবলারের পা ছুঁয়ে গৌতম-সমরেশ চৌধুরীরা শনিবার ধর্নায় বসেছিলেন, সেই গোষ্ঠ পালের পুত্র নীরাংশু পাল বাকিদের ছাপিয়ে গিয়েছেন। বলেছেন, “আমার বাবা গোষ্ঠ পালকে ফুটবলার করুণা ভট্টাচার্য দেবতা বলেছিলেন। আজ তৃণমূলও বলছে, হে দেবতা, আমাদের দুর্গতি দূর করে সত্যের পথে প্রতিষ্ঠা করো।’’ যা শুনে তৃণমূল নেতা বিড়বিড় করে বলেন, “দিদি যদি শুনতেন, তা হলে এখানে ভূমিকম্প হতো!”

প্রতিবাদী-ধর্নার কাণ্ড-কারখানা দেখে কটাক্ষ করছে বিরোধীরা। সিপিএম নেতা শ্যামল চক্রবর্তীর মন্তব্য, “গোষ্ঠ পালের মূর্তির পাদদেশে একটা অবস্থান চলছে। এই সরকার যুবশ্রী, কন্যাশ্রী, বঙ্গশ্রী অনেক করেছে। ওখান থেকে চোরশ্রী উপাধি দেওয়ার ব্যবস্থা করা উচিত!”

আর বিজেপি সভাপতি রাহুল সিংহের কটাক্ষ, মদন পাছে সিবিআইয়ের কাছে ঝুলি উপুড় করে দেন! সেই ভয়েই এত আয়োজন!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE