Advertisement
E-Paper

নন্দীগ্রামের ক্ষত উস্কে বুদ্ধকে তোপ লক্ষ্মণের

সিপিএমের এ বারের রাজ্য সম্মেলনও শেষ পর্যন্ত নন্দীগ্রামের ছায়ামুক্ত থাকল না! কয়েক বছর ধরে দলের ভিতর-বাইরে লাগাতার বিতর্কের পরে এ বার ২৪তম রাজ্য সম্মেলনের খসড়া রাজনৈতিক প্রতিবেদনে সিঙ্গুর বা নন্দীগ্রাম নিয়ে আর আলাদা চর্চার পথে যাননি সিপিএম নেতৃত্ব।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৫ ০২:৫২

সিপিএমের এ বারের রাজ্য সম্মেলনও শেষ পর্যন্ত নন্দীগ্রামের ছায়ামুক্ত থাকল না!

কয়েক বছর ধরে দলের ভিতর-বাইরে লাগাতার বিতর্কের পরে এ বার ২৪তম রাজ্য সম্মেলনের খসড়া রাজনৈতিক প্রতিবেদনে সিঙ্গুর বা নন্দীগ্রাম নিয়ে আর আলাদা চর্চার পথে যাননি সিপিএম নেতৃত্ব। কিন্তু বিগত বামফ্রন্ট সরকারের ৩৪ বছরের কাজের মূল্যায়ন সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট এ বারের সম্মেলনে পেশ হতে চলেছে। দলের তরফে যে দলিলের লেখক স্বয়ং প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। মতামত নেওয়ার উদ্দেশ্যে ওই দলিল রাজ্য সিপিএমের ওয়েবসাইটে আপলোডও করে দেওয়া হয়েছে। আর তার সূত্র ধরেই ফের বিতর্ক! বুদ্ধবাবু-সহ সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্বকে তোপ দেগেছেন বহিষ্কৃত প্রাক্তন সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠ।

‘পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকার: একটি পর্যালোচনা’ শীর্ষক ওই দলিলে বলা হয়েছে, জমি অধিগ্রহণ করে জনস্বার্থের বহু কাজই বাম আমলে হয়েছে। সেই দিক থেকে সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামকে ‘ব্যতিক্রম’ বলেই ধরতে হবে। এই সূত্রেই ওই দলিলে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘নন্দীগ্রামে কেন্দ্রীয় সরকারের সহযোগিতায় পেট্রোকেমিক্যাল কমপ্লেক্স করার প্রাথমিক পরিকল্পনা হয়েছিল। কিন্তু স্থানীয় মানুষের একাংশের আপত্তির কারণে সেই প্রকল্প প্রথমেই বাতিল করা হয়। যদিও স্থানীয় নেতৃত্বের একাংশের অপ্রয়োজনীয় তৎপরতার ফলে মানুষের মনোভাব আমাদের বিরুদ্ধে গিয়েছে’। বুদ্ধবাবুদের ইঙ্গিত এ ক্ষেত্রে লক্ষ্মণ ও তাঁর অনুগামীদের দিকেই। তমলুকের প্রাক্তন সাংসদ লক্ষ্মণবাবু একেই সরাসরি ‘মিথ্যাচার’ আখ্যা দিয়ে সরব হয়েছেন। তাঁর দাবি, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নিজের প্রশাসনিক ব্যর্থতা আড়াল করতেই স্থানীয় নেতৃত্বের ঘাড়ে দোষ চাপিয়েছেন।

বস্তুত, দুর্নীতি ও দল-বিরোধী কাজের অভিযোগে লক্ষ্মণবাবুূ সিপিএম থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার আগেও এই প্রশ্নেই চাপানউতোর জারি ছিল। নন্দীগ্রাম-পর্ব মিটে যাওয়ার পর থেকেই লক্ষ্মণবাবুরা দাবি করে এসেছেন, যা হয়েছিল, সবই রাজ্য স্তরে প্রশাসন ও দলীয় নেতৃত্বের অনুমোদন সাপেক্ষে। আর দলের রাজ্য নেতৃত্বের দাবি ছিল, তাঁদের অগোচরেও বেশ কিছু ঘটনা ঘটে গিয়েছিল। বুদ্ধবাবুর তৈরি মূল্যায়ন রিপোর্ট সামনে আসতেই এখন আবার সেই বিতর্ক জেগে উঠেছে। নন্দীগ্রামে কেমিক্যাল হাব গড়ার পরিকল্পনা, পুলিশের গুলিচালনা এবং গোলমালের সময় সাংসদ লক্ষ্মণবাবুই ছিলেন হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের (এইচডিএ) চেয়ারম্যান। রীতিমতো এইচডিএ-র পুরনো নথিপত্র বার করে এনে লক্ষ্মণবাবু দাবি করেছেন, “আসলে হলদিয়া উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ জমি অধিগ্রহণের কোনও নোটিস দেয়নি। এইচডিএ-র জমি অধিগ্রহণের আইনগত কোনও ক্ষমতাও নেই। এইচডিএ-র সিইও-র স্বাক্ষরিত ও সিলমোহর যুক্ত কোনও নোটিস কেউ দেখাতে পারবেন না। আসলে বুদ্ধবাবু তাঁর সাদা জামায় কালো দাগ যাতে না লাগে, তার জন্য এ সব বলছেন। তিনি নায়ক থাকতে চান, তাই লক্ষ্মণ শেঠকে ভিলেন করতে হবে!”

কেমিক্যাল হাব, মাল্টি-প্রোডাক্ট এসইজেড এবং কুঁকড়াহাটিতে প্রস্তাবিত উপনগরী প্রকল্পের জন্য মোট ২৭ হাজার একর জমি নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল পূর্ব মেদিনীপুর জেলার নন্দীগ্রাম, সুতাহাটা, হলদিয়া ও মহিষাদল ব্লকে। কোন মৌজায় কতটা জমি নেওয়া হবে, সেই সংক্রান্ত একটি নোটিস প্রকাশ্যে চলে এসে নন্দীগ্রামে প্রথন উত্তেজনা ছড়িয়েছিল ২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসে। সেই বছরেরই ১৪ মার্চ পুলিশের গুলিচালনা এবং ১৪ জনের মৃত্যুর পরে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধবাবু বলেছিলেন, “ওই নোটিস ছিঁড়ে ফেলে দিতে বলেছি!” লক্ষ্মণবাবুর দাবি, ওই রকম নোটিসই এইচডিএ জারি করেনি। সরকারি স্তরে যা যা প্রক্রিয়া হয়েছিল, সবটাই রাজ্য শিল্প দফতর ও শিল্পোন্নয়ন নিগমের নির্দেশ ও পরামর্শ মেনে।

সেই সময়ে কোন কোন মৌজাকে প্রস্তাবিত প্রকল্পের জন্য চিহ্নিত করা হচ্ছে, তার তালিকা শিল্পোন্নয়ন নিগমকে পাঠিয়েছিল এইচডিএ। সম্ভবত তারই প্রতিলিপি বাইরে বেরিয়ে গিয়ে উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল। দলের বাইরে চলে যাওয়া লক্ষ্মণবাবুর অভিযোগ নিয়ে অবশ্য মুখ খুলতে নারাজ বুদ্ধবাবু। আনুষ্ঠানিক ভাবে সিপিএম নেতৃত্বও মন্তব্য করেননি। তবে দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, “নন্দীগ্রাম-১ বিডিও অফিসে ওই নোটিস টাঙানো থাকতে দেখেছিলেন স্থানীয় মানুষ। জমি নেওয়া নিয়ে প্রশাসনিক স্তরে প্রাথমিক আলোচনার কথাও বাইরে প্রচার হয়ে গিয়েছিল। এ সব কি মুখ্যমন্ত্রী বা দলের রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশে করা হয়েছিল? বাড়তি উৎসাহে কিছু অপ্রয়োজনীয় তৎপরতা ওখানে তো ছিলই!”

laxman seth buddhadeb bhattacharya nandigram
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy