Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

বুঝলাম দিদির রাগ কেন, সমুদ্রগর্জনে কটাক্ষ মোদীর

ইয়ে কেয়া নজারা হ্যায়। কেয়া প্যার হ্যায়। গজব কর দিয়া আপনে। কামাল কর দিয়া আপনে... নরেন্দ্র মোদী বললেন। এবং সমুদ্রগর্জনের উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ল জনতা। দুপুর ১টার রোদ অগ্রাহ্য করে সকাল থেকেই আসানসোল পোলো গ্রাউন্ড ভরিয়ে ফেলেছিল লক্ষ মাথা।

আশীর্বাদপ্রার্থী। নরেন্দ্র মোদীকে প্রণাম বাঁকুড়ার বিজেপি প্রার্থী সুভাষ সরকারের। রবিবার শুভ্র মিত্রের তোলা ছবি।

আশীর্বাদপ্রার্থী। নরেন্দ্র মোদীকে প্রণাম বাঁকুড়ার বিজেপি প্রার্থী সুভাষ সরকারের। রবিবার শুভ্র মিত্রের তোলা ছবি।

সুশান্ত বণিক ও সুব্রত সীট
আসানসোল ও বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৪ ০৩:১৫
Share: Save:

ইয়ে কেয়া নজারা হ্যায়। কেয়া প্যার হ্যায়। গজব কর দিয়া আপনে। কামাল কর দিয়া আপনে...

নরেন্দ্র মোদী বললেন।

এবং সমুদ্রগর্জনের উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ল জনতা।

দুপুর ১টার রোদ অগ্রাহ্য করে সকাল থেকেই আসানসোল পোলো গ্রাউন্ড ভরিয়ে ফেলেছিল লক্ষ মাথা। আশপাশের বাড়ি, শপিং মলের ছাদ ভিড়ে ঠাসা। ময়দানের দু’ধারে অন্তত এক কিলোমিটার ধরে মাথা আর মাথা। ছেলে-বুড়ো বাছবিচার নেই। তবে কমবয়সীদের সংখ্যা যাকে বলে চোখে পড়ার মতো। ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র থেকে এমবিএ ছাত্রী, বাদ নেই কেউ।

সেই আসানসোল, সেই পোলো গ্রাউন্ড, যেখানে মাত্র চার দিন আগে তারকারা মঞ্চ থেকে নেমে যেতেই অর্ধেক ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসভা। এ দিন ছবিটা ঠিক উল্টো। লক্ষ কণ্ঠে ‘মোদী মোদী’ চিৎকারটা শুরু হয়েছিল সাদা-গেরুয়া চপারটা উড়ে আসা মাত্র। মঞ্চে উঠে দু’আঙুলে ভিকট্রি সাইন দেখিয়ে এক ঢোক জল খেলেন বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী। তার পর মাইক হাতে তুলে নিয়েই বললেন, “ভাবছিলাম, দিদি কেন আমার উপরে এত রেগে থাকেন? আজ এই ভালবাসা দেখে রাগের কারণটা বুঝলাম।”

আবার গর্জন করে উঠল সমুদ্র।

মোদী বললেন, “যে রাজনৈতিক পণ্ডিতেরা ঠান্ডা ঘরে বসে অঙ্ক কষছেন, ভোট কাটাকাটির হিসেব করছেন, আবহাওয়ার পূর্বাভাসের মতো রাজনৈতিক পূর্বাভাস দিচ্ছেন, তাঁরা আসানসোলে এসে দেখে যান। পূর্বাভাস বুঝে যাবেন। দিদি, এক বার একটু হেলিকপ্টারে ঘুরে যান। সব বাঘ এখানে জড়ো হয়েছেন। এরা রয়্যাল টাইগার, রিয়াল টাইগার।” জনতার দিকে আঙুল তুলে বলেন, “আপনারাই আসল বাঘ। আপনাদের প্রণাম জানাই।” বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে ফের আছড়ে পড়ল সমুদ্র।

মঞ্চে বসে তখন চওড়া হাসছেন বিজেপি-র তারকা প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়। মোদী আসার আগে পর্যন্ত তিনিই গান গেয়ে সভা মাতিয়ে রেখেছিলেন। দুপুর পৌনে ১২টায় সভা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও মোদী আসেন প্রায় এক ঘণ্টা দেরিতে। তাতে লোক কমা দূর, বরং ভিড় আরও বেড়েছে। মাঠের প্রায় সব দিকেই বারবার বাঁশের ব্যারিকেড ভেঙেছে। বিজেপি-র বর্ধমান জেলা সভাপতি নির্মল কর্মকার বলেই ফেলেছেন, “আমাদের সব হিসেব ছাপিয়ে গিয়েছে এই ভিড়।”

সভা যখন তুঙ্গে, হঠাৎই মঞ্চের ডান দিকে হুড়মুড় করে ব্যারিকেড ভেঙে পড়ে। বলতে-বলতে মোদী থেমে যান। আকুল সমর্থকদের দিকে তাকিয়ে হেসে বলেন, “কেউ আগে আসবেন না। এই মাঠটা ছোট। কিন্তু মাঠ যতই ছোট হোক, জায়গা যতই কম হোক, আমার হৃদয়ে আপনাদের জন্য অনেক জায়গা আছে।”

ফের গর্জন। এই গর্জন এ দিন বারবার শোনা গিয়েছে আসানসোল ও বাঁকুড়ার সভায়। ছোট্ট ছোট্ট প্রশ্ন করেছেন মোদী। সমস্বরে জবাব দিয়েছে জনতা। দিল্লিতে নড়বড়ে সরকার চাই? মোদীর প্রশ্ন শুনে জনতা বলেছে না। মজবুত সরকার চাই? এ বার জনসমুদ্র বলল, হ্যাঁ।

আসানসোলের মতো ভিড় না হলেও খুব পিছিয়ে ছিল না বাঁকুড়া শহরের তামলিবাঁধ স্টেডিয়াম। চতুর্থ দফায় রাজ্যে প্রচারে এসে মোদী যে বাঁকুড়া যাবেন, তা ঠিক হয় মোটে শুক্রবার। তা সত্ত্বেও মাঠে তিলধারণের জায়গা ছিল না। জেলা পুলিশের হিসেবেই, অন্তত ৫০ হাজার লোক হয়েছিল। সকাল সাড়ে ৮টার বদলে দু’ঘণ্টা পরে এসে পৌঁছন মোদী। ততক্ষণ চড়া রোদ মাথায় নিয়ে কাতারে-কাতারে মানুষ, বিশেষ করে তরুণ ব্রিগেড অক্লান্ত অপেক্ষা করে গিয়েছেন। কারও গায়ে মোদী টি-শার্ট, মুখোশ, কারও আদুড় গায়ে আঁকা মোদীর মুখ। ঢাক, ঢোল, তাসা, ব্যান্ড বাজিয়ে সকাল থেকেই মাঠে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন বেশ কয়েক জন।

বাঁকুড়া থেকে আসানসোলে উড়ে গিয়ে মোদী সেই কমবয়সীদের প্রতিই বার্তা দিতে চেয়েছেন। তিনি বলেন, “রাজনীতি ভুলে যান। ভুলে যান মোদীকে। নিজের কথা ভাবুন। জীবন কেমন হবে, তা ঠিক করে দেয় ১৮ থেকে ২৮ বছর বয়স। দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা জীবনের দিক নির্দেশ করে কে ইঞ্জিনিয়ার হবে, কে ডাক্তার হবে, কে উকিল হবে। সত্তর বা আশি বছরের বৃদ্ধের জীবনে পাঁচ বছর নষ্ট হয়ে গেলে কিছু যায়-আসে না। কিন্তু ১৮ থেকে ২৮ বছর বয়সীদের পাঁচটি দিন খারাপ গেলেও অনেক ক্ষতি। আপনারা নিশ্চয়ই চাইবেন না, পাঁচ বছরের জন্য নড়বড়ে সরকার হোক। তাতে আপনাদের ক্ষতি হয়ে যাবে।”

কথা শেষ হল।

বিজেপি-র প্রবীণ নেতা জড়িয়ে ধরলেন নবীন প্রার্থীর হাত। মুখে প্রায় বিজয়ীর হাসি।

হেলিকপ্টার উড়িয়ে দিয়ে বুথমুখো হল সমুদ্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE