Advertisement
E-Paper

পথ খুঁজতে বাইরে থাকা বামেদেরও মত নেবে সিপিএম

তাঁর নেতৃত্বে দল যে রণকৌশলের নীতি নিয়েছিল, ভোটে তারই খেসারত দিতে হয়েছে বলে মেনে নিলেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট। কেন এই ভুল এবং সেই ভুল শোধরাতে কী করণীয় তা নিয়ে দলের সর্বস্তরে আলোচনা হবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৪ ০৩:০১

তাঁর নেতৃত্বে দল যে রণকৌশলের নীতি নিয়েছিল, ভোটে তারই খেসারত দিতে হয়েছে বলে মেনে নিলেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট। কেন এই ভুল এবং সেই ভুল শোধরাতে কী করণীয় তা নিয়ে দলের সর্বস্তরে আলোচনা হবে। মতামত নেওয়া হবে দলের বাইরে থাকা বামপন্থীদের থেকেও। তারপরে ‘রিভিউ রিপোর্ট’ তৈরি করে তা পেশ করা হবে পার্টি কংগ্রেসে। সেখান থেকেই দলের আগামী দিনে নতুন রণকৌশলের নীতি ঠিক হবে। শনিবার সিপিএমের রাজ্য কমিটির সভায় কারাট এ কথা জানান। পার্টি কংগ্রেস সময়সূচি মেনেই করা হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

লোকসভা ভোটের পরে কারাট বলেছিলেন, এই ব্যর্থতার দায় কারও একার নয়, সামগ্রিক। গত দেড় মাসে বিভিন্ন রাজ্যে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়ে কার্যত সেই অবস্থান থেকে অনেকটাই সরে এসেছেন কারাট। ২০০৪ সালে প্রথম ইউপিএ সরকারকে সমর্থন করার পিছনে প্রয়াত জ্যোতি বসু এবং হরকিষেণ সিংহ সুরজিতের ভূমিকাই প্রধান ছিল। বামেরা তখন জাতীয় রাজনীতিতে কার্যত নিয়ন্ত্রকের আসন নিয়েছিল। কিন্তু ২০০৯-এর পরে ২০১৪ নির্বাচনে ব্যর্থতা ক্রমেই জাতীয় স্তরে সিপিএমকে অপ্রসঙ্গিক করে তুলেছে।

এ রাজ্যে ২০০৯ সালে সিপিএমের বিপর্যয়ের দায় কারাট চাপিয়েছিলেন তত্‌কালীন রাজ্য নেতৃত্ব ও বামফ্রন্ট সরকারের উপর। কিন্তু ২০১৪ সালে যে ভাবে গোটা ভারতেই সিপিএম ব্যর্থ হয়েছে, তার দায় কার্যত নিজের ঘাড়ে নিয়ে এ দিন প্রকাশ স্বীকার করেছেন, কেবল নতুন প্রজন্মকে আকৃষ্ট করতে সিপিএম ব্যর্থ হয়েছে তাই নয়, মধ্যবিত্তের মধ্যে দলের সমর্থন কমেছে। শ্রমিক শ্রেণি, গরিব খেতমজুর, কৃষকদের মধ্যেও দলের সমর্থন বাড়েনি। বরং কমেছে।

দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে নির্বাচনী বিপর্যয়ের প্রাথমিক ব্যাখ্যার পরে রাজ্যস্তরের নেতাদের তা বোঝানোর জন্যই মূলত এ দিনের রাজ্য কমিটির বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কারাট। কেন সময় মত বিশ্বাসযোগ্য অ-কংগ্রেস, অ-বিজেপি জোট গড়ে তোলা গেল না? কেন তামিলনাড়ুতে জয়ললিতার সঙ্গে জোট গঠনের প্রক্রিয়া শেষ মুহূর্তে ভেঙে দেওয়া হল? কেন অন্ধ্রপ্রদেশে এমন বিপর্যয় হল? কেন বিজেপির শক্তিকে বুঝতে দলের ভুল হল? এ দিন রাজ্য কমিটির সদস্যদের এমন বহু প্রশ্নের মুখোমুখী হতে হয়েছে কারাটকে। দলের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যদের সামনেই কারাট স্বীকার করেছেন, দলের রাজনৈতিক লাইনের ভুলে বহু মানুষ তাঁদের ছেড়ে দলে গিয়েছেন।

রাজ্য কমিটির পক্ষ দেওয়া বিবৃতিতে কারাটকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, “ভোটের ফলাফল স্বাধীন শক্তি ও রাজনৈতিক প্রভাব ক্ষয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে। পার্টির স্বাধীন শক্তি বৃদ্ধির এই ব্যর্থতার জন্যই আমরা যে রাজনৈতিক ও কৌশলগত লাইন নিয়ে চলেছি, তার পর্যালোচনা প্রয়োজন।” সভায় কারাট বলেন, ১৫-২০ বছর আগে যে আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা ছিল, আজ তা নেই। তখন যে ভাবে শ্রমিক, কৃষক আন্দোলন পরিচালিত হত এখনও সেই একই ভাবে আন্দোলন করলে হবে না। পরিস্থিতি অনুযায়ী লড়াই চালাতে হবে। বস্তুত, নরসিংহ রাও-র পরবর্তী কালে ভারতে যে বিপুল মধ্যবিত্ত শ্রেণির সৃষ্টির হয়েছে, সিপিএম যে তাদের উপযোগী করে নিজেকে গড়ে তুলতে পারেনি এ দিন কার্যত কারাট তা স্বীকার করেন। যে কারণে রাজনৈতিক ও কৌশলগত লাইন নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি দলীয় নেতৃত্বের পাশপাশি বামপন্থী বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে ‘টিম’ গঠনের কথা বলেছেন। একই সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আন্দোলনের সময়ে দলের বাইরে থাকা বামপন্থী মানুষদেরও সামিল করার নির্দেশ দিয়েছেন।

যে ভাবে বিমানবাবু-সব দলের শীর্ষ নেতারা দু’দিন রাত জেগে কলকাতার রাজপথে অবস্থান করলেন রাজ্য কমিটির সদস্যরা তার প্রশংসা করলেও, কেন এই অবস্থানে সে ভাবে ছাত্র-যুবদের উপস্থিতি ছিল না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

advice cpm review report
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy