Advertisement
E-Paper

বামনগাছিতে শান্তি মিছিল, ব্রাত্য নিহতের পরিবারই

পুলিশের উদ্যোগে শান্তি মিছিল হল। কিন্তু, তাতে ডাকা হল না বামনগাছির নিহত প্রতিবাদী ছাত্র সৌরভ চৌধুরীর পরিবারকেই! সৌরভ খুনের পরে এলাকার বাসিন্দারা গড়ে তুলেছিলেন প্রতিবাদী মঞ্চ। সেই মঞ্চের কাউকেও রবিবার বামনগাছির মিছিলে দেখা যায়নি। পুলিশের তরফে তাঁদের ডাকা হয়নি বলে দাবি সৌরভের দাদা সন্দীপ এবং প্রতিবাদী মঞ্চের সদস্যদের।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৪ ০৩:১৯
বামনগাছিতে উত্তর ২৪ পরগনা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শান্তি মিছিল। রবিবার। ছবি: সুদীপ ঘোষ।

বামনগাছিতে উত্তর ২৪ পরগনা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শান্তি মিছিল। রবিবার। ছবি: সুদীপ ঘোষ।

পুলিশের উদ্যোগে শান্তি মিছিল হল। কিন্তু, তাতে ডাকা হল না বামনগাছির নিহত প্রতিবাদী ছাত্র সৌরভ চৌধুরীর পরিবারকেই! সৌরভ খুনের পরে এলাকার বাসিন্দারা গড়ে তুলেছিলেন প্রতিবাদী মঞ্চ। সেই মঞ্চের কাউকেও রবিবার বামনগাছির মিছিলে দেখা যায়নি। পুলিশের তরফে তাঁদের ডাকা হয়নি বলে দাবি সৌরভের দাদা সন্দীপ এবং প্রতিবাদী মঞ্চের সদস্যদের।

গত ৫ জুলাই রাতে বামনগাছির বাসিন্দা, কলেজ ছাত্র সৌরভকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে খুন করার অভিযোগ ওঠে শ্যামল কর্মকার-সহ এলাকার কিছু দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে। সৌরভের দেহ ফেলে দেওয়া হয় রেললাইনে। বেশ কয়েকটি ট্রেন চলে যায় দেহের উপর দিয়ে। শ্যামলদের দৌরাত্ম্যের বিরুদ্ধে সরব হওয়ার মাসুল গুনতে হয়েছে সৌরভকে, তদন্তে উঠে এসেছে এই তথ্য। শ্যামল-সহ ইতিমধ্যেই ধরা পড়েছে ১২ জন। কিন্তু, স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, শাসকদলের যে সব নেতার ছত্রচ্ছায়ায় দুষ্কৃতীদের বাড়বাড়ন্ত, তাঁদের টিকিটিও ছুঁতে পারছে না পুলিশ। সমস্যার গভীরে গিয়ে ব্যবস্থা না নিলে এ ধরনের ঘটনা চলতেই থাকবে।

বাসিন্দাদের আশঙ্কা যে মিথ্যে নয়, তার প্রমাণ মিলেছে সৌরভ খুনের দিন দ’শেকের মধ্যেই। সৌরভেরই বন্ধু শ্রীকান্ত ভদ্রকে মারধর করে দুষ্কৃতীরা। তিনিও এলাকায় মদের আসর বসানোর প্রতিবাদ করাতেই ওই কাণ্ড বলে অভিযোগ। ওই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত আমজাদ আলি মণ্ডল-সহ ধরা পড়ে দু’জন। আমজাদ আবার বারাসত ১ পঞ্চায়েত সমিতির খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ তথা তৃণমূল নেতা হানিফ মণ্ডলের ভাগ্নে। এ দিন মিছিলে সৌরভের পরিবারের কেউ না থাকলেও হেঁটেছেন হানিফ। তাঁর বিরুদ্ধে এলাকায় একাধিক অসামাজিক কাজকর্মের অভিযোগ আছে। একটি খুনের মামলাতেও জড়িয়েছিল নাম। এলাকাবাসীর দাবি, হানিফের নাম করেই এলাকায় দাদাগিরি করে বেড়াত আমজাদ। হানিফের অবশ্য দাবি, আমজাদের সঙ্গে তাঁর বা তাঁর দলের কোনও সম্পর্ক নেই। শ্যামলকে মদত দেওয়ার ঘটনায় জড়িয়েছিল বামনগাছির আর এক তৃণমূল নেতা তুষার মজুমদার ওরফে বিশুর নাম। সৌরভ খুনের প্রতিবাদে তৃণমূলের মিছিলে এর আগে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। তবে বিতর্ক দানা বাঁধায় তৃণমূলের প্রতিবাদ সভায় ছিলেন না তিনি। এ দিনের শান্তি মিছিলেও দেখা যায়নি তুষারবাবুকে।

সৌরভের দাদা সন্দীপের দাবি, পুলিশের উদ্যোগে শান্তি মিছিলে যাঁরা হেঁটেছেন, তাঁদের অনেকেই বহিরাগত। উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করেন, “এটা পুলিশের জনসংযোগ কর্মসূচি। এ ধরনের মিছিল আগে বারাসতেও হয়েছে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোই আমাদের লক্ষ্য। তবে, মিছিলে হাঁটার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল বামনগাছির সব নাগরিককেই।” পুলিশের আরও দাবি, প্রতিবাদীর মঞ্চের তরফে এক জন হেঁটেছেন মিছিলে। যদিও সেই ব্যক্তি মঞ্চের কেউ নন বলেই জানিয়েছেন সন্দীপ। দত্তপুকুর থানার উদ্যোগে এ দিন মিছিল বেরোয় বামনগাছি চৌমাথা থেকে। শেষ হয় স্টেশনের কাছে। প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন হাতে হেঁটেছেন অন্তত শ’পাঁচেক মানুষ। ভাস্করবাবু এবং বারাসতের এসডিপিও সুবীর চট্টোপাধ্যায়ও মিছিলে পা মেলান।

শান্তি-শৃঙ্খলা ফেরানোর যথাযোগ্য দায়িত্ব নিলে কি পুলিশকে এ ধরনের মিছিল করতে হত, প্রশ্ন উঠছে এলাকাতেই। সন্দীপ বলেছেন, “যত দিন না আমার ভাইয়ের খুনিরা শাস্তি পাচ্ছে বা এলাকায় দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব পুরোপুরি বন্ধ হচ্ছে, আমাদের আন্দোলন চলবে।” এলাকার অনেকেই জানালেন, এখনও রেলপাড়ের আনাচ-কানাচে জুয়া-সাট্টা-মদের আড্ডা বসছে। দুষ্কৃতীরাও ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে পুলিশ শান্তি মিছিল না করে বরং আইন রক্ষার জন্য ঠিকঠাক পদক্ষেপ করুক। বাসিন্দাদের একাংশের মতে, পুলিশের এ দিনের উদ্যোগের পিছনে শাসক দলের ভূমিকা আছে।

এ বিষয়ে জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “পুলিশের ভূমিকায় সৌরভের পরিবার ও স্থানীয় মানুষ সন্তুষ্ট ছিলেন। এখন কী হল যে পুলিশের শান্তি মিছিলের পিছনেই শাসক দলের ভূমিকা টের পাচ্ছেন স্থানীয়রা?” মন্ত্রীর দাবি, প্রতিবাদী মঞ্চ তেমন দানা বাঁধেনি, তাই তাঁরা মিছিলে সামিল হতে পারেননি।

duttapukur sourav chowdhury bamungachi peace march
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy