ত্বহা সিদ্দিকির (সামনে ডান দিকে) সঙ্গে দেখা করতে ফুরফুরা শরিফে এ বার মমতার দূত ববি হাকিম। শুক্রবার দীপঙ্কর দে-র তোলা ছবি।
মুকুল রায়ের সঙ্গে টক্করে ফুরফুরা শরিফে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তাস ববি হাকিম।
এ মাসের গোড়ায় ফুরফুরায় পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকির সঙ্গে দেখা করতে যান মুকুল। সঙ্গে বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত। সারদা-তদন্তে তত দিনে মুকুলকে তলব করেছে সিবিআই। মমতার সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বাড়তেও শুরু করেছে। এই অবস্থায় দিল্লি থেকে ফিরে মাঝরাতেই ফুরফুরায় ত্বহার সঙ্গে মুকুলের দেখা করার পিছনে বিভাজনের অঙ্ক ছিল বলেই মনে করেন তৃণমূলের একাংশ। সেই সাক্ষাতের পরে ত্বহাও অভিযোগ করেন, আশ্বাস সত্ত্বেও এই সরকার ফুরফুরায় সে ভাবে উন্নয়ন করেনি।
এর পরে এ দিন ববির ফুরফুরা ভ্রমণ এবং ত্বহার সঙ্গে আলোচনাকে তাই তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এই ভ্রমণেও শরিক সব্যসাচী। আর ছিলেন হুগলির জেলাশাসক সঞ্জয় বনসল। শুক্রবারের বারবেলায় ববি-ত্বহার শুধু সাক্ষাৎই হল না, উন্নয়নে প্রতিশ্রুতি উজাড় করে দিয়ে এলেন মন্ত্রী ববি হাকিম।
কেন ফুরফুরা গেলেন ববি? তৃণমূলের একটি অংশই বলছে, মুকুলের সঙ্গে সাক্ষাতের পরে ত্বহার সুর যে ভাবে বদলে যায়, তাতেই প্রমাদ গুনেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সামনেই আবার ফুরফুরা শরিফে ইসালে সওয়াব উৎসব (উরুস)। তার আগে প্রতিশ্রুতি সমেত মন্ত্রীকে পাঠিয়ে ফের ত্বহার মন গলাতে চাইছেন সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব। ববি জানালেন, “ফুরফুরায় পর্যাপ্ত আলো, জলের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা করতে বলেছি। গঙ্গাসাগরের মতো এখানেও অস্থায়ী হাসপাতাল হবে। সামনেই উৎসব। লাখ লাখ মানুষ আসেন এখানে। তাই অস্থায়ী শৌচাগার প্রয়োজন। তা-ও হবে। জেলাপ্রশাসন ওই কাজ দ্রুত করবে?”
আর ফুরফুরার জন্য উন্নয়ন পর্ষদ? এ বার সতর্ক ববি বলেন, “তাতে কিছুটা সময় লাগবে। কারণ, সমীক্ষা করে দেখতে হবে, মানুষ কী চায়?”
কিন্তু ত্বহাকে কাছে টানতে মমতা এত তৎপর কেন? এর পিছনে ভোটের অঙ্কের প্রসঙ্গই তুলছেন রাজনীতির লোকজনেরা। তাঁদের বক্তব্য, রাজ্যে সংখ্যালঘু ভোট অনেক ক্ষেত্রেই নির্ধারকের ভূমিকা নেয়। মমতার পাশে সংখ্যালঘুরা থাকার ফলে সারদা-বিতর্ক সত্ত্বেও সাম্প্রতিক দু’টি উপনির্বাচনে তৃণমূল নিজের ভোট মোটের উপরে ধরে রাখতে পেরেছে। তাই এখন মমতা যে ত্বহাকে বুঝিয়ে তৃণমূলের পাশে আনার চেষ্টা করবেন, তাতে আর সন্দেহ কী!
এত দিন তৃণমূলের হয়ে ত্বহার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন মুকুল। এখন তাঁর সঙ্গে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের দূরত্ব পাহাড়প্রমাণ। তিনি দল ছাড়তে পারেন, এমন জল্পনা প্রশাসনের সর্বত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে। সেই মুকুল ত্বহার সঙ্গে দেখা করার পরই তৎপর হয়ে ওঠেন মমতা। এর মাঝে তিনি বিধানসভায় নিজের ঘরে ডেকে নেন সব্যসাচীকে। এর পর ফুরফুরার মন পেতে তৃণমূলের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ঘুঁটি সাজাতে শুরু করে। সামনেই সেখানে উৎসব। তাই দেরি না করে শুক্রবার সন্ধ্যায় মুকুল অনুগামী বলে পরিচিত সব্যসাচীকে নিয়ে সেখানে পৌঁছে যান ববি।
মন্ত্রীর এই সফরের পরে ত্বহা জানান, তাঁর সঙ্গে ফোনে মমতারও কথা হয়েছে। ত্বহা বলেন,“মুখ্যমন্ত্রী আমাকে ফোন করে বিধানসভায় ডাকেন। তাঁর সঙ্গে ফুরফুরার উন্নয়ন নিয়ে কথা হয়।” ফুরফুরায় উৎসবের দিনগুলিকে সাজিয়ে তোলা ছাড়াও শাসকদল সেখানকার সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে মাঠে নেমেছে। আর তার ফলে বরফ যে কিছুটা গলেছে, যার ইঙ্গিত মিলেছে ত্বহার কথায়। তিনি বলেন, “ফুরফুরার উন্নয়ন হলেই আমরা খুশি। বাম আমলে বছরে ১০ হাজার টাকাও খরচ করত না। এই সরকার তা-ও বছরে ২০ লক্ষ টাকা খরচ করেন।”
তবে চাপের দাওয়াই কিন্তু অব্যাহত রাখছেন পীরজাদা। সেটা স্পষ্ট করে দিয়ে তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী ফুরফুরার উন্নয়নকে গুরুত্ব দিচ্ছেন, খুব ভাল কথা। কিন্তু আমি আবার বলছি, উন্নয়ন আগে চোখে দেখব, তার পর বলব।”
অর্থাৎ, চায়ের কাপ আর ঠোঁটের ফাঁকটা রয়েই গেল!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy