Advertisement
E-Paper

নারী-হেনস্থা বাড়ছে সাইবার জালেও

মাস কয়েক আগেই এক যুবতীর বিবাহ-বিচ্ছেদের মামলার বয়ান শুনে চমকে গিয়েছিলেন আইনজীবী। আদালতে ওই তরুণীর স্বামী লিখিত অভিযোগে বলেন, মোবাইল ও ফেসবুকে আড়ি পেতে তিনি স্ত্রীর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের কথা জেনে তার ভিত্তিতেই মামলা ঠুকেছেন। আইনজীবী অবশ্য তরুণীকে জানান, ফোন বা ফেসবুকে স্বামীও আড়ি পাততে পারেন না। সেই অভিযোগেই রাজ্য সাইবার অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছেন হাওড়ার বাসিন্দা ওই যুবতী।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৫ ০২:৩৯

মাস কয়েক আগেই এক যুবতীর বিবাহ-বিচ্ছেদের মামলার বয়ান শুনে চমকে গিয়েছিলেন আইনজীবী। আদালতে ওই তরুণীর স্বামী লিখিত অভিযোগে বলেন, মোবাইল ও ফেসবুকে আড়ি পেতে তিনি স্ত্রীর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের কথা জেনে তার ভিত্তিতেই মামলা ঠুকেছেন।

আইনজীবী অবশ্য তরুণীকে জানান, ফোন বা ফেসবুকে স্বামীও আড়ি পাততে পারেন না। সেই অভিযোগেই রাজ্য সাইবার অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছেন হাওড়ার বাসিন্দা ওই যুবতী।

সাইবার বিশেষজ্ঞ এবং আইনজীবীরা বলছেন, হাওড়ার ওই তরুণীর ঘটনা সাইবার জগতে মহিলাদের হেনস্থার ঘটনায় নতুন সংযোজন। শুধু পথঘাটে নয়, সাইবার জগতেও মহিলাদের নিরাপত্তা এখন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ ইন্টারনেট, স্মার্টফোন, মোবাইল অ্যাপসের ব্যবহার যতই বাড়ছে, ততই ব্যক্তিগত জীবন উন্মুক্ত হয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। তারই ফায়দা তুলছে দুষ্কৃতীরা।

ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর (এনসিআরবি) তথ্য বলছে, ২০১২-এর তুলনায় ২০১৩ সালে দেশে সাইবার অপরাধ প্রায় ৬৪ শতাংশ বেড়েছে। এর একটি বড় অংশ মহিলাদের যৌন হেনস্থা সংক্রান্ত অপরাধ। কী ভাবে এই ফাঁদে পড়ছেন মহিলারা? সাইবার বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রযুক্তির উন্নতির ফলে ইন্টারনেট, স্মার্ট ফোন, অ্যাপসের ব্যবহার বাড়ছে। ফলে মহিলাদের সাইবার দুনিয়ার বন্ধু বাড়ছে। ‘বন্ধু’দের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে দুষ্কৃতীরা। শনিবার সাইবার আইন বিশেষজ্ঞ বিভাস চট্টোপাধ্যায় মহিলাদের সুরক্ষা নিয়ে এক অনুষ্ঠানে বলেন, নানা ছুতোয় সাইবার জগতে ঘনিষ্ঠতা তৈরি করে দুষ্কৃতীরা। তার পরে ব্যক্তিগত তথ্য ও ছবি হাতিয়ে ব্ল্যাকমেল করে। নানা পর্নোগ্রাফিক সাইটে সেই ছবি ছেড়ে দেওয়া হয়। “মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত বা নিঃসঙ্গ মহিলারাই দুষ্কৃতীদের সহজ শিকার”, বলেন বিভাসবাবু। পুলিশ জানায়, বহু ক্ষেত্রে পরিচিতরাই এই অপরাধে জড়িত থাকেন। বস্তুত, এ দেশে সাইবার অপরাধের গোড়ার দিকের ঘটনাগুলিও একই কথা বলেছিল।

২০০৪-এ একটি পাবলিক স্কুলের এক ছাত্রী ও তাঁর বন্ধুর একটি ঘনিষ্ঠ দৃশ্য ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। তদন্তে পুলিশ জেনেছিল, ছাত্রীর বন্ধুই সে দৃশ্য মোবাইল ক্যামেরায় তুলে তাঁর পরিচিতদের মধ্যে ছড়ায়। সেখান থেকে আইআইটি-র এক পড়ুয়া মারফত তা ইন্টারনেটে ছড়ায়। ২০০৩ সালে দিল্লিতে একটি দূতাবাসের মহিলা কর্মীকে হুমকি মেলের তদন্তের ক্ষেত্রেও একই কথা জেনেছিল পুলিশ।

বহু সাইবার বিশেষজ্ঞ বলছেন, ইন্টারনেটে অনেক সময়েই নিজের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস করেন মহিলারা। নিজের প্রচুর ব্যক্তিগত ছবিও ছেড়ে দেন। দুষ্কৃতীরা তার ফায়দা তোলে। পাশাপাশি, নানা সাইটে নিজের ই-মেল অ্যাড্রেস ছেড়ে দেওয়ায় ‘ট্রোজান’-এর মতো মারাত্মক ভাইরাসকেও কম্পিউটারে ঢোকার ব্যবস্থা করে দেন। এক সাইবার বিশেষজ্ঞের কথায়, “ট্রোজান কম্পিউটারের সিস্টেমে ঘাপটি মেরে বসে থাকে। ব্যবহারকারীর অজান্তেই তাঁর তথ্য তুলে দেয় হ্যাকারের হাতে।”

তা হলে বাঁচবার উপায় কী?

সাইবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইন্টারনেটে অবাঞ্ছিত বন্ধু এড়িয়ে চলুন। ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করা যাবে না। সংখ্যা ও অক্ষরের সমন্বয়ে পাসওয়ার্ড দিন। অচেনা, সন্দেহজনক মেল এড়িয়ে চলুন। কম্পিউটারে উন্নত অ্যান্টিভাইরাস রাখুন। এর পাশাপাশি সাইবার বিশেষজ্ঞ ও আইনজীবীদের বক্তব্য, সাইবার জগতে অপরাধ ঘটলেও অনেক সময়েই তদন্তে ফাঁক থেকে যায়। পুলিশ ও আইনজীবীদের মধ্যে সাইবার আইনে তত দক্ষতা না থাকায় এই অবস্থা। বিভাসবাবু নিজেই পুলিশ ও আইনজীবীদের সাইবার পাঠ দেন। তাঁর কথায়, “পুলিশ ও আইনজীবীরা সাইবার আইনের খুঁটিনাটি সম্পর্কে না জানলে দুষ্কৃতীরা ছাড় পেতে পারে।” এ দিনই সল্টলেকের এক সংস্থা সাইবার আইনের কোর্স চালু করেছে। বিভাসবাবুর দাবি, ওই কোর্স পুলিশ ও আইনজীবীদের পেশার পক্ষে সহায়ক হতে পারে।

kuntak chattopadhyay women security cyber crime
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy