Advertisement
১১ মে ২০২৪

বিদ্যুতে ফের কেন্দ্রীয় ঋণ, ক্ষতি কমলে অর্ধেক মাফ

বিদ্যুৎ চুরি-সহ অন্যান্য খাতে আথির্র্ক ক্ষতির বহরে রাশ টানতে হবে। তা হলে সংস্থার রাজস্ব আয় তো বাড়বেই, উপরি লাভ হিসেবে কেন্দ্রীয় ঋণের অর্ধেকটাই হয়ে যাবে অনুদান। অর্থাৎ, তা শোধ করার দায় থাকবে না। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাকে নতুন করে শত কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার সঙ্গে এ রকম একটা শর্তও দিচ্ছে কেন্দ্রীয় গ্রামীণ বিদ্যুদয়ন নিগম।

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:২৭
Share: Save:

বিদ্যুৎ চুরি-সহ অন্যান্য খাতে আথির্র্ক ক্ষতির বহরে রাশ টানতে হবে। তা হলে সংস্থার রাজস্ব আয় তো বাড়বেই, উপরি লাভ হিসেবে কেন্দ্রীয় ঋণের অর্ধেকটাই হয়ে যাবে অনুদান। অর্থাৎ, তা শোধ করার দায় থাকবে না।

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাকে নতুন করে শত কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার সঙ্গে এ রকম একটা শর্তও দিচ্ছে কেন্দ্রীয় গ্রামীণ বিদ্যুদয়ন নিগম। এই দফায় ওই অর্থে বণ্টন এলাকার ১১টি ছোট শহর বা গঞ্জে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিকাঠামোর আধুনিকীকরণ হওয়ার কথা। কেন্দ্রীয় নিগমের শর্ত, প্রকল্পটি এমন ভাবে বাস্তবায়িত করতে হবে, যাতে সংশ্লিষ্ট এলাকায় বণ্টনের আর্থিক ক্ষতি অন্তত ১৫% হ্রাস পায়। সে ক্ষেত্রে ঋণের ৫০% অনুদান হিসেবে বিবেচিত হবে। নচেৎ পুরো টাকাটাই শুধতে হবে, ১১.৭৫% সুদ সমেত।

বিদ্যুৎ সরবরাহের পরিকাঠামো উন্নয়নের তাগিদে কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রকের অধীনস্থ ‘পাওয়ার ফিনান্স কর্পোরেশন’ প্রতিটি রাজ্যকে এই ধরনের সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে থাকে, গ্রামীণ বিদ্যুদয়ন নিগম মারফত। তিরিশ হাজারের বেশি মানুষের বাস, মূলত এমন সব শহরই থাকে প্রকল্পের আওতায়। পশ্চিমবঙ্গের মোট প্রায় ৬৮টি শহরকে বেছে নেওয়া হয়েছে। আগে বণ্টন সংস্থা এই শর্তে ঋণও নিয়েছে নিগমের কাছ থেকে। তা দিয়ে কিছু শহরে পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ হয়েছে। যদিও সংস্থা সূত্রের খবর, তখন চুরি বা অন্য ধরনের ক্ষতি বিশেষ কমানো যায়নি। কিছু কিছু জেলা শহরে খানিক সাফল্য মিললেও অধিকাংশ জায়গায় বিদ্যুৎ চুরি ও পরিকাঠামোগত ঘাটতির দরুণ আর্থিক ক্ষতির মাত্রা বেড়েই চলেছে। এক বণ্টন-কর্তা জানান, কেন্দ্রীয় ঋণের টাকায় পরিকাঠামো উন্নয়নের সুবাদে ঘাটাল, কল্যাণী, সাঁইথিয়া ও বনগাঁর কিছু অংশে এটিসি লস কমানো গেলেও জঙ্গিপুর, ধুলিয়ান, কাঁথি, রামপুরহাটের মতো অঞ্চলে ক্ষতির পরিমাণ যথেষ্ট বেশি।

ফলে ঋণের অর্ধেক অনুদান হিসেবে পাওয়ার সুবিধেও এ পর্যন্ত নেওয়া যায়নি। বণ্টন-সূত্রের অবশ্য আশা, আগামী তিন বছরের মধ্যে লোকসানে অনেকটা লাগাম পরানো যাবে। বণ্টন সংস্থার এখন গড় বার্ষিক আর্থিক ক্ষতি (এগ্রিগেট টেকনিক্যাল অ্যান্ড কমার্সিয়াল লস, সংক্ষেপে এটিসি লস) ৩০ শতাংশের উপরে। যেটাকে ১৭ শতাংশে নামিয়ে আনার জন্য কেন্দ্র বহু দিন ধরে জোর দিচ্ছে।

বিভিন্ন রাজ্যে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাগুলি সাধারণত দু’ভাবে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে। একটি হল দুর্বল ও অপরিকল্পিত পরিকাঠামোর কারণে বিদ্যুৎ সংবহনজনিত লোকসান। এ ক্ষেত্রে সাব স্টেশন বা ট্রান্সফর্মার রক্ষণাবেক্ষণে ঘাটতি থাকে, হুকিং ও মিটারের কারচুপি বন্ধ করা যায় না। পরিকাঠামো উন্নয়ন খাতে বিশেষ বাজেট বরাদ্দও হয় না। পরিণামে ক্ষতির হার বাড়তে থাকে। লোকসানের অন্য দিকটা হল, মিটার রিডিংয়ে গাফিলতি ও বিল আদায়ের সমস্যা। এ সব মিলিয়েই এটিসি লস।

বণ্টন-সূত্রের খবর, নতুন ভাবে পাওয়া ১০০ কোটি টাকা দিয়ে প্রকল্প-এলাকার সাব স্টেশনগুলোর ক্ষমতা বাড়ানো হবে, বাড়তি ট্রান্সমিটার বসানো হবে। পাশাপাশি কত বিদ্যুৎ দিয়ে আয় কত হচ্ছে, তা নজরে রাখতে এনার্জি অডিটের বন্দোবস্ত হবে। কাজের অগ্রগতিতে বাড়তি নজর দেওয়ার ব্যাপারে বণ্টন সংস্থার পরিচালন পর্ষদের বৈঠকে ইতিমধ্যে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

electricity bill pinaki bandyopadhyay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE