কথা ফলে যাচ্ছে! আপাতত চার দেওয়ালের মধ্যে বসেই স্বস্তির শ্বাস নিচ্ছেন তিনি!
প্রথম তিনিই সামনে এনেছিলেন তৃণমূলে কুপন কাণ্ডের কথা। সাড়ে তিন বছর আগে বিধানসভা ভোটের মুখে। ভোটে সরকার বদলের পরে তিনিই প্রথম প্রশ্ন তুলছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আঁকা ছবি এত বিপুল দামে কারা কেনে? তিনি কি মাইকেলেঞ্জেলো না লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি? সারদা-কাণ্ড প্রকাশ্যে আসার পরে তিনিই প্রথম অভিযোগ করেন, ডেলো পাহাড়ের বাংলোয় মধ্যরাতে মমতা বন্দ্যেপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন সুদীপ্ত সেন। দেড় বছরে দফায় দফায় তিনিই দাবি করেছেন, শ্রীমান মুকুল রায় এবং মদন মিত্রকে জেলে যেতে হবে!
যখন যা বলেছিলেন, তাতেই হইচই হয়েছিল। তাঁর অসুস্থতা নিয়ে কটাক্ষ করেছিলেন তৃণমূল নেতারা। কখনও তাঁর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা হয়েছিল, আবার রাতে বাড়িতে পুলিশ পাঠিয়েছিল সরকার! আবাসন কাণ্ডের অভিযোগে সিআইডি তদন্তের মুখোমুখি হওয়া তো আছেই। তাঁর অভিযোগের জেরে তৃণমূল-বিরোধী ক্ষোভের আঁচ বামেদের ভোটবাক্সেও আসেনি। এত কিছুর পরে সারদা-কাণ্ডের জল যখন তৃণমূলের ঘর ভাসিয়ে দিচ্ছে, আশ্বস্ত বোধ করছেন গৌতম দেব! পরিবহণমন্ত্রীর গ্রেফতারির পরে গৌতমবাবু বলছেন, “শুধু মদনে কিছু হবে না। আবার বলছি, মুকুল রায়কে ধরা পড়তেই হবে! এবং আমার ধারণা, মুকুল জেলে গেলে এই সরকারটাই ভেঙে দেবেন মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী! দ্যট উইল বি দ্য লাস্ট স্ট্র!”
তিরুঅনন্তপুরমের হাসপাতাল থেকে স্নায়ুর অস্ত্রোপচার সেরে ফিরেছেন। চিকিৎসকদের পরামর্শেই বিশ্রামে। সারদা তদন্তে তৃণমূলের সৃঞ্জয়, মদনেরা গ্রেফতারের পরে বামপন্থীরা যখন ফের রাস্তায়, গৌতমবাবুর কণ্ঠ তাই শোনা যাচ্ছে না। বসে থাকতে ভাল লাগছে না বলে সুযোগ পেলে অল্প সময়ের জন্য আলিমুদ্দিন ঘুরে যাচ্ছেন। শহিদ মিনার ময়দানে মঙ্গলবার তাঁরই উত্তর ২৪ পরগনার সমাবেশ ও নবান্ন অভিযান। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও সূর্যকান্ত মিশ্রের পাশাপাশি তিনিও মুখ্য বক্তা। যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও ডাক্তারদের ছাড়পত্রের অপেক্ষা। জেলার নেতা নেপালদেব ভট্টাচার্যেরা তাই রবিবার গৌতমবাবুর জন্মদিনের সকালে বাড়ি গিয়ে তাঁর বক্তব্য ভিডিও রেকর্ডের বন্দোবস্ত সেরে এসেছেন। তাঁরই ফাকে সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক বলছিলেন, “এখন একটু ভাল আছি। একটু খুশিও হচ্ছি! মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য কিছু বলিনি, এখন অনেকটা বোঝা যাচ্ছে নিশ্চয়ই! তৃণমূলের কর্মীরাও বুঝছেন।” তাঁর কথায়, “এই রকম অসভ্য সরকার, এই রকম মিথ্যাবাদী মুখ্যমন্ত্রীর খপ্পর থেকে রাজ্যটাকে বাঁচানো দরকার! কোথায় মুখ্যমন্ত্রীর ছবি বিক্রি, কোথায় ডেলো পাহাড়ের বৈঠক সব তথ্য সংগ্রহ করেছিলাম। মানুষের সঙ্গে প্রতারণা হচ্ছে, এটা বোঝানোর জন্য তথ্যগুলো তুলে ধরেছিলাম। ঠিক জায়গা থেকে ঠিক খবর পেয়েছিলাম, ভেবে ভাল লাগছে!” আরও সংযোজন, “কালীঘাটের ওই পাড়ায় প্রায় সব সম্পত্তি যে একটা পরিবারের লোকজন নিয়ে নিয়েছে, তার কাগজও আমার হাতে এসেছিল। এখন দেখা যাক, সেই দিকে তদন্ত এগোয় কি না!” কুপন কাণ্ডের অভিযোগের পরেই গৌতমবাবুর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন মুকুল। একের পর এক শুনানি পেরিয়েছে, মুকুল হাজিরা দেননি। মদন গ্রেফতারের পরে তাঁর গতিবিধি আরও ‘হাইলি সাসপিশাস’! কালীঘাটে এ দিন মমতার বাড়িতে ঘরোয়া বৈঠকে গিয়েছিলেন। কিন্তু ফোনে মুকুলের সাড়া মেলেনি। আর গৌতমবাবু স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বলছেন, “খেয়াল রাখলে দেখা যাবে, ওদের মতিগতি ভাল নয়। মদন গন! এখন বুঝতে চাইছে মুকুলের কী হবে? ইঙ্গিত ভাল নয় বুঝলে ম্যাডাম আর সরকার নিয়ে অপেক্ষা করবেন না! বাংলায় আবার ভোট তখন!”
গৌতমবাবুর পুরনো কথা ফলছে বলেই হয়তো সাহস ফিরে পাচ্ছে জেলা সিপিএমও। বিভিন্ন জায়গায় পথসভা করে তারা কালকের সমাবেশের প্রচার চালিয়েছে, এত দিনে সাড়াও মিলছে। শহিদ পরিবারকে সাহায্যের জন্য ১ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা জেলা কমিটির হাতে এসেছে। নেপালদেববাবু জানান, এনআরএসে নিহত প্রতিবন্ধী কোরপান শা-র পরিবারকেও তাঁরা সাহায্য দেবেন।
গৌতমবাবু বলছেন, “আমরা চলে যাওয়ার পরে রাজ্যের অবস্থা আগের চেয়ে ভাল হয়েছে, এটা কেউ বুক ঠুকে বলতে পারবেন?”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy