Advertisement
E-Paper

পাড়ুইয়ে নির্যাতিতার কথা শুনে এল মহিলা কমিশন

মেয়েদের উপর এমন নির্যাতন এই প্রথম দেখলেন পাড়ুইয়ের নির্যাতিতা বধূর সঙ্গে কথা বলে বেরিয়ে এমনটাই জানালেন জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন ললিতা কুমারমঙ্গলম। শনিবার সকালে বীরভূমের পাড়ুইয়ে সাত্তোর গ্রামে নির্যাতিতার বাড়িতে যায় কমিশনের তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল। ঘণ্টা দেড়েক পরে বেরিয়ে উদ্বিগ্ন গলায় ললিতাদেবী বলেন, “শুনেছি, এ রকম অনেক হয়। এই প্রথম চাক্ষুস করলাম।”

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:০৩
নির্যাতিতার সঙ্গে কথা বলছেন জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রতিনিধিরা। পাড়ুইয়ের সাত্তোরে বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরীর তোলা ছবি।

নির্যাতিতার সঙ্গে কথা বলছেন জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রতিনিধিরা। পাড়ুইয়ের সাত্তোরে বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরীর তোলা ছবি।

মেয়েদের উপর এমন নির্যাতন এই প্রথম দেখলেন পাড়ুইয়ের নির্যাতিতা বধূর সঙ্গে কথা বলে বেরিয়ে এমনটাই জানালেন জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন ললিতা কুমারমঙ্গলম।

শনিবার সকালে বীরভূমের পাড়ুইয়ে সাত্তোর গ্রামে নির্যাতিতার বাড়িতে যায় কমিশনের তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল। ঘণ্টা দেড়েক পরে বেরিয়ে উদ্বিগ্ন গলায় ললিতাদেবী বলেন, “শুনেছি, এ রকম অনেক হয়। এই প্রথম চাক্ষুস করলাম।”

নির্যাতিতার বাপের বাড়ি বর্ধমানের বুদবুদ থানার কলমডাঙা গ্রামে। বোমাবাজিতে অভিযুক্ত এক বিজেপি কর্মীকে খুঁজতে এসে গত ১৭ জানুয়ারি সন্ধ্যায় সেখান থেকেই তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ। তাঁর ‘অপরাধ’, তিনি অভিযুক্তের কাকিমা। বধূর অভিযোগ, পাশের জঙ্গলে টেনে নিয়ে গিয়ে তাঁকে মারধর করা হয়।

আঙুল ভেঙে দেওয়া হয়, ব্লেড দিয়ে চিরে দেওয়া হয় হাতের তালু, সর্বাঙ্গে ঘষে দেওয়া হয় বিছুটি। তৃণমূলের কিছু নেতাকর্মীও পুলিশের সঙ্গে ছিল। তবে মহিলা কমিশনের দলটি সেখানে আর যায়নি।

সকাল ১১টা নাগাদ সাত্তোরে যায় মহিলা কমিশনের প্রতিনিধিদল। ললিতাদেবী ছাড়াও ছিলেন কমিশনের সদস্য শামিনা শফিক এবং কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী সায়নী রায়চৌধুরী। তাঁরা নির্যাতিতা এবং তাঁর পরিজনদের বয়ান নথিভুক্ত করেন। গোড়া থেকেই বিজেপি পরিবারটির পাশে রয়েছে। বিজেপির জাতীয়স্তরের নেত্রী ললিতাদেবী এ দিন পরিষ্কার বাংলায় বলেন, “আমিও রাজনীতিতে আছি। কিন্তু প্রশাসন বা পুলিশ যারাই করে থাকুক, কোনও মহিলার ওপর এ রকম অত্যাচার হওয়া উচিত নয়।”

কমিশনের সদস্যেরা চলে যাওয়ার পরে নির্যাতিতা বলেন, “সংবাদমাধ্যম এবং সিআইডি-কে যা বলেছিলাম, কমিশনকেও তা জানিয়েছি। সে দিন পুলিশের গাড়িতে যে ধুতি পড়া এক জনকে দেখেছিলাম, তা-ও জানিয়েছি। আশা করছি, আমার উপরে যারা অত্যাচার চালিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে লড়তে ওঁরা সব রকম সাহায্য করবেন।” প্রথমে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বধূটিকে ভর্তি করানো হলেও তারা ঠিক মতো চিকিৎসা করছে না অভিযোগ করে বাড়ির লোকজন তাঁকে ফিরিয়ে নিয়ে যান। মহিলা কমিশনের তরফে ইতিমধ্যেই জানানো হয়েছে, বধূটির চিকিৎসার বিষয়টি তারা দেখবে। তাঁর স্বামী জানান, অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আর্জিও জানিয়েছেন তাঁরা।

বধূ ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে বেরিয়ে ললিতাদেবী বলেন, “নির্যাতিতা যা বলেছেন, তা আমরা লিপিবদ্ধ করেছি। তবে কোনও সিদ্ধান্তে আসার আগে আমরা পুলিশের সঙ্গে কথা বলব। নির্যাতিতা যাদের নাম দিয়েছেন, তাদের সঙ্গেও কথা বলব।” দুপুরে বোলপুরের সার্কিট হাউসে গিয়ে প্রায় ঘণ্টাখানেক বীরভূমের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনন্দ রায়ের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। যদিও কী কথা হয়েছে, সে সম্পর্কে দুই পুলিশকর্তার কেউ মন্তব্য করতে চাননি। সন্ধ্যায় কলকাতায় কমিশনের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করে বিজেপির মহিলা মোর্চার সভানেত্রী জ্যোৎস্না বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ তিন জন রাজ্যে মহিলাদের নিরাপত্তার অভাব নিয়ে অভিযোগ জানান।

তবে মহিলা কমিশন বুদবুদে না আসায় হতাশ নির্যাতিতার বাপের বাড়ি। তৃণমূল কী ভাবে নির্যাতন চালাচ্ছে তা জানাবেন বলে সকাল থেকেই বাড়িতে অপেক্ষা করছিলেন নির্যাতিতার বাবা-মা। বধূটির বাবা বলেন, “আজ একবার পুলিশ ঘুরে গিয়েছে। কিন্তু মহিলা কমিশন এলে নিরাপদ বোধ করতাম।” তৃণমূলের লোকজনের ভয়ে নির্যাতিতার এক দাদা ঘরছাড়া। ফোনে তিনিও বলেন, “আতঙ্কে বাড়িতে থাকতে পারছি না। মহিলা কমিশনের দল আমাদের বাড়িতে এলে ভাল হতো।”

parui budbud national women's commission mahila commission
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy