Advertisement
০১ মে ২০২৪
কোরপান-হত্যা

বারো অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ পুলিশের

কোরপান-হত্যায় ১২ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দিল পুলিশ। মঙ্গলবার, শিয়ালদহ আদালতে। অভিযুক্তদের ১০ জন হবু চিকিৎসক। তাঁদের মধ্যে তিন জনকে পলাতক বলে চার্জশিটে দাবি করেছে পুলিশ। বাকি নয় অভিযুক্ত বর্তমানে জেল হেফাজতে রয়েছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:২৬
Share: Save:

কোরপান-হত্যায় ১২ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দিল পুলিশ। মঙ্গলবার, শিয়ালদহ আদালতে। অভিযুক্তদের ১০ জন হবু চিকিৎসক। তাঁদের মধ্যে তিন জনকে পলাতক বলে চার্জশিটে দাবি করেছে পুলিশ। বাকি নয় অভিযুক্ত বর্তমানে জেল হেফাজতে রয়েছেন।

পুলিশ সূত্রে খবর, নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ছাত্রাবাসে মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক কোরপান শাহ খুনের ঘটনার ৮৬ দিনের মাথায় জমা দেওয়া ওই চার্জশিটে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে খুন, সাক্ষ্য প্রমাণ লোপাট-সহ একাধিক অভিযোগ আনা হয়েছে। যে তিন জনকে পলাতক দেখানো হয়েছে, তাঁরা ওই মেডিক্যাল কলেজের তৃতীয়, চতুর্থ এবং ফাইনাল বর্ষের ছাত্র। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, ১১৩ পাতার ওই চার্জশিটে ৪১ জনের সাক্ষ্য রয়েছে। সাক্ষীদের মধ্যে বেশ কয়েক জন ওই হাসপাতালের হবু চিকিৎসক বলে লালবাজার সূত্রে খবর। এক তদন্তকারী বলেন, “চোর সন্দেহেই ওই হবু চিকিৎসকেরা কোরপানকে মারধর করে খুন করেন বলে জেনেছি।”

লালবাজার সূত্রে খবর, ১৬ নভেম্বর ভোরে এনআরএসের ছাত্রাবাসের চতুর্থতলে কোরপানকে থামের সঙ্গে বেঁধে মারধর করেন হবু চিকিৎসকেরা। মারধরের পরে সেখানেই কোরপানকে ফেলে রেখে এলাকা ছাড়েন তাঁরা। এন্টালি থানার পুলিশ কোরপানকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

তদন্তে নেমে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এক রকম অসহযোগিতার সামনে পড়তে হয়েছিল তদন্তকারীদের। অভিযোগ, প্রথমে কর্তৃপক্ষ ওই ছাত্রাবাসের আবাসিকদের বিস্তারিত বিবরণ দিতে চাননি। ঘটনার ১৫ দিন পরে তা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। রাজনৈতিক চাপে অভিযুক্তদের ধরা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ তোলে মৃতের পরিবার।

গোয়েন্দারা জানান, প্রত্যক্ষদর্শীদের জিজ্ঞাসাবাদের পরে ঘটনার এক মাসের মাথায় ডাক্তারির প্রথম বর্ষের ছাত্র জসিমুদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছাত্রাবাসের দুই ক্যান্টিন-কর্মীকে পাকড়াও করা হয়েছিল। এর পরেই কোরপান খুনের তদন্তের জন্য গঠন করা হয় লালবাজারের গোয়েন্দাদের নিয়ে বিশেষ দল। ওই দল প্রথমে জাভেদ আখতার, অনুরাগ সরকার, ইউসুফ জামাল ও অরিজিৎ মণ্ডলকে গ্রেফতার করে। পরে ধরা হয় অরবিন্দ মাঝি এবং অভিষেক কুমারকে। ধৃতেরা সকলেই ওই ছাত্রাবাসের আবাসিক ছিলেন।

লালবাজার সূত্রে খবর, প্রথমে জসিমুদ্দিন গোপন জবানবন্দি দিলেও পরে তা নিয়ে বেঁকে বসেন। বিচারকের কাছে গোপন জবানবন্দি ফিরিয়ে নিতে চেয়ে আবেদনও করেন ওই ধৃত ছাত্র। অপর দিকে ওই হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক অভিষেক কুমারকে নির্দোষ দাবি করে এবং তাঁর মুক্তির দাবিতে কর্মবিরতি করেন জুনিয়র ডাক্তারেরা।

চার্জশিটে তদন্তকারীরা জানান, ১৬ নভেম্বর ভোরে চারতলার ৯২ রুমের জসিমুদ্দিনের ঘুম ভেঙে যায়। দরজার সামনে অপরিচিত এক যুবককে দেখে জসিম ‘চোর, চোর’ বলে চেঁচিয়ে ওঠেন। তা শুনেই বাকিরা আসেন। ছাত্রাবাসের চারতলার শৌচাগারের ভিতরে লুকিয়ে থাকতে দেখা যায় কোরপানকে। শুরু হয় লাথি, ঘুষি, চড়। বাঁশ, কাঠের টুকরো, বেঞ্চের ভাঙা পায়া দিয়েও মারা হয়। হাত লাগান ক্যান্টিনের দুই কর্মীও।

পুলিশের দাবি, পরে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় ক্যারম ঘরের সামনে। সেখানে থামের সঙ্গে বেঁধে এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলে মারধর। এক সময়ে নেতিয়ে পড়েন কোরপান। তদন্তকারীদের একাংশের বক্তব্য, পিটুনি খেয়ে কোরপান যে মরতে বসেছেন, তা দেখেই আঁচ করেছিলেন হবু চিকিৎসকেরা। তড়িঘড়ি নিজেদের ঘরে ফিরে যান সকলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

accused charge sheet korpan murder korpan shah
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE